পর্যটনের শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় রক্তদহ নদী
আরো পড়ুনঃ ধবংস প্রাপ্ত দয়াময়ী দেবী মন্দির পটুয়াখালী
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম একটি নদীর নাম ''রক্তদহ নদী''। এই নদীর একটি অংশকে দেখতে অনেকটাই বিলের মতো এবং এটি একটি বৃহৎ বিল। এই বিলটি নওগাঁ জেলার রাণিনগর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
ঐতিহাসিক এই রক্তদহ নদীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বিভিন্ন জলপথসহ ১৩ (তেরো) টি বৃহৎ খাল। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ''পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় রক্তদহ নদী'' সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য। আশাকরি এই সকল তথ্য জানার জন্য আপনারা আমাদের এই আর্টিকেলটি পুরোটাই পড়বেন। চলুন তবে দেখি-
আজকের পাঠ্যক্রম- পর্যটনের শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় রক্তদহ নদী
- ঐতিহাসিক রক্তদহ নদী নাম কারণ
- ঐতিহাসিক রক্তদহ নদীর ইতিহাস
- ঐতিহাসিক রক্তদহ নদীর বর্ণনা
- পর্যটনের শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় রক্তদহ নদী
- শেষকথা
ঐতিহাসিক রক্তদহ নদী নাম কারণ
লোকশ্রুতি রয়েছে ফকির মজনু শাহ্ এর সঙ্গে ইংরেজ সৈন্যদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল এই অঞ্চলে। আর এই সংঘর্ষে অনেক ইংরেজ সৈন্য এখানে হতাহত হয়েছিল এবং এলাকায় রক্তের বন্য বয়ে গিয়েছিল। আর স্থানটি ছিল বগুড়া জেলার আদমদীঘির বিল এলাকা। সেই থেকে এই নদী বা বিলের নাম করণ করা হয়েছে রক্তদহ নদী।
ঐতিহাসিক রক্তদহ নদীর ইতিহাস
ফকির মজনু শাহ্ সশস্ত্র অনুচরসহ প্রতিবছর এই রক্তদহ আলাকা থেকে তৎকালীন ইংরেজ বেনিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আওতাভূক্ত থাকা বাংলা এবং বিহারের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালাতেন। বিশেষ করে বিহারের পানিয়া অঞ্চলসহ বাংলার রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, ময়মনসিং, সিরাজগঞ্জ, মালদহ, কোচবিহা ও জলপাইগুড়ি জেলায় তাঁর অভিযান চলতো।
১৭৮৬ সালের আগস্ট মাসে এক স্থানে (বগুড়া থেকে প্রায় ৩৫ মাইল দূরে) তাঁর সংঘর্ষ হয়েছিল লেফটেন্যান্ট আইন সাইনের সঙ্গে। সেই স্থানটি ছিল আদমদীঘি থানার রক্তদহ বিল এলাকা। এখানে অনেক ইংরেজ সৈন্য হতাহত হয়েছিল। ফকির মজনু শাহ্ এর একজন মুজাহিদ শাহাদাৎ বরণ করে এই বিলে শায়িত আছেন। তাঁর মাজারটি রক্তদহ দরগা নামে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ সৌন্দর্যভরা নরসুন্দা লেকসিটি কিশোরগঞ্জ
অপর একটি জুদ্ধ ফকির মজনু শাহ্ এবং ইংরেজদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল তাতে প্রচুর লোক হতাহত হয়েছিল এবং ভোমরা নামক বিলের পানি রক্তে লাল বর্ণ ধারন করে। সেই থেকে ভোমরা বিল নাম ধারণ ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল নামে। এই যুদ্ধে ফকির মজনু শাহ্ এর শীর্ষ একজন সহযোগী শহীদ হন। তাকে এই বিলের উঁচু একটি স্থানে দাফন করা হয় এবং তাঁর কবরের পাশে একটি বড় বটগাছ রয়েছে।
ঐতিহাসিক রক্তদহ নদীর বর্ণনা
নওগাঁ জেলার রাণিনগর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার আদমদীঘির উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত রক্তদহ বিল বর্ষা মৌসুমে পানিতে পরিপূর্ণ থাকলেও ফাল্গুন মাস থেকে শুরু হয় ইরি/ বোরা ধানের আবাদ। প্রায় ৯০০ (নয় শত) একর এলাকা জুড়ে এই বিশাল বিল এলাকা পানিতে পরিপূর্ণ হয় (মে থেকে নভেম্বর মাস) ্তখন এই বিলে পাওয়া যায় প্রচুর মাছ।
এক সময় এই বিলের মাছ দিয়ে মাছের চাহিদা মেটানো হতো নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর এবং জয়পুরহাটসহ আরো কিছু জেলার। সেই সময় এই বিলে পাওয়া জেত বড় বড় বোয়াল, আইড়, চিতল, গজার, পাবদাসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন জাতের ছোট মাছ। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত এই বিলে মাছ চাষ ও সংরক্ষণ এর দায়িত্ব পালন করেন।
পর্যটনের শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় রক্তদহ নদী
বর্ষার মৌসুমে বিলের মাঝে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় দেখা যাবে শুধু পানি আর পানি। আর বর্ষা শেষ হতেই গোটা বিল যেন ভরে উঠে হলুদ রঙ্গে। আবার কিছুদিন পর শুধু চারিদিকে সবুজ আরা সবুজ। অল্পদিন পর গোটা বিল সোনালী সাঝে সেজে উঠে। ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল যেন রঙের খেলায় মেতে উঠে ভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন রূপ নিয়ে।
আর এই বিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকরা সারা বছর ভিড় জমান। বিশেষ করে দুই ঈদে এবং বর্ষার মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠে ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল এলাকা। কর্তৃপক্ষ এই বিলের প্রতি একটু নজর দিলে এটি একটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠবে ভবিষ্যতে।
শেষকথা
আশাকরি আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে "পর্যটনের শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় রক্তদহ নদী" সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আলাচনা করা হয়েছে। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আসাবাদি। বিশেষ করে যারা রক্তদহ বিলে ভ্রমন করতে ইচ্ছুক তাঁদের ক্ষেত্রে।
আরো পড়ুনঃ ধ্বংস প্রাপ্ত ঐতিহাসিক লকমা জমিদার বাড়ি
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অবশ্যই পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url