কৃমি কি, কেন হয়, প্রতিকার ও চিকিৎসা

আরো পড়ুনঃ কৃ্মির হাত থেকে বাঁচার ঘরোয়া টিপস

আমাদের শিশুরা যে সমস্ত সমস্যায় ভগেন তাঁর মধ্যে অন্যতম হলো কৃমির সমস্যা। আর এটি একটি জটিল সমস্যা। এতে বাধাগ্রস্থ হয় শিশুর শারীরিক বিকাশে। তাই অনেকেই কিন্তু কৃমি কি, কেন হয়, বোঝার উপায় এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানার জন গুগলে সার্চ করে থাকেন।

আর তাই আমরা আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো কৃমি সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। আশাকরি আপনারা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু হতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়বেন এবং যেনে নিবেন এই সম্পর্কে সকল তথ্য। চলুন তাহলে যেনে নেওয়া যাক- 

আজকের পাঠ্যক্রম- কৃমি কি, কেন হয়, প্রতিকার ও চিকিৎসা 

  • কৃমি কাকে বলে
  • কৃমি হওয়ার কারণ সমুহ
  • কৃমি হয়েছে তা বোঝার উপায় সমুহ
  • কৃমি সমস্যা প্রতিরোধের উপায়
  • কৃমির রোগের চিকিৎসা
  • কৃমি কি, কেন হয়, প্রতিকার ও চিকিৎসার- শেষকথা

কৃমি কাকে বলে

কৃমি এক ধরণের পরজীবি প্রাণী যা মানুষের শরীরে বসবাস করে ও সেখানে বংশবিস্তার করে। কৃমির কিন্তু মানুষের শরীরে কোন প্রয়োজন নেই। কৃমি সাধারণত মানুষের খাদ্যনালিতে আবার কখনো কখনো আক্রমণ করে লিভারে। যদি কোন শিশুকে আক্রমণ করে, তবে শিশু খেতে চায়না, পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয় শরীরে এবং শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায় রক্তস্বল্পতার কারণে। 

কিছু কিছু কৃমি আছে যেগুলো মানুষের অন্ত্রে এমনভাবে অবস্থান করে, যা পরিমাণে খুবই অল্প হলেও চুষে নিতে থাকে রক্ত। অনেক সময় কৃমির কারণে শিশুর জন্ডিস হয়ে থাকে লিভারে। সাধারণত দশ বছরের নিচের শিশুরা কৃমিতে বেশি আক্রান্ত হয়।

কৃমি হওয়ার কারণ সমুহ

শিশুরা সাধারণত কৃমিতে বেশি আক্রান্ত হয় অপরিস্কার থাকার কারণে। একজনের কৃমি হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা বেশি ছড়ায় দূষিত পানি, নোংরা খাবার এবং অপরিস্কার হাতে খাবার খেলে। দেখে নেওয়া যাক কৃমি হওয়ার কারণ সমুহ-

  • খালি পায়ে চলাফেরাসহ বাথরুমে গেলে। কৃমি রোগ বেশি পরিমাণে হয় গ্রামের শিশুদের, কারণ গ্রামের শিশুরা সাধারণত খালিপায়ে বেশি চলাফেরা করে।
  • অনেক সময় শিশুরা ধুলা- ময়লায় খেলা ধুলা করার পর সেই হাত বা আঙ্গুল মুখে দেওয়ার কারণে কৃমির ঝুকি বেড়ে যায়।
  • শিশুর অভিভাবকদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে অসেচনতা অভাবে।
  • পায়খানা প্রসাবের পর সঠিকভাবে হাত না ধোয়ার কারণে।
  • খাবার খাওয়ার আগে ভালো করে হাত না ধোয়ার কারণে।
  • বাইরের অপরিস্কার পানি বা খাবার খেলে।
  • খাবার রান্না সঠিকভাবে না হলে।

কৃমি হয়েছে তা বোঝার উপায় সমুহ

কৃমি হলে শিশুর বেশ কিছু লক্ষণ বোঝা যায়। নিম্নে সেই সকল লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারি ভাবে আলোচনা করা হলো-

  • কিছু কৃমি রয়েছে যেগুলোর কারণে সমস্যা হতে পারে অ্যালার্জির।
  • শিশুর খাবারের রুচি একেবারেই কমে যায় এবং শিশু খেতে চায়না।
  • প্রচুর চুলকানি হয় পায়খানার দ্বারে, এমনকি ইনফেকশন হতে পারে।
  • মলত্যাগের সময় মলের সঙ্গে কৃমি দেখতে পাওয়া যায়।
  • শিশুর রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় এবং ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
  • শিশুর বদ হজম ও পেট ফুলে যায়।
  • মাঝে মধ্যেই পাতলা পায়খানা হয়।
  • বমিভাব বা বমি হতে পারে।

