রূপ চর্চায় চায়ের সব টোটকা যেনে নিন
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে আয়ুর্বেদিকের গোপন রহস্য
বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পরেও মনের মধ্যে কেমন যেন একটা খুত খুতে ভাব অনুভূত হয় আর নিজেকে ক্লান্ত মনে হয়। আর এক কাপ গরম চা খেলেই দূর হয় মনের খুত খুতে ভাব ও ক্লান্তি। চা শুধু ক্লান্তি দূর করতেই নয় এর রয়েছে প্রচুর গুণাগুণ। তেমনি রূপচর্চার ক্ষেত্রেও পরিক্ষিত ভূমিকা রয়েছে চা পাতার।
বহুযুগ ধরে চা পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে ত্বক এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে। চা পাতায় রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিসহ তোলকে করে তোলে নরম ও মসৃণ। ত্বককে রক্ষা করে সংক্রমণ ও বাধা দেয় বয়সের ছাপ পড়তে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো এই গরমে ত্বক ও চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে চা পাতার টোটকা'' সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক চা পাতার টোটকা সম্পর্কে-
আজকের পাঠ্যক্রম- রূপ চর্চায় চা পাতার টোটকা যেনে নিন
- ত্বকের যত্ন নিতে চায়ের টোটকা
- ত্বকের যত্নে সবুজ চায়ের টোটকা
- চুলের যত্নে চায়ের টোটকা
- রূপ চর্চায় চায়ের ব্যবহারের নিয়ম
- শেষকথা
ত্বকের যত্ন নিতে চায়ের টোটকা
গরমের মৌসুমে ত্বক পরিস্কার থাকলে রক্ষা পাবেন ব্রণ, এলারর্জি বা ফুসকুড়ির হাত থেকে। তাই আপনার ত্বক পরিস্কার করার জন্য ক্লিনজার হিসাবে বেছে নিতে পারেন চা পাতা। আর এর জন্য আপনাকে প্রথমে আপনি আপনার ধরণবুঝে বেছে নিন একটি ফেসওয়াস এবং এর সঙ্গে যুক্ত করুন চা পাতার গুড়ো এক টিবিল চামচ।
উপাদান দু'ইটি ভালো করে মিশিয়ে আপনার ত্বকে ব্যবহার করুন। পাঁচ মিনিটের মতো অপেক্ষা করে ভেজা হাতে আলতো করে গোটা মুখমন্ডল ঘুসে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিস্কার করে ফেলুন ত্বক। পাশাপাশি ক্লিনজিং পদ্ধতি ব্যবহার করলে ত্বকের আদ্রতা সঠিক রাখে, ত্বকের তেলতেলে ভাব, ঘাম এবং ত্বকে থাকা ময়লা দূর হয়।
এছাড়াও চা পাতা অনেক উপকারি প্রাকৃতিক টোনার হিসাবেও। চা পান করে এর ব্যবহৃত প্যাকটি ফেলে না দিয়ে এটি ঠান্ডা পানিতে ২৫/৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ছেকে নিন। এর সঙ্গে অ্যালোভেরার রস, গোলাপজল ও গ্লিসারিন মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করুন। এটি ভালো রাখার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন এবং প্রতিদিন ব্যবহার করুন। দেখবেন আপনার ত্বক হবে টান টান ও ত্বকে রক্ত সঞ্চলন বেড়ে যাবে।
আবার ব্যবহৃত চা ফেলে না দিয়ে বাড়ীতেই বানিয়ে ফেলুন প্রাকৃতিক স্ক্রাব। এই জন্য আপনাকে ব্যবহার করা টি ব্যাগ, খাটি মধু এক টেবিল চামচ এবং পরিমাণ মত চালের আটা/ গুড়া ভালো করে মিশিয়ে আলতো করে আপনার ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের দাগ দূর করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী।
ত্বকের যত্নে সবুজ চায়ের টোটকা
যারা বাসায় নিয়মিত থাকেন তাদের ক্ষেত্রে মাসে দুই বার স্ক্রাব ব্যবহার করালেও, অফিস কিংবা পড়াশুনার জন্য যারা প্রতিনিয়্ত ঘরের বাইরে যান, তারা সপ্তাহে একবার স্ক্রাব করতে পারেন। আর মাস্ক হিসাবে বেঁচে নিতে পারেন সবুজ চা পাতাকে। এক্ষেত্রে কয়েকটি চায়ের পাতা ফুটিয়ে ঠান্ডা হওয়ার পর তা বেটে বানাতে হবে মিশ্রন।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে সবুজ চা গোলাপজল ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল
