ধ্বংস প্রাপ্ত ঐতিহাসিক লকমা জমিদার বাড়ি
আরো পড়ুনঃ নান্দনিক হিন্দা কসবা শাহী জামে মসজিদ
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার প্রাচীন স্থাপনা। যার অনেকগুলই এখন প্রায় ধবংসের দোর গোড়ায় আবার কিছু স্থাপনা অনত্নে, আর অবহেলায় কালের গর্ভে বিলীন হয়ে এখন শুধু ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবো প্রায় কালের গর্ভে বিলীন হতে বসা একসময়ের জৌলুসে ভরপুর জয়পুর হাট জেলার পাঁচবিবির উপজেলায় অবস্থিত ''লকমা জমিদার বাড়ি'' সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে-
আজকের পাঠ্যক্রম- ধ্বংস প্রাপ্ত ঐতিহাসিক লকমা জমিদার বাড়ি
- লকমা জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত
- লকমা জমিদার বাড়ির ইতিহাস
- লকমা জমিদার বাড়ির নির্মাণশৈলী
- লকমা জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকারি
- লকমা জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা
- কিভাবে যাবেন লকমা জমিদার বাড়ি
- লকমা জমিদার বাড়ির শেষকথা
লকমা জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত
রাজশাহী বিভাগের সর্ব উত্তরের জেলা জয়পুর হাট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা পাঁচবিবির প্রত্যন্ত গ্রাম কড়িয়ায় এই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। এই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িটি স্থানীয় অনেকের কাছেই চৌধুরী বাড়ি নামে বেশ পরিচিত। এই জমিদারের বেশিরভাগ এলাকা বর্তমানে ভারতে মধ্যে পড়েছে।
লকমা জমিদার বাড়ির ইতিহাস
রাজশাহী বিভাগ তথা বাংলাদেশ উত্তরের জেলা যা ভারত সীমান্ত অবস্থিত জয়পুর হাট জেলার সবচেয়ে উত্তরের এবং ভারত সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা পাঁচবিবির প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক চৌধুরী বাড়ি বা জমিদার বাড়িটি জমিদার হাদি মামুন চৌধুরী সম্ভাবত ১৫০০ থেকে ১৬০০ শতাব্দীর কোন এক সময় নির্মাণ/ প্রতিষ্ঠা করেন।
এই জমিদার সম্পর্কে এলাকায় কথিত রয়েছে, জমিদার হাদি মামুন চৌধুরী ছিলেন অত্যান্ত নিষ্ঠুর এবং অত্যাচারি। তিনি তাঁর প্রজাদের সঙ্গে প্রচুর অত্যাচার করতেন। তাই তাঁর জমিদারী শেষ হয়, জমিদারী প্রথা শেষ হওয়ার অনেক আগেই। কথিত রয়েছে তাঁরা অত্যাচারি হওয়ার কারণে গায়েবী মাধ্যমে তাকে জমিদারী ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়। তারপর তাঁরা জমিদাড়ী ছেড়ে দেন এবং এখানে তখন থেকে জমিদারী বিলুপ্ত হয়।
লকমা জমিদার বাড়ির নির্মাণশৈলী
প্রাচীন ও ঐতিহাসিক লকমা জমিদার বাড়িটি দুইভাগে বিভক্ত করে প্রায় তিন একর জায়গার উপর নির্মাণ করা হয়েছিল। এই ভবনের প্রধান প্রাসাদটি তিন তলা বিশিষ্ট, তবে বর্তমানে দুই তলা। কারণ এই জমিদার বাড়ির প্রথম বা নিচের তলাটি মাটি চাপা পড়ে গেছে। এই প্রাসাদে মোট কক্ষ ছিল ত্রিশটির মতো। এখানে ছিল কাছারিঘর, হাতিশালা, ঘোড়াশালা ইত্যাদি নামে বিভিন্ন ভবন।
আরো পড়ুনঃ পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি জয়পুর হাট
লকমা জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকারি
