বিশ্বের যে সাতটি গাছকে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়
যে কারণে করলা প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখবেন
মানব সভ্যতার শুরু হতেই বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়ে আসছে ফুল, ফল এমনকি গাছের ডাল পর্যন্ত। আমাদের পাঠকদের অনেকেই আছেন যারা ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হয় এমন গাছ বা উদ্ভিদ সম্পর্কে জানার জন্য গুগলে সার্চ করে থাকেন। আর আপনি যদি এই সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আপনি সঠিক যায়গাতেই এসেছেন।
কারণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ''বিশ্বের যে কয়টি গাছকে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়'' সেই কয়টি গাছ সম্পর্কে। আশাকরি আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন এবং যেনে নিবেন গাছগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- বিশ্বের যে সাতটি গাছকে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়
- বিশ্বের যে সাতটি গাছকে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়
- ধর্মীয় ও চিকিৎসায় তুলসী গাছ
- ধর্মীয় কাজে পদ্ম ফুলের গুরুত্ব
- রাস্তাফারি ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ গাজা
- পুদিনা পাতাকে অনেক ধর্মে পবিত্র মনে করা হয়
- হাজার বছরের বেশি বেঁচে থাকে ইয়ু গাছ
- সৃষ্টিশীলতার অন্যমাত্রা পেয়েছে পেয়টে ব্যবহারে
- প্রাচিন কেল্টিক যাজকদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিসলটো
- শেষকথা
বিশ্বের যে সাতটি গাছকে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়
মানব সভ্যতার শুরু হতে বর্তমান পর্যন্ত এমন কিছু গাছ বা উদ্ভিদ কিংবা ফুল আছে, জেগুলোকে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথার অত্যান্ত প্রয়োজনীয় অংশ বিসাবে এবং রোগমুক্তির শক্তিদায়ক মহা পবিত্র হিসাবে মনে করা হয়ে থাকে। রোগমুক্তি দায়ক ও পবিত্র এই সকল গাছ ও ফুলকে অতিত হতে শুরু করে এখন পর্যন্ত পবিত্র ও রোগ মুক্তিদায়ক বনে করা হয়ে থাকে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো এসব গাছের প্রভাব কি ও গুরুত্ব কি এবং কেন পবিত্র মনে করা হয় সে সাতটি গাছ বা উদ্ভিদ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত জানবো।
ধর্মীয় ও চিকিৎসায় তুলসী গাছ
হিন্দু বা সোনাতন ধর্মে বলা হয়ে থাকে কৃষ্ণ ও তাঁর ভক্ত অনুরাগীদের সাহায্য করার জন্য বিন্দাবনের একজন অভিভাবক হিসাবে জন্ম নেন তুলসী পাতা হিসাবে দেবী বিরিন্দাই। আর প্রাচীন গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে তুলসী আকারে কৃষ্ণ নিজেই তাঁকে গ্রহন করেছেন।
ফলে তুলসী গাছের জন্ম যেখানেই হোক না কেন সেটিকে বিবেচনা করা হয় পবিত্র বলে এবং মনে করা হয় বিন্দাবনের মাটি হিসাবে। যেখানে এই গাছটির প্রচুর পরিমাণে জন্ম হয়ে থাকে। প্রতিদিন সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ হিন্দু তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে তুলসী গাছের পাতা বাসায় কিংবা মন্দিরে ব্যবহার করে থাকেন পূজা ও চিকিৎসার কাজে।
ধর্মীয় কাজে পদ্ম ফুলের গুরুত্ব
