প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা দোল মন্দির পুঠিয়া রাজশাহী
আরো পড়ুনঃ ধবংপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক সীতাকোট বৌদ্ধ বিহার দিনাজপুর
এক সময় বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলা ছিল রাজা- জমিদারে ভরপুর। আর তাঁদের শাসন আমলে এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রাজবাড়ি- জমিদার বাড়িসহ ধর্ম চর্চার জন্য গড়ে উঠেছিল মসজিদ-মন্দির। যা এখন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে কোন রকমে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো পুঠিয়ার দোল মন্দির সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সকল তথ্য। আমরা আশাকরি আপনারা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই মনোযোগের সঙ্গে পড়বেন এবং যেনে নিবেন এই মন্দির সম্পর্কে সকল তথ্য। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা দোল মন্দির পুঠিয়া রাজশাহী
- প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা দোল মন্দির পুঠিয়া রাজশাহী
- পুঠিয়া উপজেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা
- পুঠিয়ার দোল মন্দির কোথায় অবস্থিত
- পুঠিয়ার দোল মন্দিরের ইতিহাস
- পুঠিয়ার দোল মন্দিরের নির্মাণশৈলী
- কিভাবে যাবেন পুঠিয়ার দোল মন্দির
- কোথায় থাকবেন পুঠিয়ার দোল মন্দির
- পুঠিয়ার দোল মন্দিরের শেষকথা
প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা দোল মন্দির পুঠিয়া রাজশাহী
বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক পধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রয়েছে মোট ২৫০০টি। তাঁর মধ্যে শুধু রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলাতেই রয়েছে ১৫টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। আর দোল মন্দির হলো বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। প্রাচীন এই মন্দিরটি এখনো সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থেকে জানান দিচ্ছে প্রাচীন ইতিহাসের কথা। নিম্নে দোল মন্দিরের সকল তথ্য আলোচনা করা হলো।
পুঠিয়া উপজেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা
রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় যে সকল স্থাপনা বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত সেগুলোর নামের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো-
- কৃষ্ণপুর গোবিন্দ মন্দির।
- কেষ্ট ক্ষ্যাপার মন্দির।
- কৃষ্ণপুর শিব মন্দির।
- গোপাল মন্দির।
- ছোট শিব মন্দির।
- ছোট আহ্নিক মন্দির।
- ছোট গোবিন্দ মন্দির।
- জগদ্ধাত্রী মন্দির।
- দোল মন্দির।
- পুঠিয়া রাজবাড়ী।
- পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির।
- রথ মন্দির।
- বড় শিব মন্দির।
- বড় আহ্নিক মন্দির।
- হাওয়া খানা।
পুঠিয়ার দোল মন্দির কোথায় অবস্থিত
প্রাচীন এই মন্দিরটি রাজশাহী বিভগীয় শহর হতে পূর্ব দিকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে দেশের অন্যতম বিখ্যাত পুঠিয়া রাজবাড়ির সামনের মাঠ পেরিয়েই অবস্থিত। এই মন্দিরের সরাসরি সমনে রয়েছে বিখ্যাত পুঠিয়া রাজবাড়ির এবং পিছনের দিকে রয়েছে বড় শিব মন্দিরসহ রথ মন্দির নামে আরো দুইটি মন্দির।
পুঠিয়ার দোল মন্দিরের ইতিহাস
তৎকালীন ভূপেন্দ্র নারায়ণ রায় ১৭৭৮ সালে নির্মাণ করেন এই মন্দিরটি। তবে স্থানীয়দের মধ্যে লোককথা প্রচলিত রয়েছে যে, জমিদার ভূপেন্দ্র নারায়ণ রায় সুন্দর এই বহুতল ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন পূজা পার্বণের উদ্দেশ্যে নয়। তিনি এই ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন তাঁর কিশোরী স্ত্রীর সঙ্গে খেলা ধুলা করার জন্য লুকোচুরির খেলাঘর হিসাবে।
