কিশোরগঞ্জের নয়নাভিরাম ও আকর্ষণীয় হাওর
আরো পড়ুনঃ মুর্শিদ জামাই পাগলের মাজার
বাংলাদেশ হলো প্রকৃতির অনাবিল অকৃত্রিম ও অফুরন্ত সৌন্দর্যের লীলাভূমি। তাইতো মনেপড়ে কবি জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত সেই বাক্য "বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই পথিবীর রূপ খুঁজিতে চাই না আর"। বাংলাদেশের সেই অবিচ্ছেদ্য সৌন্দর্যের অনেকটাই যেন রয়েছে কিশোরগঞ্জের মিঠামাইন, নিকলী, ইটনা এবং অষ্টগ্রামের হাওর গুলোতে।
হ্যাঁ আমাদের প্রাণ- প্রিয় পাঠক- পাঠিকাগণ আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ''কিশোরগঞ্জের নয়নাভিরাম ও আকর্ষণীয় হাওর'' প্রসঙ্গে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক কিশোরগঞ্জের হাওর সম্পর্কে-
আজকের পাঠ্যক্রম- কিশোরগঞ্জের নয়নাভিরাম ও আকর্ষণীয় হাওর
- নৌকা ভ্রমনের আকর্ষণীয় স্থান কিশোরগঞ্জের হাওর
- কিশোরগঞ্জ ভ্রমনের উপযুক্ত সময়
- কিশোরগঞ্জ হাওরের আকর্ষণীয় স্থান সমুহ
- কিভাবে যাবেন কিশোরগঞ্জ হাওর
- কোথায় থাকবেন কিশোরগঞ্জ হাওর গিয়ে
- কি খাবেন কিশোরগঞ্জ হাওর গিয়ে
- শেষকথা
নৌকা ভ্রমনের আকর্ষণীয় স্থান কিশোরগঞ্জের হাওর
অসংখ্য নদী, হাওর ও বিলে ভরপুর ভাটির দেশ কিশোরগঞ্জ জেলা। কালনী, মুগড়া, ধনে, বাওলাই আর পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের মেঘনার মত নদী বয়ে গেছে এই জেলার উপর দিয়ে। দেখলে মনে হবে যেন মহান আল্লাহ যেন নিজহাতে এমনভাবে সাজিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের এই জেলাকে। সবুজ শ্যামল বাংলার আসল রূপ দেখতে হলে আপনাদের যেতে হবে এই হাওর গুলোতে। তাইতো নৌকা ভ্রমনের আকর্ষণীয় স্থান হলো কিশোরগঞ্জের হাওর। এই হাওরে বর্ষাকালে চারিদিকের পানির মনোমুগ্ধকর কলকল ধনি।
কিশোরগঞ্জ ভ্রমনের উপযুক্ত সময়
এই সময় কিশোরগঞ্জ হাওরের যেই দিকে দু'চোখ যায় দেখা যাবে শুধু দেখা যাবে পানি আর পানি। জলজ সৌন্দর্য এর স্বাদ প্রাণভরে উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত সময় হলো বর্ষা মৌসুম। এই সময় হাওরের মেঘে ঢাকা আকাশের সাজগোজ আর আয়নার মত ঝকঝকে চকচকে হাওরের পানি দেখে যেকোনো ভ্রমন পিপাসুদের মন আনন্দে ভরে উঠে। অনেকদূর কিছু গ্রাম দেখে গেলে মনে হবে যেন সেই গ্রামগুলি পানিতে ভেসে আছে।
হাওরে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় হাওরের মাঝে থাকা গ্রামের বাড়ীগুলো অনেক সুন্দর লাগে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে হাওরে মনোমুগ্ধকর জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। এক কাথায় বলা যায়, কিশোরগঞ্জের এই হাওরগুলি অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। বর্ষা মৌসুমে এই হাওরগুলিতে ঘুরতে আসা ভ্রমনকারিরা মনোরম সৌন্দর্যকে তুলোনা করেন কক্সবাজারের মনোরম সেই দৃশ্যের সঙ্গে।
আরো পড়ুনঃ জমিদার গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ী
বর্ষার সময় সারা বাংলাদেশ হতে এমনকি বিদেশের অনেক পর্যটক ভিড় জমান এই হাওরগুলোকে দেখার জন্য। হাওরে জুন মাস হতে পানি আশা শুরু করে নভেম্বার মাস পর্যন্ত। এই ৬ (ছয়) মাস পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। এই দীর্ঘ ৬ (ছয়) মাস হাওরে অনেক বেশী পর্যটকদের ভিড় থাকে। এছাড়াও ২ (দুই) ঈদে ও সরকারী ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত থাকে গোটা হাওর এলাকা।
