চুল ভালো রাখতে ১০ সাবধানতা
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে আনারসের তৈরী জাদুকরী মাস্ক টিপস
সুন্দর চুল মানুষকে করে তোলে আরো সন্দর। তাই প্রিতিটা মানুষেরই কাম্য সুন্দর চুল। আর সে কারনেই মানুষ যুগের পর যুগ ধরে চুল ভালো রাখার জন্য ভীষণ আগ্রহী। অনেকে আবার চুলের যত্ন নিতে গিয়ে এমন কিছু করে ফেলে, যা হিতে বিপরীত হয়ে যায়। আর চুলের যত্ন নিতে কোনটা ভূল আর কোনটা সঠিক এ বিষয়ে আমাদের অনেকেরই ধারণা খুব কম রয়েছে।
মূল কথা হলো আমরা না জানার কারণে নিজের অজান্তেই ভূল করে ফেলি, যা আমাদের চুলের অনেক ক্ষতি হয়। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ''চুল ভালো রাখতে ১০ সাবধানতা'' সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক সাবধানতা সম্পর্কে-
আজকের পাঠ্যক্রম- চুল ভালো রাখতে ১০ সাবধানতা
- চুল ভালো রাখতে তেলের ব্যবহার
- চুল ভালো রাখতে শ্যাম্পুর ব্যবহার
- চুল ভালো রাখতে গরম পানির ব্যবহার
- চুল ভালো রাখতে নিয়মিত চুল পরিস্কার করা
- চুল ভালো রাখতে ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার
- চুল ভালো রাখতে চিরুনি ব্যবহার
- চুল ভালো রাখতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার
- চুল ভালো রাখতে ভেজা চুলে না ঘুমানো
- চুল ভালো রাখতে চুল বেধে ঘুমানো
- চুল ভালো রাখতে খাদ্যাভাস
- চুল ভালো রাখতে শেষকথা
চুল ভালো রাখতে তেলের ব্যবহার
আমাদের আগের যুগের মানুষের ধারণা ছিল চুল ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন চুলে তেল ব্যবহার করতে হবে। তাহলে চুল হবে ঘন, লম্বা এবং কালো। এই ধারণাটি এখন ভূল প্রমানিত হয়েছে। কারণ চুল এক্সপার্টদের মতে প্রয়োজন নাই প্রতিদিন চুলে তেল ব্যবহার করার। প্রতিদিন চুলে তেল ব্যবহার করার ফলে মাথার ত্বক হয়ে যায় অতিরিক্র তেলাক্ত।
আর চুল ভালো রাখতে তেলাক্ত ত্বক কোনভাবেই ভালো নয়। চুলকে ঘন, লম্বা এবং কাল স্বাস্থ্য উজ্জল ও ঝলমলে করার জন্য সপ্তাহে একবার চুলের গোড়া হতে শুরু করে পুরো চুলে লাগাতেই হবে তেল। আর যদি আপনার চুল ভঙ্গুর ও শুস্ক হয় তবে সেক্ষেত্রে সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার তেল ম্যাসেজ করলে ভালো হয়।
চুল ভালো রাখতে শ্যাম্পুর ব্যবহার
আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে চুল ভালো রাখার জন্য সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন করার পাশাপাশি সঠিক ব্যবহারের দিকে। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে আপনার চুলে কতটা শ্যাম্পু প্রয়োজন ঠিক ততটাই ব্যবহার করতে হবে। শ্যাম্পু আপনার হাতের তালুতে নিয়ে হালকাভাবে ম্যাসেজ করতে হবে। তবে সব সময় চেষ্টা করবেন শ্যাম্পু পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে।
কারণ ভেজা চুলের গোড়া থাকে অনেকটাই নরম, তাই শ্যাম্পু হাতদিয়ে জোরে ম্যাসেজ করতে গিয়ে চুল পড়ে যেতে পারে। তবে চুল ভালো রাখার ক্ষেত্রে কখনো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না কন্ডিশনার ব্যবহার করার কথা।
চুল ভালো রাখতে গরম পানির ব্যবহার
চুল ভালো রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চুলে ব্যবহার কারা পানির সঠিক তাপমাত্রা। আপনাকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে চুল পরিস্কার করা যাবেনা। কারণ অতিরিক্ত গরম পানি অ্যাক্টিভ করে মাথার ত্বকের তেল গ্লান্ডগুলোকে।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের উজ্জলতা বাড়ানোর ঘরোয়া পাঁচ ফেইস প্যাক
ফলে আপনি যতই আপনার চুল পরিস্কার করেন না কেন চুলে তৈরী হবে আঠালো ভাব। মাথার ত্বক এবং চুলের জন্য সবসময় ব্যবহার করতে হবে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি। তবে আপনার যদি গরম পানি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়, তাহলে কুসুম বা হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।
চুল ভালো রাখতে নিয়মিত চুল পরিস্কার করা
অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করেন। আবার অনেকে আছেন সপ্তাহে হয়তো একবার বা দুইবার চুলে শ্যাম্পু করে থাকেন। আপনার মাথার ত্বক এবং চুলের ধরণ বুঝে নির্ভর করবে আপনার চুলে কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে এবং সপ্তাহে কয়বার করা লাগবে।
কারণ আপনার মাথার ত্বক যদি হয়ে থাকে তেলাক্ত, তবে আপনার প্রয়োজন ফ্রিকোয়েন্টলি চুল পরিস্কার করা। আবার এই সমস্যা যদি আপনার না থাকে, তাহলে ঘন ঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে মাথার ত্বক আপনার হয়ে যেতে পারে রুক্ষ। তাই নিজের চুল এবং ত্বকের ধরণ বুঝে বেচে নিতে হবে শ্যাম্পু্র ব্যবহারকে।
