২২০ বছরের প্রাচীন সূর্যপুরি আমগাছ
আরো পড়ুনঃ ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ
ফলের মধ্যে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে আম। আম পছন্দ করে না এমন মানুষ বাংলাদেশে মেলাভার। আমদের দেশে অনেক প্রকারের আম উৎপাদিত হয়। তাঁর মধ্যে অন্যতম হলো সূর্যপুরী জাতের আম। এই আমটি ঠাকুরগাঁও জেলাসহ উত্তরের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের কাছে জনপ্রিয়। তাঁর উপর যদি হয় ২২০ বিশ বছরের পুরনো গাছের আম। তবে কে না চায় এর স্বাদ নিতে।
হ্যাঁ পাঠক পাঠিকাগণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো প্রায় ২২০ বছর বয়েসের প্রাচীন একটি আম গাছের কথা। আশাকরি আপনারা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগের সঙ্গে পড়বেন এবং "২২০ বছরের প্রাচীন সূর্যপুরি আমগাছ'' সম্পর্কে জানবেন। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ২২০ বছরের প্রাচীন সূর্যপুরি আমগাছ
- ২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছ কোথায় অবস্থিত
- ২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছের বর্ণনা
- ২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছের ইতিহাস
- ২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছটির মালিকানা
- ২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছটির বর্তমান অবস্থা
- ২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক
- কিভবে যাবেন ২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছ
- ২২০ বছরের প্রাচীন সূর্যপুরি আমগাছ শেষকথা
২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছ কোথায় অবস্থিত
ঐতিহাসিক এই আমগাছটি ঠাকুরগাঁও জেলাধিন বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী সীমান্তের গ্রাম মন্ডুমালায় অবস্থিত। এটি ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ মিলোমিটার এবং বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছের বর্ণনা
সীমান্তের এই ঐতিহাসিক আমগাছটি প্রায় তিন বিঘা জমির উপর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে প্রাচীন যুগের কথা জানান দিচ্ছে। উত্তরের শান্ত জনপদের বিশাল আকৃতির গাছটির ডালপালার দীর্ঘ প্রায় ৯০ ফিট এবং ঘের প্রায় ৩৫ ফিটের মতো। গাছটির মূল থেকে চারিদিকে ১৯টি ডাল মাটিকে অক্টোপাসের মতো করে আকড়ে ধরে আছে।
ফলে চারিদিকের ১৯টি ডাল এখন রূপান্তরিত হয়েছে বৃক্ষে। গাছের ডালগুলো এমনভাবে রয়েছে, এর উপর দিয়ে সহজেই মানুষ হাটা চলা করতে পারে। দিনের বেলা দূর থেকে গাছটি অনেকটাই বট বৃক্ষের বা ঝাউ গাছের মতো দেখায়। কিন্তু কাছে গেলে দেখবেন আমগাছ। এই গাছ থেকে প্রতি বছর ৫০ থেকে ১০০ মন আম পাওয়া যায়।
২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছের ইতিহাস
প্রাচীন এই আম গাছের কবে কে লাগিয়েছেন তাঁর সঠিক কোন ইতিহাস জানা যায় না। সরজমিনে গিয়ে এলাকার বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, এই গাছ কে রোপন করেছেন সেটা আমরাতো দূরের কথা আমাদের দাদারাও আমাদের বলতে পারেনি। তবে অনেকে মনে করেন জমিদার সতেন্দ্র নাথ বাবু ও তাঁর খুব কাছের এক বন্ধু বৈরী ধনী এটি লাগিয়েছেন।
আরো পড়ুনঃ ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন নওগাঁ
তবে সকলের সঙ্গে আলাপ করে প্রায় সকলেরই মতামত প্রাচীন এই আমগাছটির বয়স ২০০ বছর থেকে ২২০ বছরের মতো হবে। এই আমগাছে এখনো প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে আম আসে। আর সূর্যপুরি আমের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো আমের সাইজ প্রতিটি ২০০ গ্রাম থেকে ২.৫০গ্রাম ওজন হয়ে থাকে এবং এর আটি একেবারে ছোট। এই আম দেখতে, গন্ধ্যে এবং খেতে অতুলুনীয়।
২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছটির মালিকানা
