নিম পাতার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

আরো পড়ুনঃ মৌসুমি ফল জাম্বুরার বারো উপকারিতা

বিশ্বে যতগুলো উপকারি গাছ রয়েছে তাঁর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো নিম গাছ।  নিমগাছ এমনি একটি উদ্ভিদ যার শিকড় থেকে পাতা পর্যন্ত সব কিছুই উপকারি। এই বৃক্ষের সবচেয়ে বেশি যে অংশটি উপকারি তা হল এর পাতা। এর পাতায় লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের উপকারিতা। যা অনেকের কাছেই এখনো অজানা রয়ে গেছে।

হ্যাঁ আমাদের পাঠক পাঠিকাগণ আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "নিম পাতার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম'' সম্পর্কে সকল তথ্য। আশাকরি আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন এবং যেনে নিবেন নিমপাতা সম্পর্কে না জানা অনেক তথ্য। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক এর সকল প্রকার তথ্য-

আজকের পাঠ্যক্রম- নিম পাতার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

  • নিম গাছ ও পাতার বিশিষ্ট
  • নিম পাতার উপকারিতা
  • নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম
  • নিম পাতা খাওয়ার সাবধানতা
  • চুলের যত্নে নিম পাতার ট্রিপস
  • নিম পাতার শেষকথা

নিম গাছ ও পাতার বিশিষ্ট

নিম গাছে ৪০/৫০ ফুট লম্বা বর্ষজীবী এবং চিরহরিৎ এক প্রকারে উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদটি বাংলসদেশের সকল এলাকা এবং ভারতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে এটি জন্মে থাকে। এর মূল রাসয়নিক উপাদান হলো স্যাপোনিন, এলকালয়েডস, ফ্লাভনয়েড, আকাদরকটিন, এসকরবিক এসিড, এমাইনো এসিড, নিম্বিডিন, প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম ফ্যাট ইত্যাদি।

নিম পাতা ২ থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা এবং পাতার সাইটে খাঁজ খাঁজ হয়ে থাকে। নিম পাতা বহুবর্ষজীবী এবং চিরহরিৎ জাতীয় একটি উদ্ভিদের পাতা। নিম গাছের পাতা, ফুল, ফল এমনকি এর বাকল পর্যন্ত কাজে লাগে। নিম পাতা হালকা বাকা এবং এর রং সবুজ হয়ে থাকে। নিম্নে নিম পাতার বিশিষ্ট সমুহ আলোচনা করা হলো- 

  • নিম পাতাতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ভাইরাল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল বিশিষ্ট।
  • নিম পাতা লম্বায় ২ থেকে ৪ ইঞ্চি এবং পাতা অনেকটা কাস্তের মতো বাঁকানো।
  • নিম পাতার একটি সুন্দর গন্ধ রয়েছে এবং খেতে তাতো স্বাদ।
  • নিম পাতার রং হয় সবুজ।

নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতা প্রাকৃতিক ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ যা ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে। এর পাতা খেলে বিশেষ করে শীতের মৌসুমে বেশ উপকারিতা পাওয়া যায়। নিম্নে নিম পাতার উপকারিতা আলোচনা করা হলো- 

*** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- শীত কালে জ্বর সর্দি- কাশি বা ঠাণ্ডা লাগা রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ভাইরাস জাতীয় উপাদান যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

*** রক্তকে করে পরিস্কার-  নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর উপাদান যা শরীরের রক্ত থেকে টক্সিন বের করার ফলে রক্ত হয় পরিস্কার। ফলে আমাদের শরীর সুস্থ্য থাকে।

*** ত্বক উজ্জ্বল করে- শীত মৌসুমে ত্বক হয়ে যায় শুস্ক। যা নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল আর অ্যান্টি ফাঙ্গাল প্রতিরোধ করে ত্বকের সংক্রমণ। তাছাড়া নিম পাতা বৃদ্ধি করে ত্বকের উজ্জলতা।

*** চুল ভালো রাখে- আমাদের চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়লে নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল চুলের গোড়াকে করে তোলে শক্ত। তাছাড়া নিমের পাতা চুলের খুসকি দূর করতে বেশ কার্যকর।

নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। যেমন- সরাসরি পাতা চিবিয়ে খাওয়া যায় আবার এটি শুকিয়ে পাউডার করে চা বানিয়ে খাওয়া যায়। নিম্নে নম পাতা খাওয়ার নিয়ম আলোচনা করা হলো-

আরো পড়ুনঃ কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ এবং আট উপকারিতা

  • সকাল বেলা খালি পেটে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
  • সপ্তাহে ২/৩ দিন নিম পাতা খাওয়া যায়, কারণ এটি প্রতিদিন খাওয়া ঠিক নয়।
  • ২/৩ টি পাতা এক সঙ্গে খাওয়া যাবে।
  • মধু বা গুড়ের সঙ্গে নিম পাতা খাওয়া যায়।
  • পাতার রস চা বানিয়ে খাওয়া যায়।

নিম পাতা খাওয়ার সাবধানতা

নিম পাতা খুবই উপকারি এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, কিন্তু সকল ভালোর বিপরীত কিছু দিক রয়েছে। এক্ষেত্রে নিম পাতাও তাঁর ব্যাতিক্রম নয়। নিম্নে নিম পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- 

কিডনির ক্ষতি- নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যায়োটিক এবং অ্যান্টি ভাইরাল উপাদান যা বেশি খাওয়ার ফলে কিডনিতে জমা হতে পারে এবং ক্ষতি হতে পারে কিডনির। তাই যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি খাওয়া ঠিক নয়।

গর্ভবতী মা বোনদের- নিম পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যার ফলে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি খাওয়া উচিৎ নয়।

অ্যালার্জির সমস্যা- নিম পাতায় রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যার ফলে অনেক মানুষের এটি গ্রহণের ফলে দেখা দিতে পারে অ্যালার্জির সমস্যা। তাই যাদের নিম পাতায় অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাঁদের এটি থেকে বিরত থাকাই ভালো।

পেটের সমস্যা- অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা হতে পারে। তাই প্রতিদিন বেশি না খেয়ে নিদিষ্ট পরিমাণে নিম পাতা খাওয়াই ভালো।

ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে- অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে নিম পাতায়। কিছু ওষুধে নিম পাতা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই ওষুধ খাওয়ার সময় নিম পাতা খেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

চুলের যত্নে নিম পাতার ট্রিপস

চুল খুসকি মুক্ত, চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত এবং ভালো রাখার জন্য নিমের পাতার কিছু জরুরী ট্রিপস নিম্নে আলোচনা করা হলো-

  • চুলের খুসকি দূর করার জন্য নিম পাতার পানি দিয়ে শ্যাম্পু করুন।
  • চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে করতে মধু এবং নিম পাতা মিশিয়ে চুলে লাগান।
  • চুলের উজ্জলতা বাড়াতে কাঁচা হলুদ আর নিম পাতা মশিয়ে চুলে লাগান।
  • প্রতি সপ্তাহে নিয়মিতভাবে এক দিন নিম পাতা লাগান এবং এক ঘন্টা পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

নিম পাতার শেষকথা

আপনারা যদি আজকের এই আর্টিকেলটি পুরোটাই মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে আশাকরি আপনারা নিম পাতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অনেক তথ্য যেনে গেছেন। যাই হোক নিম গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা মুশকিল। কারণ নিম গাছের শিকড় থেকে পাতা পর্যন্ত পুরোটাই উপকারি। বিশ্বে যত উপকারি গাছ রয়েছে, তাঁর মধ্যে নিম গাছ সবার উপরে।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে অবশ্যই এটি আপনার পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল দেখুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