কৃমি সমস্যা প্রতিরোধের উপায়

কৃমি যাতে না হয় সেই কারণে আমাদের আগেই সবচেতন উচিৎ। নিম্নে কৃমি থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারি ভাবে আলোচনা করা হলো-
  • অনেক সময় কৃমি থাকে কাঁচা সবজিতে, তাই আমাদের সচেতন হতে হবে কাঁচা খাওয়ার ব্যপারে। ফল বা সবজি যে খাবারই আমরা খাই না কেন তা ভালোকরে পরিস্কার করে খেতে হবে এবং সঠিক নিয়মে রান্না করতে হবে।
  • আপনি নিজে বা শিশু যেকেউ মলত্যাগ করার পর হাত ভালোকরে সাবান দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।
  • ময়লা, আবর্জনা কিংবা ধুলাবালি ধরা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে বা কোন সময় নাড়লে ভালোকরে হাত পরিস্কার করতে হবে।
  • নিয়ম মেনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে পরিবারের সকলকে একসঙ্গে খেতে হবে কৃমিনাশক ওষুধ।
  • খালিপায়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকা এবং নখ ছোট রাখতে হবে। কারণ অনেক কৃমি রয়েছে যেগুলো নখের মাধ্যমে ছড়ায়।
  • যেকোনো কাজে পরিস্কার পানির ব্যবহার করাসহ পান করতে হবে বিশুদ্ধ পানি।

কৃমির রোগের চিকিৎসা 

আমাদের প্রথমেই নজর দিতে হবে শিশু যাতে কৃমি রোগে আক্রান্ত না হয়। আর যদি কোন কারণে কৃমি রোগে শিশু আক্রান্ত হয়, তবে অবশ্যই শরাণাপন্ন হতে হবে চিকিৎসকের এবং খাওয়াতে হবে কৃমিনাশক ওষুধ। একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে কৃমি শুধু শিশুদের হয় না, হতে পারে এটি যেকোনো বয়সের মানুষের।

এইজন্য যে কৃমিতে আক্রান্ত হয়েছে, সে ছাড়াও নিজের পরিবারের সকল সদস্যর সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে যদি গৃহপরিচালিকা থাকে, তাঁর পরিবারকেও একসঙ্গে খেতে হবে কৃমিনাশক ওষুধ। কারণ কোন কারণে যদি একজনের পেটে কৃমি থেকে যায়, তাঁর মাধ্যমে সকলের পেটে কৃমির ডিমগুলো চলে যেতে পারে এবং পুনরাই সকলে হতে পারে আক্রান্ত। তাই কৃমির ওষুধ একা একাই খাওয়া যায় না।

কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো দিনে একটা খেলেই চলে আবার কোনটা দিনে দুইটা খেতে হয়। আবার কিছু ওষুধ একটা খাওয়ার ৭ বা ১৫ দিন পর আরেকটা খেতে হয়। এইজন্য চিকিৎসক কৃমির ধরণ এবং বয়স অনুযায়ী ওষুধ নির্ধারণ করে দিবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কোন ভাবেই পরিবারের সকলেই একসঙ্গে ওষুধ না খেলে কৃমি নির্মূল করা সম্ভাব নয়।

কৃমিনাশক ওষসু এক বছরের বাচ্চাদের খাওয়ানো যাবে। বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে কৃমি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া হয় এক বছরের উপরের বাচ্চাদের। তাই সরকারের কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর প্রতি সকল অভিভাবকের নজর দেওয়া উচিৎ।

কৃমি কি, কেন হয়, প্রতিকার ও চিকিৎসার- শেষকথা

কৃমি সাধারণত সুতা কৃমি, ফিতা কৃমি, গোল কৃমি এবং বক্র কৃমি এই চার প্রকারের হয়ে থাকে। এই কৃমিগুলো সাধারণত খাদ্যনালীতে থেকে খাবার নিচের দিকে নামতে দেয়না, ফলে পেট ফুলে যায়।  আবার পেটে কৃমির পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে বের করা যায় না, ফলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পায়খানা। এমনকি অতিরিক্ত কৃমি হওয়ার ফলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটা অনেক ঝুকির ব্যাপার। আর কৃমির বড় কারণ হলো শিশুর অপুষ্টি। গবেষণায় দেখা গেছে কৃমিতে আক্রান্তের প্রায় ৩৯ শতাংশই দশ বছরের নিচের শিশু। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে শিশুদের কৃমি প্রতিরোধে। আশাকরি আমরা আজকের আর্টিকেলে আপনাদের "কৃমি কি, কেন হ্‌ প্রতিকার ও চিকিৎসা'' সম্পর্কে অনেক তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি।

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তবে এটি অন্যের সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