মিনি কক্সবাজার এখন হালতি বিল

আরো পড়ুনঃ ভ্রমন করুন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক গাজীপুর 

যেদিকে আপনার দু'চোখ যাবে, দেখতে পাবেন শুধু পানি আর পানি। আর ডেউ এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটে চলা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বসে ভ্রমন পিপাসুদের আনন্দ উল্লাস। এযেন কোন শিল্পীর রঙ তুলিতে আঁকা অপরূপ দিগিন্তরেখায় সবুজের কারুকাজ। 

দূরে অনেক দূরে আপনার চোখে পড়বে সবুজ গাছে ঘেরা কিছু গ্রাম। যা হটাত দেখলে মনে হবে যেন গ্রামগুলিকে ভাসিয়ে রেখেছে দিগন্তজোড়া জলরাশি। নাটোরের হালতি বিলের এই অপরূপ দৃশ্য দেখলে মনে হবে এ যেন কক্সবাজারের প্রতিচ্ছবি। 

বর্তমানে ভ্রমন পিপাসুদের কাছে এটি পরিচিতি পেয়েছে ''মিনি কক্সবাজার'' হিসাবে। হ্যাঁ পাঠকগন আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো নাটোরের হালতি বিল বা মিনি কক্সবাজার সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-

আজকের পাঠ্যক্রম- মিনি কক্সবাজার এখন হালতি বিল

  • হালতি বিলের নাম করণ
  • মিনি কক্সবাজার এখন হালতি বিল
  • হালতি বিলে নৌকা ভ্রমনের সেরা সময়
  • শুস্ক মৌসুমে হালতি বিলের রূপ
  • কিভাবে যাবেন হালতি বিলে
  • হালতি বিলে কোথায় থাকবেন
  • হালতি বিলে কোথায় খাবেন
  • হালতি বিলের শেষকথা

হালতি বিলের নাম করণ

নাটোর জেলা শহর হতে উত্তর- পশ্চিমে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে এই বিলের অবস্থান। প্রায় ৪০ (চল্লিশ) হাজার একরের এই বিলকে বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীর বিল হিসাবে মনে করা হয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমে এই বিলের পানির গভীরতা দাড়া্য প্রায় ১২ (বারো) মিটার এবং শুষ্ক মৌসুমে এর পানির পরিমাণ কমে গেলেও একেবারে পানি শূন্য হয় না। 

লোককথা আছে ব্রিটিশ শাসন আমলে এই বিলে বাস করত ''হালতি'' নামক বিরল প্রজাতির পাখি। আর এই পাখি শিকারের জন্য আসতেন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। সেই থেকে এই বিলটির নাম করণ করা হয়েছে "হালতি''বিল। যা বর্তমানে অধিক পরিচিতি পেয়েছে ''মিনি কক্সবাজার'' নামে।

মিনি কক্সবাজার এখন হালতি বিল

আকারে অনেক ছোট হলেও সব কছুই রয়েছে এখানে। বিশাল জলরাশির ঠিক মাঝ বরাবর রয়েছে পাকা সড়ক। যা বর্ষার মৌসুমে পানিতে ডুবে যায় তখন দেখে মনে হয় যেন কক্সবাজারের মনোমুগ্ধকর মেরিন ড্রাইভ রোড। আবার শুষ্ক মৌসুমে এই রাস্তা দিয়ে চলা চল করে সকল ধরণের যানবাহন। 

বর্ষায় তাঁর রূপ বদলীয়ে রাস্তার উপর যখন পানিতে পরিপূর্ণ হয়, তখন রাস্তাটি রূপ নেয় সমুদ্র সৈকতের। অনেক পর্যটক পানিতে পা ভিজিয়ে হাটতে থাকেন রাস্তা দিয়ে। অনেকে আবার পানির উপর দিয়ে বাইক চালিয়ে উপভোগ করেন সমুদ্র সৈকতের আমেজ। কেউবা গোসল করেন বিলের পানিতে মহা আনন্দে।

সবশেষে নানান রঙ বেরঙ্গে নৌকা সাজিয়ে পানিতে ভেসে উপভোগ করেন পানির সৌন্দর্য। আবার কেউবা ঘুরে বেড়ান নৌকায় চেপে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে। বিলের পশ্চিম প্রান্তে মাধনগর, যেখান দিয়ে বিলের কোল ঘেঁষে রেল লাইন। অনেকে রেল লাইজের পাশ দিয়ে পায়ে হেটে হেটে উপভোগ করেন বিলের পানির নির্মল বাতাস।

হালতি বিলে নৌকা ভ্রমনের সেরা সময় 

হালতি বিল বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই পর্যটকে ভরপুর থাকে। বিভিন্ন ছুটির দিনে বিশেষ করে দু' ঈদে মানুষের ভীড় অনেটাই বেড়ে যায়। তাছাড়া প্রতিদিন বিকাল বেলা মাধনগর রেল লাইন ও পাটুল ঘাটে হাজার হাজার দর্শনার্থীতে কানায় কানায় ভরে উঠে। বর্ষার মৌসুমে বিভিন্ন নদীর পানি বিশেষ করে আত্রাই নদীর পানি প্রবেশ করলে এই বিল হয়ে উঠে দিগন্তহীন সমুদ্রের মতো। 

