ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন নওগাঁ
আরো পড়ুনঃ দৃষ্টি নন্দন বিনোদন পার্ক শখের পল্লী
দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকার ধামইর হাট উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার বছরের প্রাচীন এবং জাতীয় উদ্যান ঐতিহাসিক আলতা দীঘি শালবনের কথা এখনো অনেকের কাছেই অজানা রয়ে গেছে। এখানে শুধু শালবন নয় দেখা মেলবে আরো বিভিন্ন গাছের পাশাপাশি দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক আলতাদীঘি।
ভারত সীমান্তের নিকট অবস্থিত প্রাচীন এই শালবনটি ২৬৪.১২ হেক্টে ভূমির উপর অবস্থিত। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন নওগাঁ সম্পর্কে সকল তথ্য। আশাকরি আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন এবং যেনে নিবেন প্রাচীন এই শালবন সম্পর্কে সকল তথ্য। চলুন দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন নওগাঁ
- আলতাদীঘি শালবন কোথায় অবস্থিত
- ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন নওগাঁ
- ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবনের ইতিহাস
- ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবনের বর্তমান অবস্থা
- ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবনের জীববৈচিত্র
- কিভাবে যাবেন ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন
- ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন শেষকথা
আলতাদীঘি শালবন কোথায় অবস্থিত
নওগাঁ জেলার সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি নওগাঁ জেলা সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার, জয়পুর হাট জেলা সদর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন নওগাঁ
বাংলাদেশেত বরেন্দ্র ভূমিখ্যত নওগাঁ জেলার ধামইর হাট উপজেলায় অবস্থিত দেড় হাজার বছরের প্রাচীন এই শালবনটি ২৬৪.১২ হেক্টর ভূমির উপর রয়েছে। এই শালবনে শুধু শালগাছের জন্য জনপ্রিয় তা কিন্তু নয়। শালবন মাঝে রয়েছে ঐতিহাসিক আলতা দীঘি, এর মাঝে মাঝে রয়েছে আদিবসি সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি গ্রাম।
শালবনের মেঠোপথ ধরে যাবার সময় আপনার মন কেড়ে নিবে বিশাল আকৃতির উইঢিপি। আর শালবন ও আলতাদীঘীর পর মাত্র কয়েক গজ দূরে ভারতের সীমান্ত পিলার এবং কাঁটাতারের বেড়া। কাটা তারের বেড়ার অপারে অনেক ক্ষেত্রে এপারো আপনার চোখে পড়বে বিএসএফএর টহল এবং অনেক ভারতীয়রা কৃষিকাজ করছেন।
এই বনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো শালগাছকে জড়িয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে বনবড়ই, হিংলো লতা এবং অনন্তমূলসহ বিভিন্ন লতাগুল্ম এবং এর বাহারীসব ফুল। বনের পাকা রাস্তা কিংবা মেঠো পথ ধরে যতই এগিয়ে যাবেন ততই আপনার নাকে ভেসে আসতে থাকতে বিভিন্ন ধরণের বনফুলের সুগন্ধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়ছে ঘন বেতবন এবং এর পাতার চিকচিকে সবুজ রং।
এছাড়াও শালবনের বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলবে বড় বড় উই পোকার ঢিপি। আপনি দেখে বিশ্বাস করতে পারবেন না এতবড় উইপোকার মজবুত ঢিপি। অনেকটা লালচে রঙের এই ধিপিগুলো বর্ষার প্রবল বৃষ্টিতেও দাঁড়িয়ে থাকে মাথা উঁচু করে। উইপোকাগুলো সারা বছর তাঁদের কাজ চালিয়ে যান। এই বনে পর্যটকদের সহযোগীতা ও নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকজন লোক রয়েছে।
আপনার অনুভূতি আরো রোমাঞ্চকর হয়ে উঠবে যখন আপনি বনের ভেতর এগিয়ে যাবেন। পথের ধারে দেখা মেলবে আদিকাল থেকে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আলপনা আকা ছোট ছোট বাড়ি। বনের চারিদিকে দেখা উঁচু উঁচু শালগাছ। প্রকৃতির গোপন রহস্যে ঘেরা ভারত সীমান্তের শালবন। প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা এই বনভূমিতে নেই কোন কৃত্রিমতা।
ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবনের ইতিহাস
লোকশ্রুতি রয়েছে পালযুগে পালবংশের একরাণী দেখতে এসেছিলেন এই শালবন। সেখানকার প্রজারা রানীকে কাছে পেয়ে তাঁদের জল কষ্টের কথা রানীকে জানান। কোমলপ্রাণ রানী প্রজাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে রাজার কাছে বায়না ধরেন একটি দীঘি খনন করে দেওয়ার জন্য। রাজা রানীকে কথা দেন যে, রানী যতদূর পর্যন্ত হেটে যাবেন ততদূর পর্যন্ত দীঘি খনন করে দিবেন।