এই মিশ্রণটি আপনি আপনার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিস্কার করে ফেলুন। এর ফলে চা পাতায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট অনেক সাহায্য করবে ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রখতে। আবার অনেকে আছেন যারা বিপত্তিতে পড়েন চোখের ফোলা নিয়ে। আর এই জন্য আপনি ব্যবহার করে দেখতে পারেন সবুজ চা/ চা পাতা।
কারণ চায়ের পাতায় থাকা ক্যাফেইন ও ট্যানিন আপনার অনেক সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। তাই চা পান করে তা ফেলে না দিয়ে সেটি ভালো ভাবে ঠান্ডা হলে ১০ মিনিটের মতো রেখে দিন আপনার চোখের উপর। এটি প্রতিদিন ব্যবহার করার ফলে দূর হবে ডার্ক সার্কেল।
চুলের যত্নে চায়ের টোটকা
আপনারা সললেই চুলের যত্ন নিতে অনেক নামীদামি পণ্য ব্যবহার করেন কিন্তু "দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া, দুই পা ফেলিয়া ...,।'' কারণ আপনার হাতের কাছেই রয়েছে ঘরোয়া সমাধান। আমাদের প্রতিদিন চুলের কোসগুলোতে শিকার হয় বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার।
চায়ে রয়েছে এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ। আর এই পদার্থটি বেশ কার্যকর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে। তাছাড়া চুলের যত্নে চা পাতার নির্যাস বিভিন্ন উপকারে আসে। এমনকি কাজ করে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের।
গরমের মৌসুমে বেশিরভাগ সময় চুল ঘামে, এর ফলে নরম হয়ে যায় চুলের গোড়া। এই জন্য চায়ের পাতা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ভালোভাবে ছেঁকে একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে, চুলে ভালো করে ম্যাসেজ করে ১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ভালো করে পরিস্কার করে ফেলতে হবে। আর এটি প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
চা পাতা সিদ্ধ করার পর লিকার ঘন হলে এটি আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহার করার পর ৫ মিনিট রেখে ভালো করে পরিস্কার করে ফেলুন। এতে আপনার চুল কোমল এবং উজ্জল হয়ে উঠবে। এছাড়াও সেদ্ধ চা পাতার নির্যাস হেনার সঙ্গে মিশ্রন করে চুলে লাগানো যায়। এর ফলে আপনার প্রাকৃতিক চুল ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হবে চুলের গোড়া।
রূপ চর্চায় চায়ের ব্যবহারের নিয়ম
চা শুধু আমাদের শরীরকে সতেজ রাখে না পাশাপাশি রূপ সৌন্দর্য বাড়াতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিম্নে রূপ চর্চায় চায়ের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে চায়ের লিকারের তুলনা মেলাভার। এর জন্য চায়ের লিকারকে কড়া করে তাতে তোয়েলা ভিজিয়ে মুছে নিন আপনার ত্বক। নিয়মিত এই ভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলে সেরে যাবে ত্বকের দাগ।
- শ্যাম্প ব্যবহার করার পর চায়ের লিকার ভালো কন্ডশনারের কাজ করে। এর জন্য আপনি এককাপ চায়ের লিকারের সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল হবে মসৃণ ঝলমলে উজ্জল।
- টিব্যাগ ভিজিয়ে চোখ বন্ধ করে চোখের উপর ১০ মিনিট রেখে দিন। ফলে চায়ের পাতায় থাকা ক্যাফেইন দূর করতে সাহায্য করবে চোখের ফোলা ভাব ও ডার্ক সার্কেল।
- চায়ের লিকার ত্বক পরিস্কার রাখতে কাজ করে টোনার হিসাবে।
- স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহার করা চা শুকিয়ে ব্যবহার করুন।
- গ্রিন চা ধরে রাখে ত্বক ও ঠটের আর্দদ্রত।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url