দেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ

আরো পড়ুনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর নওগাঁ

বাংলাদেশ একসময় শাসন করতো বিভিন্ন রাজা, জমিদারগণ। কিন্তু ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়। এখন দেশের কোথাও নেই কোন রাজা কিংবা রাজত্ব। কিন্তু রয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের আমলে নির্মাণ করা রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ি এবং ধর্ম পালনের জন্য মসজিদ ও মন্দির কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে।

আবার অনেক অনেক স্থানে অযত্ন আর অবহেলার কারণে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো কালের গর্ভে মিলীন হয়ে গেছে। এমনই এক ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থান হলো সিরাজগঞ্জ জেলার নবরত্ন মন্দির। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি এই ধরণের মন্দিরের মতো মন্দির রয়েছে। তবে তাঁর মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত নবরত্ন মন্দিরটি সবচেয়ে বড়। 

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল গ্রামের নবরত্ন মন্দির সম্পর্কে সকল তথ্য। আশাকরি আপনারা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং যেনে নিবেন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা প্রাচীন এই মন্দিরের সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া হাক-

আজকের পাঠ্যক্রম- দেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ

  • নবরত্ন মন্দির কোথায় অবস্থিত
  • নবরত্ন মন্দির নাম করণের কারণ
  • নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ এর ইতিহাস
  • নবরত্ন মন্দিরের নির্মাণশৈলী
  • নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ কিভাবে যাবেন
  • নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ কোথায় থাকবেন
  • নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জের শেষকথা

নবরত্ন মন্দির কোথায় অবস্থিত

নবতত্ন মন্দিরটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন/ স্থাপনা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই মন্দিরটি সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত। 

নবরত্ন মন্দির নাম করণের কারণ 

নবরত্ন মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচ দরজা, সাত বারান্দা এবং মন্দিরের উপরের চুড়ায় রয়েছে মনোমুগ্ধকর নয়টি চুড়া। আর মূলত এই নয়টি চুড়া থেকেই এর নাম করণ করা হয়েছে নবরত্ন মন্দির। আসলে এর প্রকৃত নাম হাটিকুমরুল মন্দির। বর্তমানে এই মন্দিরটি সকলের কাছে নবরত্ন মন্দির নামে সর্বাধিক পরিচিত।

নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ এর ইতিহাস

ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন মন্দিরটি যে সময় আবিস্কার করা হয়েছিল তখন এখানে কোন শিলালিপি না পাওয়ার কারণে এই মন্দিরের নির্মাণকাল ও প্রতিষ্ঠাতার না এখনো পাওয়া যায়নি। তবে লোকশ্রুতি রয়েছে রামনাথ ভাদুরী নামের কোন এক স্থানীয় জমিদার ১৬৬৪ সালের দিকে ঐতিহাসিক এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। 

আবার অনেকের মতে ১৭০৪ সাল হতে ১৭২৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে মন্দিরটি বাংলার নাবাব মুর্শিদ কুলিখান সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল গ্রামে প্রাচীন এই মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন। আবার অনেকের তথ্যমতে এই এলাকার তৎকালীন রাজা প্রাণনাথের বন্ধু ছিলেন দিনাজপুর এলাকার রাজা রামনাথ ভাদুরী।

আরো পড়ুনঃ মুর্শিদ জামাই পাগলের মাজার

একবার দিনাজপুরের রাজা রামনাথ তাঁর রাজ্যের কর/ রাজস্ব পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর বন্ধু সিরাজগঞ্জের রাজা প্রাণনাথ। এর ফলস্বরূপ রাজা রামনাথ দিনাজপুরের কান্তনগরে অবস্থিত মন্দিরের আদলে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গ্রামে এই মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন। আবার অনেকে মনে করেন রাজা ভাদুরী নিজেই তাঁর অর্থ ব্যায় করে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন।

নবরত্ন মন্দিরের নির্মাণশৈলী

দৃষ্টিনন্দন তিনতলা বিশিষ্ট প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নবরত্ন মন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে প্রচুর পোড়া মাটির নকশা। আয়তনে প্রায় পনের বর্গমিটারের এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে শক্ত একটি মঞ্চের উপর। মন্দিরটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৫.৪ মিটার দীর্ঘ এবং ১৩.২৫ প্রস্থ মিটার স্তম্ভের উপর। এর মন্দিরে প্রবেশের জন্য রয়েছে পাঁচটি দরজা এবং সাতটি বারান্দা। এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি পাশে আরো তিনটি মন্দিরটি রয়েছে।

নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ কিভাবে যাবেন

ঢাকা বা উত্তর বঙ্গের যে কোন স্থান থেকে বাসযোগে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম দিকে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌরাস্তা নামক স্থানে বাস থেকে নামতে হবে। এখান থেকে সিএনজি, রিক্সা কিংবা অটোরিক্সায় চড়ে খুব সহজে যেতে পারবেন। এখান থেকে ঐতিহাসিক নবরত্ন মন্দিরের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার।

নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ কোথায় থাকবেন

নবরত্ন মন্দিরে থাকা বা খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় আপনাদের সিরাজগঞ্জ জেলা শহরে যেতে হবে। এখানে বিভিন্ন মানের আবাসিক ও খাবারের হোটেল রয়েছে। আপনারা আপনাদের সাধ্যমতো খরচ করে থাকতে ও খেতে পারবেন। আবার আপনারা চাইলে সকালে গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা কিংবা আশপাশের জেলা শহরে ফেরত যেতে পারবেন।

নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জের শেষকথা

সিরাজগঞ্জের এই নবরত্ন মন্দিরের মতো শত শত মসজিদ, মন্দির ও ঐতিহাসিক নিদর্শন বাংলাদেশের আনাচে- কানাচে অযত্নে আর অবহেলায় প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে কোন রোকমে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই আমাদের সকলেরই উচিৎ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে এই সকল ঐতিহাসিক ও প্রাচীন স্থাপনাগুলো রক্ষার উদ্যোগ গ্রহন করা।

আরো পড়ুনঃ ব্রিটিশ শাসনামলের জমিদারবাড়ী ময়েজ মঞ্জিল

আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি "দেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ'' সম্পর্কে অনেক তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আসাবাদি। বিশেষকরে যারা সিরাজগঞ্জের এই প্রাচীন মন্দির ভ্রমন করতে ইচ্ছুক, তাঁদের ক্ষেত্রে অনেক উপকারে আসবে।

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ও উপকারি মনে হলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি দেখুন এবং সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