লকমা জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা জমিদার হাদী মামুন চৌধুরী প্রায় ২৫০ বছর আগে এটি নির্মাণ করেছিলেন। তিনি বিয়ে করেছিলেন নওগাঁ জেলার পোরশার বিখাত জমিদার বংশে। লকমা জমিদার বংশের নাতিরা এখনো অনেকে বেঁচে আছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলো বতুল চৌধুরীর ছেলে ওসমান চৌধুরী বর্তমানে বসবাস করছেন পাঁচবিবি রেল লাইনের পাশে একটি জায়গায়।
লকমা জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা
ঐতিহাসিক লকমা জমিদার বাড়ির সব কিছুই এখন ধবংস হয়ে গেছে। বিভিন্ন পরগাছা এই ভবনের উপর গিজিয়ে ছিল। এই জমিদার বাড়ির শুধুমাত্র পাঁচবিবি এলাকা ছাড়া বকী সকল এলাকা ভারত অংশে পড়েছে। ভারতে পড়া অংশগুলো হলো- গয়েশপুর, জামালপুর, চিঙ্গিশপুর, মতাজপুর, সতনূল ও সানাপাড়া।
কয়েক বছর আগে এলাকার কিছু উদ্যোগী যুবক জমিদার বাড়িটির বিভিন্ন জঙ্গল পরিস্কার করে স্থানটি করে তোলেন আকর্ষণীয়। ভ্রমণকারী বা পর্যটকদের বসার জন্য ইট সিমেন্ট দিয়ে বেঞ্চ বানিয় দেন। এলাকাবাসী মনে করেন এই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িটি সংস্কার করা হলে অদূর ভবিষ্যতে এট দেশী- বিদেশি দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব।
ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি পাঁচবিবি উপজেলে সদর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে এবং রাস্তা ঘাট খুব একটা ভালো না হলেও সিএনজি বা অটোরিক্সায় করে খুব সহজেই এখানে জাওয়া যায়। প্রতিদিন বিশেষ করে সরকারি ছুটি ও দুই ঈদের সময় এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এই রাজবাড়ি দেখার জন্য ছুটে আসেন।
বর্তমানে পাঁচবিবি পাঁচমাথা থেকে পাকা রাস্তা রয়েছে কড়িয়া দরগাঘাট পর্যন্ত। এখনা বাকী দরগাঘাট থেকে মাজার পর্যন্ত মাত্র দুই কিলো্মিটার রাস্তা পাকা করা হলে অনেক সুবিধা হতো। তবে এলাকাবাসি মনে করেন কর্তৃপক্ষ এই জমিদার বাড়ির প্রতি নজর দিলে এটি অদুর ভবিষ্যত একটি উন্নত পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব।
কিভাবে যাবেন লকমা জমিদার বাড়ি
প্রাচীন ও ঐতিহাসিক লকমা জমিদার বাড়ি যাওয়ার জন্য ঢাকাসহ দেশের যেকোন স্থান থেকে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে পাঁচবিবি উপজেলা সদরে। এখানে আসার জন্য বাস এবং রেল উভয় ব্যবস্থাই রয়েছে। পাঁচবিবি থেকে সিএনজি, রিক্সা কিংবা অটোতে চড়ে খুব সহজেই লকমা জমিদার বাড়ি যাওয়া যায়।
লকমা জমিদার বাড়ির শেষকথা
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা এই সকল ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আমাদের সকলের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরী। আশাকরি আমরা আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে "ধ্বংস প্রাপ্ত ঐতিহাসিক লকমা জমিদার বাড়ি" সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সকল তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি।
আরো পড়ুনঃ প্রাচীন স্থাপনা লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদ
যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আসাবাদি। বিশেষকরে যারা এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে জানার জন্য ইচ্ছুক, তাঁদের ক্ষেত্রে। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url