এমন একটি উদ্ভিদ পদ্ম ফুল যার বিভিন্ন পাপড়ি ধর্মীয় সংস্কারে বা শিক্ষার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে থাকে। চমৎকার এই ফুলটির জীবন হিন্দুদের কাছে উর্বরতা এবং পবিত্রতার প্রতিক। আবার ফুলটিকে বৌদ্ধরাও মনে করে থাকেন পবিত্র হিসাবে। ময়লা ও কাদা মাটিতে জন্ম নেওয়া সুন্দর এই ফুলটি নির্লিপ্ততার অন্যতম প্রতিক।
যদিও কাদার ভেতর শেকড় থাকে এই উদ্ভিদের কিন্তু এর সুন্দর ফুলটি ভেসে থাকে পানির উপরে। প্রচলিত গল্পগাথা রয়েছে পদ্মের জন্ম ভগবান বিষ্ণুর নাভি হতে এবং ব্রক্ষ্মা বসে থাকেন এর কেন্দ্রে। সোনাতন বা হিন্দু ধর্মের অনেকেই বিশ্বাস করেন, পদ্ম ফুলের মত ঈশ্বরের হাত ও পা এবং এর পাপড়ির মত তাঁর চোখ।
যেমন কোমল ফুলের পাপড়ি তেমনই ঈশ্বরের স্পর্শ ও দর্শন। সোনাতন বা হিন্দু ধর্মে বলা হয়ে থাকে প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই রয়েছে পদ্মের পবিত্র আত্মা।
রাস্তাফারি ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ গাজা
রাস্তাফারি গোষ্ঠীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, পবিত্র বাইবেল কিতাবে জীবনের যে গাছের কথা উল্লেখ রয়েছে আর সেই গাছটিই হচ্ছে "গাজা গাছ''। এই কারণে তাদের কাছে পবিত্র এই গাছটি। তবে গাজা গাছের রয়েছে অনেক নাম।
যেমন- তাদের ধর্ম মতে গাছটিকে ডাকা হয় "পবিত্র ভেষজ গাছ" বলে, আবার অনেকে এই গাছকে ডেকে থাকেন ''জ্ঞান গাছ'' বলেও। পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে এই ভেষজ গাছটি জাতির মুক্তির জন্যই। তাদের মতে এই ভেষজ গাছটি তাদের নিয়ে যান ঈশ্বরের কাছাকাছি এবং তাদের বাড়িয়ে দেয় ভেতরের আধ্যাত্নিক শক্তিকে।
আরো পড়ুনঃ বজ্রপাত ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে তালগাছ
তাদের মতে এই উদ্ভিদকে গ্রহণ করা হয়ে থাকে অনেক রীতিনীতির সঙ্গে। যেমন পাইপ বা সিগারেটের মধ্যে ডুকিয়ে যখন এর ধোয়া নেওয়া হয় তখন পালন করা হয় বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
পুদিনা পাতাকে অনেক ধর্মে পবিত্র মনে করা হয়
আমরা ফাস্ট ফুট জাতীয় খাবার পাস্তা বা পিৎজার সময় সসে যে জিনিসটা পাওয়া যায় সবার আগে তা হলো পুদিনা পাতা। কিন্তু গ্রীক চার্চে এবং অর্থোডক্স খ্রিস্টান সম্প্রাদায়ের মধ্যে পুদিনা পাতাকে গন্য করা হয় পবিত্র একটি ভেষজ হিসাবে। তাঁরা মনে করে থাকেন যেখানে পড়েছিল যিশু খ্রিস্টের রক্ত সেখানেই জন্ম হয়েছিল এই গাছের।
এই কারনেই খ্রিস্ট ধর্মের এমনকি তাদের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে দেখা যায় পুদিনা পাতার উপস্থিতি। ধর্ম যাজকরা পানি পবিত্র বা পরিশোধনের করতে ব্যবহার করেন পুদিনা পাতা এবং বিভিন্ন ধর্মসভায় ছিটানো হয় পুদিনা গাছ ভেজানো পানি।
এমনকি চার্চের বিশেষ কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুদিনা গাছ থাকে তাদের ব্যবহৃত ক্রসের সঙ্গে এবং ছোট ছোট ডালপালা দিয়ে দেয়া হয় সকলের হাতে হাতে। অনেকে আবার পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এসব ডালগুলো, যাতে ডালগুলো শেকড় দেয় নতুন করে। আর সেইগুলো আশীর্বাদ হিসাবে রাখতে পারেন নিজেদের বাড়ীতে।
হাজার বছরের বেশি বেঁচে থাকে ইয়ু গাছ
একটি গাছের নাম ইয়ু গাছ, যা সারাবছর সবুজ থাকে আর এই গাছ বেঁচে থাকতে পারে হাজার বছর ধরে। এই গাছটিকে অনেকেই এটিকে অনন্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি এবং পুনর্জন্মা হিসাবে দেখে থাকেন। আর এই কারণে ইয়ু গাছের বিচ্ছিন্ন বা ভেঙ্গে পড়া ডালপালা হতে জন্ম হতে পারে নতুন গাছের জন্ম।