কিশোরগঞ্জ হাওরের আকর্ষণীয় স্থান সমুহ
হাওরের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে সুবিশাল রাস্তা। মোটরবাইক কিংবা অটো রিক্সায় চড়ে ভ্রমনের সময় অনেক কাছ হতে উপভোগ করা যায় মনোমুগ্ধকর হাওরের রূপ। সড়ক বা বাঁধে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায়, সাগরের রুপ ধারণ করা হাওরের সৌন্দর্য। আপনার মনকে উদ্বেলিত করে তুলবে রাস্তায় আছড়ে পড়া নদীর পানির কলকল ধ্বনি। এই হাওরে আরো যা দেখতে পাবেন-
- নির্মাণাধীন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ সেনানিবাস।
- মিঠামাইনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দহলিজ।
- ইটনা, মিঠামাইন, অষ্টগ্রাম সংযোগ সড়ক (জিরো পয়েন্ট)
- ৪৫০ বছরের পুরোনো দিল্লির আখড়া।
- ৪৫০ বছরের পুরোনো দাঁড়িয়ে থাকা হিজল গাছ।
- ধনপুরের হাওর।
- শনির হাওর।
- ১৬ শতকের পাঁচ গম্বুজবিশিস্ট মসজিদ।
- হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর।
- মোহরকোনা বেড়িবাধ।
- পাহাড় খার মাজার।
- গুরই আখড়া।
- গুরই শাহী জামে মসজিদ।
কিভাবে যাবেন কিশোরগঞ্জ হাওর
বাসযোগে- রাজধানী ঢাকার মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গোলাপবাগ হতে বাস সরাসরি কিশোরগঞ্জ যায়। এসকল বাস কিছুক্ষণ পরপর ছেড়ে যায়। কিশোরগঞ্জ বাসস্টান্ড হতে অটো রিক্সায় ১০ (দশ) মিনিটের রাস্তা একরামপুরে। এরপর সিএনজি বা অটো রিক্সায় করে আপনাদের গন্তব্য স্থান চামড়াঘাট। এরপর ট্রলারে করে ঘুরুন আপনাদের ইচ্ছা মতো।
রেলযোগে- কমলাপুর হতে প্রতিদিন সকাল ৭.৪৫ মিনিট, ১০.৪০ মিনিট ও সন্ধ্যা ৬.৪০ মিনিটি ট্রেন কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এতে আপনাদের সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। কিশোরগঞ্জ বাসস্টান্ড হতে অটো রিক্সায় ১০ মিনিটের রাস্তা একরামপুরে। এরপর সিএনজি বা অটো রিক্সায় করে আপনাদের গন্তব্য স্থান চামড়াঘাট। এরপর ট্রলারে করে ঘুরুন আপনাদের ইচ্ছা মতো। আবার আপনারা চাইলে অটো রিক্সা বা মোটর বাইকে করে ঘুরতে পারবেন অষ্টগ্রাম, মিঠামাইন ও ইটনা মহাসড়কে।
কোথায় থাকবেন কিশোরগঞ্জ হাওর গিয়ে
মিঠামাইন ও নিকোলিতে উপজেলা ডাক বাংলোসহ অনেক উন্নত ও মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনারা এই সকল আবাসিকে খুব নিরাপদে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। আর যদি আপনারা আরো ভালো মানের আবাসিকে থামতে চান তাহলে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে অথবা মিঠামাইন প্রেসিডেন্ট রিসোটে থাকতে পারেন।
কি খাবেন কিশোরগঞ্জ হাওর গিয়ে
অষ্টগ্রাম, ইটনা বা মিঠামাইন বাজারে রয়েছে অনেক মান সম্মত খাবারের হোটেল। এই হোটেলগুলোতে আপনারা ১৫০টাকা হতে ৪০০টাকা খরচ করে হাওরের নানান প্রকার তাজা মাছ দিয়ে খেতে পারবেন পেটভরে ভাত। আবার নিকলীতে রয়েছে হোটেল সেতু ও হোটেল ক্যাফেসহ অনেক হোটেল। এই হোটেলগলোতোও আপনারা খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ প্রাক মুসলিম যুগের উন্নত নগরীর অবস্থান
শেষকথা
আশাকরি আমরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে " কিশোরগঞ্জের নয়নাভিরাম ও আকর্ষণীয় হাওর" সম্পর্কে অনেক তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাকরি। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের হাওর ভ্রমনের ক্ষেত্রে। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url