ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদারবাড়ি ধবংসের পথে
আরো পড়ুনঃ নৌকা ভ্রমণের জন্য দেশের জনপ্রিয় ৫স্থান
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবহেলায় অযত্নে কোন রোকমে কালের সাক্ষী হয়ে মুখ থুবড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। এমনি একটি জমিদার বাড়ি রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি। এক সময় এই জমিদার বাড়ির ছিল কতো জৌলুস, যা এখন বিলীন হতে বসেছে অযত্ন, অবহেলা আর প্রয়োজনীয় নজরদারীর অভাবে।
শুধু এই জমিদার বাড়ি নয় এমন অনেক ছোট- বড় শত শত রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ি, নবাব বাড়ি, কাচারি বাড়ি, ঠাকুর বাড়ি, কুঠি বাড়ি, চৌধুরী বাড়িসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা বা নিদর্শন বাংলার আনাচে কানাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেগুলোর একটু নজরদারি দিলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খুব সহজেই জানতে পারতো প্রাচিন ইতিহাস সম্পর্কে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ছোট যমুনা এবং আত্রাই নদীর মহনায় অবস্থিত ''ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি'' সম্পর্কে। আশাকরি আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন এবং যেনে নিবেন এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে অনেক না জানা তথ্য। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে-
আজকের পাঠক্রম- ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদারবাড়ি ধবংসের পথে
- ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত
- ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা
- জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত এবং ভারতে গমন
- ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী
- কিভাবে ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি যাবেন
- কোথায় থাকবেন ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি
- কোথায় খাবেন ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি
- ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদারবাড়ি শেষকথা
ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত
ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি নওগাঁ জেলা সদর হতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং আত্রাই উপজেলে সদর হতে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে ছোট যমুনা এবং আত্রাই নদীর মহনার নিকটবর্তী নদীর তীর ঘেসে গড়ে উঠা ঐতিহাসিক গ্রাম, মির্জাপুর- ভবানীপুর বাজারে এই জমিদার বাড়ি/ ঐতিহাসিক প্রাসাদটি অবস্থিত।
ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা
ভবানীপুর জমিদার বংশ বা কবে নাগাদ এই জমিদারের গোড়া পত্তন হইয়েছিল তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়না। তবে এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার গির্জাশঙ্কর চৌধুরী। গির্জাশঙ্কর চৌধুরী এই জমিদারি পরিচালনা করেন তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তিনি মৃত্যু বরন করলে তাঁর একমাত্র পুত্র প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহন করেন জমিদারি পরিচালনার।
প্রিয়শংকর চৌধুরী জমিদার থাকা অবস্থায় এই জমিদার বাড়ি আরো বিস্তার লাভ করা ছাড়াও এলাকার ব্যাপকভাবে উন্নতি লাভ করে। এলাকায় রাস্তা- ঘাট, শিক্ষা বিস্তারের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, পানিও জলের জন্য পুকুর খনন ইত্যাদি। তাঁর জমিদার বাড়ি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করাসহ জমিদার বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য নেপালী দুইজন প্রহরী নিয়োগ দেন।
আরো পড়ুনঃ জবাই বিলে নৌকা ভ্রমনের উপযুক্ত সময়
এই জমিদার বংশের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিতি লাভ করেন জমিদার প্রিয়শংকর চৌধুরী। তাঁর আমলে রাজবাড়ির বিভিন্ন সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রজাদের উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য তাঁর সুনাম ব্যাপকভাবে বিভিন্ন এলাকায় ছপড়িয়ে পড়ে। তিনি ছিলেন ৬ ছেলে এবং ৬ মেয়ের জনক।
জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত এবং ভারতে গমন
দেশ ভাগের পর সব জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেলে জমিদার প্রিয়শংকর চৌধুরী স্বপরিবারে ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করন। কিন্তু জমিদারের ৪র্থ পুত্র এই সিদ্ধান্তের ব্যপারে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে জমিদার প্রিয়শংকর তাকে বাংলাদেশে রেখে পরিবারের বাকী সদস্যদের নিয়ে ভারতের কলকাতায় চলে যান।
পরবর্তীতে প্রতাপশংকর চৌধুরী তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে রাজবাড়িতে বসবাস করেন এবং নিজের কর্ম জীবিন শুরু করেন একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার মাধ্যমে। তিনি ২০০৫ সালে ইন্তেকাল করলে এই রাজবাড়ীতে বর্তমানে বসবাস করছেন প্রতাপশংকর চৌধুরীর একমাত্র পুত্র অভিজিৎ চৌধুরী তাঁর পরিবার নিয়ে।
ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী
ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী ছিল নজর কাড়া। এই জমিদার বাড়িটি রোমান স্থাপত্যশৈলীতে দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট প্রাসাদ। জমিদার বাড়িতে ছিল দুর্গা মন্দির, বাসন্তি মন্দির এবং গুপিনাথ এই তিনটি মন্দির। প্রাসাদের পাশেই ছিল পানি খাওয়ার জন্য বড় করে শান বাধানো কুয়া এবং গোসল করার জন্য শান বাধানো ঘাটের একটি পুকুর।
আর পুকুরের পাশেই ছিল গানবাড়ি নামে একটি ভবন, সেখানে সেই সময় ব্যবস্থা করা হতো বিভিন্ন বিনোদনসহ গানবাজনার আয়োজন। এই ভবনের পাশেই ছিল বৈঠক খানা, সেখানে জমিদারি পরিচালনাসহ বিচার- শালিস এর কাজ করা হতো। রাজবাড়ির চারিদিকে দেশি- বিদেশি ফুল, ফল ও অসুধি গাছ, এবং বাহারি ফুলের গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল।
কিভাবে ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি যাবেন
জমিদার বাড়ি যাওয়ার জন্য ঢাকা ও অন্য যেকোন স্থান হতে বাস যোগে প্রথমে নওগাঁ জেলা শহরে নেমে ঢাকা বাস্টান্ডের কাছেই রয়েছে সিএনজি স্ট্যান্ড। এখান থেকে ৭০/৮০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি খুব সহজেই যাওয়া যাবে। আর ট্রেনযোগে সান্তাহার কিংবা আত্রাই নেমে সিএনজি বা অটোরিক্সায় যাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি
ভবানীপুর থাকার জন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় আপনাকে নওগাঁ জেলা সদরে গিয়ে রাত্রি যাপন করতে হবে। সেখানে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এই সকল আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপনের জন্য জনপ্রতি ২০০ টাকা হতে মান ভেদে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া লাগবে। তবে নওগাঁ জেলা শহরে খুব নিরাপদে থাকতে পারবেন।
কোথায় খাবেন ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি
খাওয়ার জন্য আপনারা ভবানীপুর খেতে পারেন, এখানে মাঝারি মানের খাবারের হোটেল রয়েছে। আবার আপনি চাইলে জেলা শহর নওগাঁ সদরে গিয়ে ভালো মানের খতে পারেন। নওগাঁ শহরের হোটেল পট্টিতে অনেক ভালোমানের খাবারের হোটেল রয়েছে। হোটেলগুলোতে আপনি বিভিন্ন ধরণের ছোটমাছ ও মাংস দিয়ে কম খরচে পেটপুরে ভাত খেতে পারবেন।
ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদারবাড়ি শেষকথা
আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা "ঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদারবাড়ি'' সম্পর্কে অনেক ধারণা দিতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। এই সকল ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংস্কারের অভাবে ধবংসের পথে। কর্তৃপক্ষসহ আমাদের সকলেরই উচিৎ এগুলোর রক্ষণা- বেক্ষন করা।
আরো পড়ুনঃ ড্রিম হলিডে পার্কে ভ্রমন
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ও উপকারি মনে হলে এটি অবশ্যই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভূলবেনা। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url