ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ঐতিহাসিক হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ি
আরো পড়ুনঃ ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ নওগাঁ
রাজশাহীকে বলা হয়ে থাকে রাজাদের আবাস্থান। কারণ এক সময় রাজশাহীকে শাসন করেছিলেন বিভিন্ন রাজা। বর্তমানে রাজশাহী কিংবা দেশের কোথাও নেই কোন রাজা বা তাঁদের রাজত্ব। কিন্তু এখনো বিভিন্ন এলাকায় কালের সাক্ষী হয়ে কোন রোকমে মাথা উঁচু করে প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাঁদের নির্মিত রাজবাড়ীগুলো।
আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শনের স্বাক্ষর বহন করে চলছে। এই সকল ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ সেখানে ভিড় জমায়। এমনই একটি জমিদার বাড়ি হলো রাজশাহী জেলার বহুল পরিচিত বাঘমারা/ ভোবানীগঞ্জ উপজেলয় অবস্থিত " ঐতিহাসিক হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ি''।
ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ি মূলত বীরকুতসা পরগনা বা বীরকুতসা জমিদার বাড়ি নামেও পরিচিত। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে সকল তথ্য। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ঐতিহাসিক হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ি
- হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত
- জমিদার বাড়ির নাম হাজার দুয়ারি হওয়ার কারণ
- হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ির ইতিহাস
- হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ির নির্মাণশৈলী
- হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা
- হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ির- শেষকথা
হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত
রাজশাহী জেলার ভবানীগঞ্জ উপজেলা সদর হতে মাত্র ১৮ মিলোমিটার দূরে এই উপজেলার শেষ সীমানা বীরকুতসা গ্রামে ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। এই জমিদার বাড়িটি ৫০ বিঘা জমির উপর সান্তাহার- নাটোর রেল লাইনের পাশে অবস্থিত।
জমিদার বাড়ির নাম হাজার দুয়ারি হওয়ার কারণ
বীরকুতসা গ্রামের ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি ৫০ বিঘা জমির পর নির্মাণ করা হয়েছিল এবং সেই সময় এই জমিদার বাড়ির মোট দরজা ছিল এক হাজারটি। আর এই কারণে এই বাড়িটির নাম করণ করা হয়েছিল হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ি।
আরো পড়ুনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত বলিহার রাজবাড়ি
হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ির ইতিহাস
আমরুল ডিহির রাজা ছিলেন গোপাল ধাম, তিনি তাঁর মেয়ে প্রভাতী বালাকে বিয়ে দেন ভারতের কাশি হতে আগমন করা বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এবং তিনি তাঁর মেয়ে ও জামাইকে লিখে দেন তাঁর অধিনে থাকা বীরকুতসা পরগনাটি। আর এর মাধ্যমেই সূচনা হয় এই জমিদার বাড়ির। বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জমিদারির সময় বীরকুতসা গ্রামে নির্মাণ করেন এই জমিদার বাড়িটি।
পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালের দিকে রাজা বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের হুগলির নন্দনগরে তাঁর পরিবার নিয়ে চলে গেলে এই জমিদার বাড়িটি চলে আসে সরকারের দখলে। রাজা বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল পাঁচ ছেলে। তাঁর ছিল চারটি লাল বর্ণের ঘোড়া এবং একটি হাতি। রাজা তাঁর জমিদারি দেখাশুনা করতেন হাতিতে চড়ে এবং জমিদারের খাজনা আদায় এবং হিসাব রাখতেনে ১৭ জন নায়েব।
হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ির নির্মাণশৈলী
হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ির নির্মাণশৈলী ছিল নজর কাড়া। এই বাড়ির দরজাগুলো ছিল সুন্দর কারুকাজে ভরপুর এবং সেগুন কাঠের তৈরি। যা তিন স্তরে সাজানো ছিল। যেমন, কাঠ, লোহার গ্রিল এবং মোড়ানো ছিল দামি কাচ দিয়ে। এই জমিদার বাড়িতেই থাকতেন জমিদার বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপন দুই ভাই রমা বাবু ও দুর্গা বাবু।
প্রাসাদের সামনে বাগান ছিল বাহারি বিভিন্ন ফুলের গাছের। খিড়কি দরজা ছিল প্রাসাদের পশ্চিম দিকে এবং সান বাধানো একটি পুকুর ছিল। আর খিড়কির দরজা দিয়ে যাওয়া যেতো পুকুরে। এই পুকুরে শুধু গোসল করতেন জমিদার পরিবারের সদস্যরা। একটি জলসা ঘর ছিল প্রাসাদের ভেতরে এক পাশে।
এই জলসা ঘরে গান বাজনার জন্য কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হতো ভোলানাথ অপেরার শিল্পীদের। পূর্ব দিকে প্রাসাদের সুরক্ষার জন্য দেউড়ির দুই পাশে বরকন্দাজ থাকতো ৬জন করে ১২ জন। দেউড়ির পাশে আরো ছিল মালখানা, মহাফেজখানা এবং বড় একটি পুকুর। এই পুকুরে গোসল করতেন আমলা, বরকন্দাজ এবং পেয়াদারা।
হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে জমিদার বাড়িটি অযত্নে এবং অবহেলায় ভৌত কাঠামোগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। রাজবাড়ির বড় পুকুরটি এখন বেদখল হয়ে গেছে। রাজবাড়ির বকুলতলার পাশে থাকা খাজনা আদায়ের ঘরটি এখন বীরকুতসা তহসিল অফিস হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এবং রাজবাড়ির পূজা মণ্ডপটি ব্যবহার করা হয় বীরকুতসা পোস্ট অফিস হিসাবে।
হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ির- শেষকথা
হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়িসহ শতশত ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে আমাদের বাংলাদেশে যেগুলো এখন অযত্ন আর অবহেলায় ধবংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আমাদের সকলের উচিৎ এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া।
আরো পড়ুনঃ হারিয়ে যাওয়া মুসলিম নগরির স্মৃতি স্মারক মাহিসন্তোষ মসজিদ
আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি "ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ঐতিহাসিক হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ি'' সম্পর্কে অনেক তথ্য। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল দেখুন এবং সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url