পুঠিয়ার দোল মন্দিরের নির্মাণশৈলী
চারতলা বিশিষ্ট ঐতিহাসিক বর্গাকার এই প্রাচীন মন্দিরটি। প্রতিটি তলার মেঝের ক্ষেত্রফল উপরে উঠার সঙ্গে সঙ্গে কমে এসেছে আনুপাতিক হারে। এইভাবে পর্যায় ক্রমে চতুর্থ তলা পর্যন্ত আনুপাতিক হারে কমার পর, চতুর্থ তলার উপরে রয়েছে গম্বুজাকৃতির একটি সূচালো চূড়া। প্রত্যেক তালার চার পাশে রয়েছে ঘেরে রাখা প্রশস্ত টানা বারান্দা।
আরো পড়ুনঃ দেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ
প্রাচীন এই ভবনের প্রথম তলায় রয়েছে ৭টি কক্ষ এবং ২৮ দরজা, দ্বিতীয় রয়েছে ৫টি কক্ষ এবং ২০ দরজা, ৩য় তলায় রয়েছে ৩টি কক্ষ এবং ১২ দরজা এবং চতুর্থ তলায় রয়েছে ১টি কক্ষ এবং ৪টি দরজা। এই ভবনটিতে রয়েছে সর্বমোট ১৬টি কক্ষ এবং ৬৪টি দরজা। স্থানীয় অনেকেই এই প্রাচীন মন্দিরটিকে হাজার দূয়ারী বলে ডেকে থাকে।
এই দোল মন্দিরটির ৩য় তলা পর্যন্ত রয়েছে প্যারাপেট দেওয়াল দ্বারা নির্মিত এবং চতুর্থ তলা সুসজ্জিত করা রয়েছে মারলন অলঙ্কার দ্বারা। এই মন্দিরটিতে নেই কোন পূজার ঘর ও প্রতিমা রাখার স্থান। এমনকি এই মন্দিরে দেখা যায় না পুরোহিত- পুজারিদের কোন আনাগোনা। কারণ ধারণা করা হয়ে থাকে পূজার উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করা হয়নি তাই এটি কোন মন্দির নয়।
কিভাবে যাবেন পুঠিয়ার দোল মন্দির
ঢাকা কিংবা রাজশাহী থেকে যেই সকল বাস রাজশাহী- নাটোর মহাসড়কে চলাচল করে সেই সকল বাসে চড়ে পুঠিয়া উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। এখান থেকে ১০/১৫ মিনিটের পথ পায়ে হেটে যাওয়া যায় পুঠিয়ার দোল মন্দির। অথবা আপনি চাইলে অটো রিক্সায় ১৫/২০ টাকা ভাড়া দিয়ে খুব সহজেই যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন পুঠিয়ার দোল মন্দির
পুঠিয়ার দোল মন্দিরে থাকার ব্যবস্থা নেই। তাই আপনি যদি রাত্রী যাপন করতে চান, তাহলে আপনাকে নাটোর জেলা শহরে অথবা রাজশাহী বিভাগীয় শহরে যেতে হবে। পুঠজাপন,উপজেলা থেকে রাত ১১/১২টা পর্যন্ত বাস চলাচল করে। খাওয়ার জন্য আপনি পুঠিয়ায় থাকা মধ্যম মানের খাবারের হটেলে খেতে পারেন বা আপনি চাইলে রাজশাহী বা নাটোরে গিয়ে খাওয়ার কাজ সেরে নিতে পারবেন।
পুঠিয়ার দোল মন্দিরের শেষকথা
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে হাজার হাজার প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। যেগুলো এখন অযত্ন ও অবহেলায় প্রায় ধবংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। আমাদের সকলেরই উচিৎ এই সকল স্থাপনাগুলো যা কালের সাক্ষী হয়ে আমাদেরকে প্রাচীন ইতিহাসকে জানান দিচ্ছে, সেগুলোকে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে রক্ষার জন্য নজর দেওয়া।
আশাকরি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদে সঙ্গে "প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা দোল মন্দির পুঠিয়া রাজশাহী'' সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করতে পরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আসাবাদি। বিশেষকরে যারা "দোল মন্দির" সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি ইনেক উপকারে আসবে।
আরো পড়ুনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর নওগাঁ
আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তবে এটি অন্যের সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url