আরো পড়ুনঃ পর্যটনের শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় রক্তদহ নদী
কথা অনুযায়ী রাণী হাটা শুরু করলে আর থামেন না, অবস্থা বেগতিক দেখে রাজা তাঁর কর্মচারীদের বলেন রাণীর পায়ে আলতা লাগিয়ে দিতে। আলতা লাগিয়ে দিয়ে তাঁরা বলেন রানীমা আপনার পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তখন রানী হাটা বন্ধ করেন। রাজা তাঁর কথা মতো সেখান পর্যন্ত একটি দীঘি খনন করেন এবং এর নাম করণ করেন আলতাদীঘি।
অপর এক লোকশ্রুতি থেকে জানা যায় যে, এক সময় কলকাতার (পাথর ঘাটার) জমিদার অত্যানন্দ ঠাকুর এই শালবনটির মালিক ছিলেন। কিন্তু তিনি দৈবক্রমে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেললে জমিদারী পরিচালনা করতেন তাঁর স্ত্রী অক্ষয় কুমারী দেবী। তাঁর কাছারি ছিল ধামইর হাট উপজেলার আড়ানগরে। বর্তমানে এটি তহশিল অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অক্ষয় কুমারী দেবী প্রতিবছর চৈত্র মাসের ৩০ তারিখে নিজে উপস্থিত থেকে নিলামে বিক্রি করতেন পরিপক্ক গাছগুলো। এই গাছগুলো তাঁর কর্মচারীরা আগেই চিহ্নিত করে রাখতেন। কাঠ ব্যবসায়ীরা অনেক দূর থেকে এসে নিলামে অংশ নিতেন। ১৯৪৭ সালে সর্বশেষ অক্ষয় কুমারী দেবী এখানে নিলামের জন্য এসেছিলেন। এরপর আর কোন জমিদার এখানে আসেননি।
ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবনের বর্তমান অবস্থা
ভারত সীমান্তের ধামইর হাট উপজেলার দায়িত্বরত বীট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, প্রাচীন এই শালবন সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধার শীর্ষক একটি প্রকল্পের আওয়াতায় ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে বরাদ্দ করা হয়েছিল অর্থ। তিনি আরো জানান ১৭০ হেক্টর বন এলাকায় বেত বাগান এবং ৬৮ হাজার বিভিন্ন প্রকার অসুধি গাছ রোপন করা হয়েছে।
ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবনের জীববৈচিত্র
জীববৈচিত্র রক্ষা করার জন্য এখনে অবমুক্ত করা হয়েছে মেছোবাঘ ৮ টি, অজগর সাপ ২টি, গন্ধ গকুল ২টি, বনমোরগ ১৪ টি। প্রাচীন এই শালবনে ভ্রমন কারীদের বিশ্রামাগার যদিও এখনো স্থাপন করা হয়নি। কিন্তু এখানে রয়েছে অনেক ফাকা জায়গা, যেখানে ভ্রমণকারীরা আয়েশ করে বসে বিশ্রাম করেন এবং উপভোগ করেন নির্মল হাওয়া।
ধামইর হাট উপজেলেয় রয়েছে জগদ্দল মহা বিহার, ভীমের পান্টি, হরিয়ে যাওয়া মুসলিম নগরী মাহিসন্তীস, আগ্রার ঢিপিসহ অনেক প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই শালবন দেখার জন্য আসেন। বিশেষ করে দুই ঈদে এখানে হাজার হাজার মানুষের পদাচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে এই শালবন ও আলতাদীঘি এলাকা।
কিভাবে যাবেন ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন
ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে নওগাঁ জেলে সদরে কিংবা জয়পুর হাট জেলা সদরে। সেখান থেকে বাস যোগে যেতে হবে ধামইর হাট উপজেলে সদরে। এখান থেকে রিক্সা, অটো কিংবা সিএনজিতে করে ৩০/৪০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায় আলতাদীঘি শালবন। আবার আপনি চাইলে এখান থাকে ধামইর হাটের সকল প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ঘুরে আসতে পারবেন।
ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন শেষকথা
আশাকরি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি "ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন নওগাঁ'' সম্পর্কে সকল তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আসাবাদি। এই প্রাচীন শালবনটির প্রতি কর্তৃপক্ষ সু-নজর দিলে এটি বাংলাদেশের অন্যতম ভ্রমন স্পট হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ ধবংস প্রাপ্ত দয়াময়ী দেবী মন্দির পটুয়াখালী
আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে ও উপকারি বলে আপনার কাছে মনে হয়, তবে এটি অবশ্যই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদে সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url