আরো পড়ুনঃ পদ্মার তীরে গড়ে উঠা রাজশাহীর মনোমুগদ্ধকর টি-বাধ

এই সময় একটু বাতাসেই বিলের পানির ''ডেউ'' আকার ধারণ করে সমুদ্রের। আর এই ডেউগুলো আছড়ে পড়ে খাজুরা, ভূষণগাছা, বিলজোয়ানি, খোলাবাড়িয়া, নুরিয়া, পাটুলসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে। বর্ষার সময় এই সকল গ্রামের চলাচলের একমাত্র বাহন হয়ে উঠে নৌকা। এই বিলে বছরের প্রায় সাতমাস পানিতে ভরপুর থাকে। 

তবে জুন থেকে নভেম্বে পর্যন্ত বেশি পানি থাকায় "হালতি বিলে নৌকা ভ্রমনের সেরা সময়'' এই কয়টি মাস। এই বিলে দীর্ঘ দিন যাবত পানি থাকার ফলে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। যা পর্যটকেরা ভ্রমন শেষে বাড়ী ফেরার পথে এ সকল দেশীয় মাছ কিনে সঙ্গে নিয়ে যান।

শুস্ক মৌসুমে হালতি বিলের রূপ

শুস্ক মৌসুমে (অর্থাৎ ডিসেম্বর হতে এপ্রিল মাস) এলেই এ বিল সম্পূর্ণভাবে পাল্টে ফেলেন তাঁর রূপ বা দৃশ্যপট। এই সময় সারা বিলজুড়ে যেদিকে তাকাবেন দেখতে পাবেন শুধু সবুজ ধানের খেত। আবার অল্প দিন পরেই ভরে উঠে সোনালী রঙ্গে। হালতি বিল যেন মেতে উঠেছে রঙের খেলায়।

মাইলের পর মাইল ধরে সোনালি ধানের শীষ বাতাসে দুলতে থাকে। এই বিলে ধান উৎপাদন হয় চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী। এ সময় জেগে উঠে ডুবন্ত সকল রাস্তাগুলো এবং যানবাহনের ছুটো- ছোটিতে রাস্তাটি হয়ে উঠে ব্যাস্ত তারসঙ্গে হয়ে উঠে এলাকার প্রাণ।

কিভাবে যাবেন হালতি বিলে

বাংলাদেশের যে কোন স্থান হতে সড়ক, রেল কিংবা আকাশ পথে খুব সহজেই নাটোর জেলা শহরে যাওয়া যায়। এর পর নাটোর হতে কিংবা নলডাঙ্গা উপজেলা সদর হতে সিএনজি, রিক্সা বা অটোরিক্সায় জনপ্রতি সর্বচ্চ ৩০ (ত্রিশ) টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন হালতি বিলের প্রবেশ মুখ ''পাটুল ঘাটে''। 

''পাটুল ঘাটে'' আপনি দেখতে পবেন সারি সারি নৌকা বাধা রয়েছে। এবার আপনি ঘন্টা হিসাবে নৌকার ভাড়া চুক্তিকরে এর উপর বসে ঘুরে বেড়ান হালতি বিল। নৌকায় উঠার সময় জেনে নিবেন নৌকায় নিরাপত্তা সামগ্রী আছে কি না।

হালতি বিলে কোথায় থাকবেন

হালতি বিলে থাকার ব্যবস্থা নেই, কিন্তু কাছেই নাটোর জেলা সদরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনি সেখানে থাকতে পারেন। মানভেদে জনপ্রতি আপনার রাত্রি যাপনের জন্য ভাড়া পড়বে ২০০ (দুইশত) টাকা হতে উপরে। তবে আপনি চাইলে ঢাকা থেকে সকালে এসে রাতে ফিরে যেতে পারবেন। রাত ১১ (এগারো) টা পর্যন্ত ঢাকা গামী বাস নাটোরে পাওয়া যায়।

হালতি বিলে কোথায় খাবেন

খাওয়ার জন্য আপনি পাটুল ঘাটে বিভিন্ন ধরণের খাবারের হোটেল পাবেন, সেখানে বিলের বিভিন্ন জাতের টাটকা মাছ দিয়ে অল্প টাকায় পেটপুরে ভাত খেতে পারবেন। আবার আপনি চাইলে নাটোর সদরে ভালোমানের খাবারের হোটেল রয়েছে সেখানে খেতে পারেন। তবে নাটোরের বিখ্যত কাঁচা গোল্লা খেতে এবং পরিবারের জন্য সঙ্গে নিতে ভূলবেন না কিন্তু।

আরো পড়ুনঃ কিশোরগঞ্জের নয়নাভিরাম ও আকর্ষণীয় হাওর

হালতি বিলের শেষকথা

আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের "মিনি কক্সবাজার এখন হালতি বিল'' সম্পর্কে সকল তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে আমরা আশাবাদী, বিশেষ করে "মিনি কক্সবাজার এখন হালতি বিল'' ভ্রমনের ক্ষেত্রে। 

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তবে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ, আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