ডুমুর বা তানজিমের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
আরো পড়ুনঃ কচু শাকের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
ডুমুর বা তানজিম বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খাদ্য। নিঃসন্দেহে ডুমুর একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর খাদ্য। এই উপকারি খাদ্যটি আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা আবশ্যক। এই উপকারি খাবারটি আমরা বিভিন্ন ভাবে খেতে পারি। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ডুমুর বা তানজিমের সম্পর্কে জানার জন্য গুগলে সার্চ করে থাকেন। আপনিও যদি খোঁজ করে থাকেন তবে সঠিক জায়গাতেই এসেছেন।
কারণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো "ডুমুরের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ'' সম্পর্কে। আশাকরি আপনারা আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পুরোটাই পড়ে ফেলবেন। তাহলে জানতে পারবেন ডুমুর বা তানজিমের সম্পর্কে অনেক তথ্য। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ডুমুরের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
- ডুমুর বা তানজিম খাওয়ার পদ্ধতি
- ডুমুর হৃৎপিণ্ডের জন্য উপযুক্ত খাবার
- ডুমুর হ্রাস করে ক্যানসারের সম্ভাবনা
- ডুমুর বার্ধক্য ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- ডুমুর প্রতিরোধ করে কেডনির পাথর
- ডুমুর সহায়তা করে ওজন নিয়ন্ত্রণে
- ডুমুর হাড়ের স্বাস্থ্যকে করে উন্নত
- ডুমুর রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
- ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সহায়ক
- ডুমুর প্রজনন ব্যবস্থাকে করে সচল
- প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে থাকা পুষ্টিগুণ
- ডুমুর খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
- শেষকথা
ডুমুর বা তানজিম খাওয়ার পদ্ধতি
ডুমুর বা তানজিম সারা বছর সংরক্ষণ করার জন্য, প্রথমে সূর্যের তাপে ভালোভাবে শুকিয়ে এটি সারা বছর সংরক্ষণ করতে পারবেন এবং আপনার যখন ইচ্ছে আপনি খেতে পারবেন। অনেকেই এই ফলটি খেতে ভালোবাসেন ডুমুরের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে শরবত বানিয়ে।
আর এই শরবত বানানোর জন্য আপনাদের আগে ডুমুর পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে, এরপর পরিমাণমত দুধ মিশিয়ে বানিয়ে নিন সুস্বাদু শরবত। এমনকি আপনারা এটি খেতে পারেন ডুমুর কেটে সালাত বানিয়ে। নিম্নে ডুমুরের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
ডুমুর হৃৎপিণ্ডের জন্য উপযুক্ত খাবার
নিয়মিত ডুমুর খাওয়ার ফলে আপনার রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড এর পরিমাণ কমে। হৃদরোগের জন্য অনেকটাই দায়ী ট্রাইগ্লিসারাইড। কারণ ট্রাইগ্লিসারাইড জমাট সৃষ্টি করে রক্তনালীর মধ্যে, ফলে হতে পারে আপনার হার্ড অ্যাটাক।
ডুমুর হ্রাস করে ক্যানসারের সম্ভাবনা
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ডুমুর হওয়ার কারণে এটি সাহায্য করে ক্রনিক এবং র্যাডিকেল প্রদাহ নিয়ন্ত্রনে। র্যাডিকেল বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্য অনেকটাই দায়ী, যেমন- ডায়াবেটিস, ক্যানসার এবং হৃদরোগ ইত্যাদি। যার ফলে ডুমুরকে গণ্য করা হয় দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম একটি প্রতিরোধকারি হিসাবে।
ডুমুর বার্ধক্য ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
ডুমুরে বা তানজিমে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে বলে সোডিয়ামের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সাহায্য করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে। পর্যাপ্ত ইস্ট্রোজেন ও লোহা সরবরাহ করার মাধ্যমে সহায়তা করে বয়সের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে। ডুমুর হরমোন গুলোকে পরীক্ষা ও সাহায্য করে আপনার শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে। ডুমুর আরো সাহায্য করে চুল, ত্বক এবং নখ ভালো রাখতে। ডুমুরের পেস্ট বানিয়ে মুখে ব্যবহার করেলে এটি সাহায্য করে ব্রণ প্রতিরোধে।
আরো পড়ুনঃ ত্বক ও চুলের যত্নে সজনা পাতার গুড়া
ডুমুর প্রতিরোধ করে কেডনির পাথর
ডুমুর ফুটিয়ে নিন পানিতে এবং কিছুদিন এই পানি নিয়ম করে পান করুন। এই পানি সাহায্য করবে কিডনির পাথরের হাত থেকে। এ বিষয়ে আপনি আরো জানার জন্য পরামর্শ নিতে পারেন পুষ্টিবিদ এর সঙ্গে।
ডুমুর সহায়তা করে ওজন নিয়ন্ত্রণে
ডুমুর ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হওয়ার ফলে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডুমুরকে আপনি হালকা খাবার বা টিফিন হিসাবে বেচে নিতে পারেন। ডুমুর খেয়ে আপনার পেট ভরার পাশাপাশি আপনার শরীরকে প্রদান করবেন যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি।
ডুমুর হাড়ের স্বাস্থ্যকে করে উন্নত
মজবুত এবং স্বাস্থ্যকর হাড়ের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম। ডুমুর হলো প্রাকৃতিক ক্যালসিয়ামের অন্যতম প্রধান উৎস। বাজারের দুগ্ধজাত যে পর্ণগুলি হতে ক্যালসিয়াম পাওয়া গেলেও সেটি কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে নয়। তাই প্রাকৃতিক উৎস ডুমুর খাওয়ার মাধ্যমে এই ঘাটতি মেটানো সম্ভাব।
ডুমুর রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
ডুমুরে যে পরিমাণ ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড থাকে সেটি সহায়তা করে ডায়াবেটিক রক্তের শর্করা কমাতে। এছাড়াও ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে যা, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে।
ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সহায়ক
ডুমুর ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে এটি ভালো কাজ করে অন্ত্রের গতিশীলতার ক্ষেত্রে এবং প্রতিরোধ করতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। তাছাড়া ডুমুরে থাকা ফাইবার সাহায্য করে অন্ত্র আন্দোলনে।
ডুমুর প্রজনন ব্যবস্থাকে করে সচল
ডুমুর ফলে ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও দস্তার মত উন্নত খনিজ দ্বারা ভরপুর হওয়ায় অবদান রাখে প্রণবন্ত ও উর্বরতায়। ডুমুর ভিজিয়ে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন বা গর্ভ ধারণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই এই ফলটি আপনার খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন এক্ষুনি।
প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে থাকা পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো ডুমুরে পাওয়া যায় ২৪৯ কিলোক্যালরি। নিম্নে ১০০ গ্রাম ডুমুরে থাকা পুষ্টিগুণ ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো-
পুষ্টির নাম পুষ্টির পরিমাণ
- খাদ্য আঁশ ১০ গ্রাম।
- প্রোটিন ৩ গ্রাম।
- ফ্যাট ১ গ্রাম।
- শর্করা ৫৪ গ্রাম।
- ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম।
- পটাসিয়াম ৪৬০ মিলিগ্রাম।
ডুমুর খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
- ডুমুরের আঠায় অনেকের এলার্জি হয়।
- পেট খারাপ হতে পারে বেশি পরিমাণে ডুমুর খেলে।
- কিছু ওষুধের সঙ্গে ডুমুর খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- ডুমুর খেলে রক্ত পাতলে হয়, তাই অস্ত্রোপাচার করলে ডুমুর না খাওয়াই ভালো।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url