ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাজনা পাতার জাদুকরি উপকারিতা

আরো পড়ুনঃ নিম পাতার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

সাজনা বাংলাদেশের  একটি অতি পরিচিত সুস্বাদু এবং দামি সবজি। সাজনা গাছের উৎপত্তিস্থল পাক ভারতসহ পৃথিবীর শীত প্রধান দেশ ছাড়াসব দেশেই সাজনা গাছ জন্মে থাকে। এটি মৌসুমি সবজি হলেও বেশ কিছু সাজনা গাছ রয়েছে যে গুলোতে সারা বছর ফলন পাওয়া যায়। আমাদের দেশেও দুই/ তিন প্রকারের সাজনা পাওয়া যায়।

আর সাজনা শুধু একটি সুস্বাদু খাবার তাই নয়, সাজনা পাতার রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ খমতাসহ ডায়াবেটিস নিরাময়ে জাদুকরি ক্ষমতা। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাজনা পাতার জাদুকরি উপকারিতা'' সহ এর বিভিন্ন বিষয়ে সকল তথ্য। তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক-

আজকের পাঠ্যক্রম- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাজনা পাতার জাদুকরি উপকারিতা

  • সাজিনা যে কারণে রক্তে নিয়ন্ত্রণ করে চিনির মাত্রা
  • ডায়টে কিভাবে সাজনা পাতা খাবেন
  • সাজনা পাতার তুলনা মূলক গুণাগুন
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাজনা পাতার জাদুকরি উপকারিতা
  • সাজনা পাতার আরো বিভিন্ন উপকারিতা
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শুধু সাজনা পাতা
  • সাজনা পাতার খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • সাজনা পাতার উপকারিতার শেষকথা

সাজিনা যে কারণে রক্তে নিয়ন্ত্রণ করে চিনির মাত্রা

সাজিনাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি পলিফেনল। এর মধ্যে অধিকতর কার্যকরী হলো ক্লোরোজেনিক এসিড, ফেনোলিক এসিড, ক্যাফেওয়েল্কুইনিক এসিড, কেম্পফেরল এবং ফ্লাভোনয়েড কোয়ারসেটিন। এই উপাদানগুলি প্রদান করে অ্যান্টি হাইপারগ্লাইসেমিক বিশিষ্ট বলে ধারণা করা হয় এবং অন্ত্রের শোষণ হ্রাস করে গ্লুকোজের।

ওলিফেয়ার জলীয় পাতার নির্যাস মরিঙ্গা এবং বাধা দিতে দেখা গেছে অন্ত্রের সুক্রোজের কার্যকলাপকে যার ফলে অবদান রাখে অ্যান্টি হাইপারগ্লাইসেমিক বিশিষ্ট গুলোতে। সাজনা বা মরিঙ্গা ওলিফেরাতে উপস্থিত ফেনল, ট্যানিন এবং ফ্লাভোনয়েডের কারনে সম্ভাব হয় এই প্রিতিরোধ প্রভাব।  

হজমে বিলম্ব করে কার্বোহাইড্রেট, এবং এই এনজাইমগুলির বাধার ফলে হিমোগ্লোবিন এবং পোস্ট প্র্যান্ডিয়াল হাইপার গ্লাইসেমিয়া A1C হ্রাসের দিকে ধাপিত করে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, কোন প্রতিকূলতা সৃষ্টি না করেই সাজনার পাতা কমাতে দেখা গেছে গ্লাইসেমিয়া। আর গ্লাইসেমিয়া হ্রাস করার ক্ষেত্রে নিম্নের প্রক্রিয়াগুলো রয়েছে- 

  • লিভারে ইনসুলিন সিক্রেটিভিটি বৃদ্ধি এবং গ্লোকোনিওজেনেসিস হ্রাস।
  • কার্যকলাপে বাধা প্রদান করে এ- গ্লুকোসাইডেট এবং এ-এমিলাইস।
  • লিভারে এবং পেশীতে গ্লুকোজ গ্রহণ বৃদ্ধি করে।
  • গ্লুকোজ গ্রহণে বাধা প্রদান করে অন্ত্রে।

ডায়টে কিভাবে সাজনা পাতা খাবেন

ড্রামস্টিক, পাতা এবং বীজ ব্যবহার করা যায় তিনটি ভিন্ন উপায়ে। নিম্নে উপায় সমুহ আলোচনা করা হলো-
  • সাজনার কাঁচা পাতা চিবিয়ে অথবা গুড়ো করে বা রস আকারে খাওয়া যায়।
  • সাজনার পাতা পানিতে সিদ্ধ করে লেবু এবং মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • সুপ করে এবং বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করে খাওয়া যেতে পারে।
প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এক টেবিল চামচ বা দুই গ্রাম সাজনা পাতা খাওয়া উচিৎ। তবে ডায়াবেটিস রোগিদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিৎ।