ব্যতিক্রমী প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক আমগাছটির মালিক পৈত্রিক সূত্রে সাইদুর রহমান এবং নূর ইসলাম এরা আপন দুইভাই। আমগাছ সম্পর্কে তাঁরা দুইভাই বলেন যে, এটি কবে এবং কে রোপন করেছিল তা আমরা জানিনা। তবে আমরা আমাদের বাপ দাদার কাছে শুনেছি এই গাছটি আমাদের বাবার দাদার দাদার সময় থেকে পইত্রিকভাবে আমারা পেয়েছি।
২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছটির বর্তমান অবস্থা
দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহাসিক এবং সবচেয়ে প্রাচীন সবুজ গাছটি বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও এখনো এই আমগাছটিতে প্রতিবছর প্রায় ১০০ মনের মতো আম পাওয়া যায়। উত্তর বঙ্গ তথা সারা বাংলাদেশের গর্ভ এই প্রাচীন আমগাছ দেখার জন্য প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও প্রচুর লোক পরিবার কিংবা বন্ধু বান্ধব নিয়ে এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসেন।
সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে দুই ঈদের সময় প্রচুর লোকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে আমগাছে এলাকা। এই আমগাছ দেখার জন্য ২০ টাকা প্রবেশ মুল্য দিতে হয়। কাছের মালিকগণ বলেন যে, টিকেটের মুল্য থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে গাছের পরিচর্যা করা হয়। তাঁরা আরো বলেন আমরা আগামীতে এটি পিকনিক স্পট হিসাবে গড়ে তুলবো।
ঐতিহাসিক ও প্রাচীন এই আমগাছটি পরিবার নিয়ে দেখতে আসা এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানার পর স্বচক্ষে দেখে অনেক ভালো লাগলো। তবে তিনি বলেন এখানে যদি পর্যটকদের বসার জন্য ব্যবস্থা এবং খাবারের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে অনেক সুবিধা হতো। তিনি আরো বলেন প্রাচীন এই আমগাছের প্রতি কর্তৃপক্ষ নজর দিলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এটি একটি দেশের অন্যতম পিকনিক স্পট হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভাব।
২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রসাসকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, প্রাচীন এই আমগাছটি যদিও ব্যাক্তি মালিকের তবুও পর্যটকদের কথা চিন্তা করে এখানে খাবারের দোকান এবং বিশ্রামের জন্য সাময়িক ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। আবার কেউ চাইলে তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে রেস্ট হাউজ এবং রেস্টুরেন্ট করলে তাদেরকেও সহায়তা করা হবে।
কিভবে যাবেন ২২০ বছরের প্রাচীন আমগাছ
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সদর পর্যন্ত খুব সহজেই যাওয়া যায়। ট্রেনযোগে সৈয়দপুর অথবা দিনাজপুর নেমে সেখান থেকে বাসযোগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সদর আবার বিমানযোগে সৈয়দপুর নেমে সেখান থেকে বাসযোগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সদর যেতে হবে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সদর থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সায় করে যাওয়া যায়।
২২০ বছরের প্রাচীন সূর্যপুরি আমগাছ শেষকথা
আপনারা যদি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে আমরা আশাকরি "২২০ বছরের প্রাচীন সূর্যপুরি আমগাছ" সম্পর্কে সকল তথ্য যেনে গেছেন। যা আমরা ইতিমধ্যেই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। আমরা আরো আশাকরি এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। বিশেষ করে যারা এটি দেখতে ইচ্ছুক তাঁদের খেত্রে।
আরো পড়ুনঃ ধবংস প্রাপ্ত দয়াময়ী দেবী মন্দির পটুয়াখালী
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারী বলে মনে হয় তবে এটি অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url