চুল ভালো রাখতে ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার
আমাদের চুল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। তাই শ্যাম্পু ব্যবহারের পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করা দরকার। আর এই ক্ষেত্রে আপনার ত্বক ও চুলের ধরণ বুঝে আপনার পছন্দের মাস্ক করতে পারেন ব্যবহার। আপনি চাইলে চুলের ধরণ দেখে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে পারেন আপনার ঘরের তৈরী ময়েশ্চারাইজার।
আবার ভেজিটেবল গ্লিসারিন এর সঙ্গে সম পরিমাণের শ্যাম্পু মিশিয়ে চুলে স্প্রে করতে পারেন গোসলের আগে কিংবা পরে। এছাড়াও এটি শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারের ফলে আপনার চুল হয়ে উঠবে সফট আর সিল্কি।
চুল ভালো রাখতে চিরুনি ব্যবহার
চুল ভালো রাখতে চুল আচড়ানোর ক্ষেত্রে ভালো চিরুনি দিয়ে এবং সঠিকভাবে চুল আচড়ানোও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বার বার এবং জোরে জোরে চুল আচড়ানো মোটেও ঠিক নয়। ভেজা ও জট বাধানো চুল আচড়ানোর ক্ষেত্রে মোটা দাঁতের চিরুনী ব্যবহার করা উচিৎ। এতে চুল সহজে গোছানো যায় এবং ভাঙ্গা রোধ হয়। অপরদিকে চিকন দাঁতের চিরুনিতে চুল বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
চুল ভালো রাখতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার
সাধারনভাবে চুল সবসময় শুকানো ভালো। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিভিন্ন কারণে চুল শুকাতে প্রয়োজন হয় হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করার। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে ভেজা চুলে হেয়ার ড্রায়ারের ব্যবহার করার ফলে এর হিট করে দিতে পারে চুলকে ড্যামেজ।
আর এক্ষেত্রে হেয়ার ড্রায়ার হিট কমিয়ে ব্যবহার করুন এবং জেল অথবা ভালো হিট প্রোটেক্টিং ব্যবহার করুন। একটি বিষয়ে সব সময় খেয়াল করবেন যেন মাথার তালুতে হেয়ার ড্রায়ার না লাগে। সব সময় সাবধানে দূরে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চুল শুকান।
চুল ভালো রাখতে ভেজা চুলে না ঘুমানো
আমদের অনেকের গোসল করে বা চুল পরিস্কার করার পর ভেজা চুলে ঘুমানোর অভ্যাস রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ভেজা চুলে ঘুমানো ফলে মারাত্নক ক্ষতি করে চুলের। চুল ভেজা অবস্থায় শুয়ে পড়লে চুল শুকা্তে পারে না। যার কারণে চুলের গোড়া নরম হয় এবং চুল পড়া প্রবণতা বেড়ে যায়।
এছাড়াও চুল পড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো সঠিকভাবে চুল না শুকানো। তাই চুলকে ক্ষতির হাত থেকে বাচার জন্য আমাদের সকলেরই ভালোভাবে চুল শুকানোর পর চুল বেধে ঘুমানো উচিত।
চুল ভালো রাখতে চুল বেধে ঘুমানো
চুল ভালো রাখতে অবশ্যই চুল বেধে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিৎ। কারণ চুল খুলে ঘুমানোর অভ্যাস মোটেই ভালো নয়। চুল খোলা অবস্থায় ঘুমালে চুল জমাট বাঁধে, যার ফলে চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই চুল যাদের বড় তাদের চুল বেধে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিৎ। আর যাদের চুল ছোট তাঁরা ঘুমানোর সময় মাথায় কাপড় পেচিয়ে ঘুমাতে হবে। চুল ভালো রাখতে এ সকল অভ্যাস মেনে চলা উচিৎ।
চুল ভালো রাখতে খাদ্যাভাস
আমরা যা খাই তা সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের চুল ও ত্বকের উপর। অনেক খাবার আছে যেগুলো খেলে চুল উজ্জল ও সুন্দর করে তেমনিভাবে অনেক খাবার আছে যা চুলের ক্ষতি করে। অতিরিক্ত চিনিজুক্ত খাবার যেমন সৃষ্টি করে ইনফ্ল্যামেশন এবং ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে চুলের ফলিকলকে। চুল ভালো রাখতে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিৎ খাবার তালিকা ঠিক রাখা্র প্রতি।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে শসা ব্যবহারে ১২ উপকারিতা
চুল ভালো রাখতে শেষকথা
আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের "চুল ভালো রাখতে ১০ সাবধানতা'' সম্পর্কে অনেক তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। আমাদের সকলেরই উচিৎ বাজারের গতানুগতিক সাজগোজের সামগ্রীর উপর নির্ভরশীল না থেকে আমাদের হাতের কাছে থাকা প্রকৃতি প্রদত্ত জিনিসের দ্বারা তৈরী উপাদানের প্রতি নজর দেওয়া।
আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি আপনাদের পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভূলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url