সাজনা পাতার তুলনা মূলক গুণাগুন

সাজনা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং তুলনা মূলকভাবে গুণাগুণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচন করা হলো-
*** সাজনা পাতায় ভিটামিন 'সি' লেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশী রয়েছে। যা আমাদের শরীরের ভিটামিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
*** ডিমের চেয়ে দুইগুণ প্রোটিন এবং দুধের চেয়ে চারগুণ বেশী ক্যালসিয়াম রয়েছে সাজনা পাতায়। যা আমাদের খুবই কার্যকরী এবং উপকারি।
*** গাজরের চেয়ে চারগুণ ভিটামিন 'এ' বেশি রয়েছে সাজনা পাতায়। তাই যারা অন্ধত্ব রোগে ভূকছেন তাঁদের ক্ষেত্রে সাজনা পাতা খুবই উপকারি।
*** কলার চেয়ে তিনগুণ বেশী পটাসিয়াম এবং শাকের থেকে পাঁচগুণ বেশি আয়রন রয়েছে সাজন পাতায়। তাই পুষ্টির চাহিদা মেটিনোর ক্ষেত্রে সাজনা পাতা অনেক উপকারি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাজনা পাতার জাদুকরি উপকারিতা

*** সাজনা পাতায় থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে গ্লুকেজের মাত্রা। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে এতে থাকা প্রোটিন কমায় শর্করার মাত্রা। তাই সাজনা পাতা খুবই উপকারি ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য। তাছাড়া রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে বাড়াতে পারে পিত্তথলির কার্যকরীতা।

আরো পড়ুনঃ মৌসুমি ফল জাম্বুরার বারো উপকারিতা

*** সাজনা পাতায় থাকে আইসো থায়োসায়ানেট। তাই নিয়মিত সাজনা পাতা খেলে রক্তে হ্রাস পায় গ্লুকোজের মাত্রা ও সাহায্য করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে। তবে সাজনা পাতার চা ডায়াবেটিস রোগির জন্য খুবই উপকারি।

*** ত্রিশ জন মহিলাদের মধ্যে তিন মাসের একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন দেড় টেবিল চামচ সাজিনা পাতার গুড়ো খালিপেটে গ্রহণের পর সাড়ে তেরো ভাগ হ্রাস পায় রক্তে শর্করার মাত্রা।

*** মরিঙ্গা বা সাজনাপাতা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে ডায়াবেটিস বিরোধী বিশিষ্ট দেখায়। কারণ এতে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড স্থিতিশীল করে রক্তের শর্করা।

*** সাজনা পাতায় রয়েছে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে। যার কারণে বাড়ায় শরীরের ইনসুলিন নিঃসরণ, ফলে কমে যায় রক্তে শর্করার মাত্রা। 

*** একটি গবেষণায় ডায়াবেটিস আক্রান্তদের দেখা গেছে যে, সাজনার পাতা পঞ্চাশ গ্রাম গ্রহণ করলে রক্তে শর্করা বৃদ্ধি হ্রাস পায় একুশ ভাগ।

*** সাজনা পাতা প্রদর্শন করে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য, যা সাহায্য করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে। সাজনা পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে চা পাতার মতো করে খাওয়া যায়। আবার তাজা সাজনা পাতা খাওয়া যায় পানিতে ফুটিয়ে চার মতো করে।

সাজনা পাতার আরো বিভিন্ন উপকারিতা

সাজনা পাতা ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস এবং কোলাইটিসের সময় অনেক কার্যকরী। শরীরের জন্য এর পাতার রস বেশ উপকারি। সাজনা পাতা অনেক যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তিনশত এর অধিক রোগের নিরাময়ে। এছাড়াও এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস রয়েছে সাজনা বীজে। এটা অত্যান্ত কার্যকর পানি বিশুদ্ধ করণে।

সাজনা পাতা প্রতিরোধ করে ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধি। গর্ভ ধারনের পরবর্তীতে সব মায়েদের সাজনা পাতা খুবই উপকারি। মানুষের শরীরে এটি কাজ করে এন্টি জিংক হিসাবে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। সাজনা পাতা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।এছাড়াও হ্রাস করে কোলেস্টেরল, হজম শক্ত বৃদ্ধি এবং দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শুধু সাজনা পাতা

সাজনা পাতা নিয়মিত সেবনের ফলে হ্রাস পায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহয়তা করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীকে সাজনা পাতার পাশাপাশি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে জীবন যাত্রার মান এবং মেনে চলতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যাভাস। কারণ যদি কেউ জীবন যাত্রার মান এবং খাদ্যাভাস সঠিক ভাবে মেনে চলে তবে সাজনা পাতাতেই সম্ভব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ।

সাজনা পাতার খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সকল ভালোর বিপরীত দিক মন্দ সব কিছুতেই রয়েছে। এক্ষেত্রে সাজনা পাতার ক্ষেত্রেও কিছু  পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-

  • সাজনা বা কোন সম্পূরক সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো, বিশেষ করে যদি কোন প্রকার ওষুধ সেবন করা হয়।
  • সাজনা পাতা গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ বুকের দুধ খাওয়ানো বা গর্ভবতীদের।
  • বমি ভাব বা বুক জ্বালা করলে সাজনা পাতা না খাওয়াই ভালো।

সাজনা পাতার উপকারিতার শেষকথা 

আশাকরি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি আপনারা পুরোটাই মনোযোগের সঙ্গে পড়েছে। তাহলে অবশ্যই যেনে গেছেন সাজনা পাতা সম্পর্কে সকল তথ্য। যা আমরা ইতি মধ্যেই আলোচনা করেছি। আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। বিশেষ করে যারা সাজনা পাতা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারি।

আরো পড়ুনঃ কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ এবং আট উপকারিতা

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তবে এটি অবশ্যই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