আর এই কারণে অনেকে মনে করেন এটি পুনর্জন্মের উধাহরণ এই গাছটি। ইয়ু গাছ খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের কাছে একটি প্রতিকি গাছ। ইয়ু গাছের অঙ্কুর পবিত্র মনে করে তাঁরা তাদের মৃত্যু স্বজনদের কফিনে দেন এবং এই গাছটি দেখা যায় অনেক চার্চের পাশে।
তবে এই গাছটিকে খ্রিস্ট ধর্মের আবির্ভাবের অনেক আগে হতেই আদিবাসি গোস্টি পূজা করতেন। যেখানে ইয়ু গাছ আগে থেকেই ্ররয়েছে, তাঁরা তাদের প্রার্থনা কেন্দ্র সেই স্থানে নির্বাচন করতেন।
সৃষ্টিশীলতার অন্যমাত্রা পেয়েছে পেয়টে ব্যবহারে
পেয়টা হলো অনেক ছোট আকারের উদ্ভিদ। এক প্রকার কাণ্ডহীন ক্যাক্টাস এটি সাধারণত জন্মে থাকে মেক্সিকো ও টেক্সাসের মরুভূমিতে। সহস্রকাল ধরে প্রাচীন আদিবাসি গোত্রের মানুষজন তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে এই গাছটি ব্যবহার করে আসছে।
আমেরিকান, মেক্সিকান এবং ইন্ডিয়ান অনেক আদিবসি গোত্র বিশ্বাস করেন এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ। যা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগে সাহায্য করবে। এর ব্যবহারের ফলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তৈরী করে এক অন্যরকম মোহ বা আবেশ।
ফলে তাঁরা অনেকেই মনে করেন এর ব্যবহারের কারণে তাঁরা বিচরণ করেন অলৌকিক বা কল্পনার জগতে। তবে পেয়টের অলৌকিক বা কল্পনার জগতের ভক্ত শুধুমাত্র আদিবাসিরাই নন। বর্তমানে এটির ভক্ত ধর্মের রীতির বাইরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্পি এবং লেখকদের মাঝেও।
প্রাচিন কেল্টিক যাজকদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিসলটো
বর্তমানে ক্রিসমাস অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে মিসলটো। প্রাচীন কেল্টিক যাজকদের ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মে এই উদ্ভিদটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসাবে। তাঁরা বিশ্বাস করতেন মিসলটোর মধ্যে সংস্পর্শ রয়েছে সূর্য দেবতা টারানিসের। ফলে মিসলটো যে গাছ বা ডালে জন্ম নেবে সেটিও বিবেচিত হবে পবিত্র হিসাবে।
সবচেয়ে দূরে থাকে শীতকালে যখন সূর্য দেবতা, সেই সময় প্রধান ধর্মযাজক পবিত্র মিসলটো সংগ্রহ করতেন সোনার কাস্তে দিয়ে সাদা কাপড় পরিধান করে ওক গাছ হতে। এই পবিত্র গাছ তাঁরা বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে এবং ব্যবহার করতেন ওষুধ হিসাবে। তাঁরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন এই উদ্ভিদটির রয়েছে জাদুকরি শক্তি।
মিসলটোর একটি অংশ বৃদ্ধি করে মানব শরীরের উর্বরতা, রোগ সারতে এবং রক্ষা করতে পারে ডাইনির ক্ষতির হাত থেকে। তবে এই ধারণাটি অনেকটাই ভুল। কারণ মিসলটো পেটে গেলে হয়ে উঠে অনেকটাই বিষাক্ত।
আরো পড়ুনঃ যে কারণে কালোজিরা নিয়মিত খাবেন
শেষকথা
আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের ''বিশ্বের যে সাতটি গাছকে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়'' সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা অনেক আসাবাদি। আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে উপকারি বলে আপনাদের কাছে মনে হয়, তবে এটি অন্যের কাছে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url