শাপলার রাজ্য সাতলার সাজ অপরূপ

আরো পড়ুনঃ বাউল সম্রাট লালন শাহ এর মাজার বা কবরস্থান

বাংলাদেশের প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার শাপলার রাজ্য। হ্যাঁ আমাদের প্রাণ- প্রিয় পাঠক- পাঠিকাগণ আপনারা অনেকেই গুগোলে সাদা, বেগুনি ও লাল রঙ্গের বাহারী সাতলা গ্রামের খোজ করে থাকেন। আর আপনিও সদি ওই দলের সদস্য হয়ে থাকেন, তাহলে সঠিক জায়গাতেই এসেছেন।

কারণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো শাপলার রাজ্য সাতলা গ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আমরা আশাকরি আপনারা যদি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু হতে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই মনোযোগ সহকারে পড়েন, তাহলে জানতে পারবেন এই গ্রাম সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক-

আজকের পাঠ্যক্রম- শাপলার রাজ্য সাতলার সাজ অপরূপ

  • শাপলার রাজ্য কোথায় অবস্থিত 
  • শাপলার রাজ্য নাম করণের কারণ
  • শাপলার রাজ্য সাতলার সাজ অপরূপ
  • নৌকা ভ্রমন শাপলার রাজ্য সাতলা
  • সাতলার বিলের শাপলার ইতিহাস
  • জীবন জীবিকায় শাপলা ফুল
  • কিভাবে যাবেন
  • কোথায় থাকবেন
  • কোথায় খাবেন
  • শেষকথা

শাপলার রাজ্য কোথায় অবস্থিত 

বরিশাল বিভাগীয় শহর হতে প্রায় ৬০ (ষাট) কিলোমিটার দূরে শাপলা ফুলের রাজ্য সাতলা গ্রামটি উজিরপুর উপজেলার অবস্থিত। 

শাপলার রাজ্য নাম করণের কারণ

পূর্বে এই গ্রামের নাম অনুসারে বিলের নাম করণ করা হয়েছিল সাতলা বিল। পরবর্তীতে এই বিলে শাপলার রাজত্বের ফলে বিলটি এখন অধিক পরিচিত শাপলা বিল নামে।

শাপলার রাজ্য সাতলার সাজ অপরূপ

চক চকে পানিতে ভরপুর এই শাপলা গ্রামটি রঙ্গিন হাস্য উজ্জ্বল প্রাকৃতিকভাবেই। সাদা, বেগুনি আর লাল টুকটুকে শাপলা এই বিলের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রতি বছরের জুলাই হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এই ছোট্ট গ্রামটি সন্ধ্যা নদীর একটি প্লাবন ভূমি ছিলো যা সবার কাছে এখন শাপলা রাজ্য হিসাবে পরিচিত। বর্ষার পানিতে গ্রামের নিম্নাঞ্চল যখন পানিতে ডুবে যায়, তখনই ফুটতে থাকে শাপলা ফুল। 

এই গ্রামে যাদের বাড়ি বিলের মাঝে তাদের যাতায়াতের একমাত্র বাহন তখন নৌকা। এক পলক দেখলে আপনাদের মনে হবে পুরো বিলজুড়ে বিছানো হয়েছে লাল শাপলার চাদর। এই বিল জুলাই মাস হতে নভেম্বর মাস এর মধ্যে দেখে মনে হবে "শাপলার রাজ্য সাতলার সাজ অপরূপ"।

নৌকা ভ্রমন শাপলার রাজ্য সাতলা

সাতলার বিলে নৌকা ভ্রমনের জন্য ছোট আকারের অনেক নৌকা রয়েছে। এই সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমিতে পরিনিত হয় যখন সূর্যের হালকা আলো পড়ে। আপনারা যখন ছোট্ট নৌকায় চড়ে পুরো এই বিল ঘুরে বেড়াবেন, তখন মনে এক ভিন্ন ধরনের অনুভুতি পাবেন, তাজা শাপলার ফুলের মনোরম দৃশ্য আর পানির কল কল ধ্বনিতে। 

আরো পড়ুনঃ সিলেটের জনপ্রিয় ড্রিমল্যান্ড ওয়াটার পার্ক

এর সঙ্গে আরো দেখা মেলবে সাদা বক, দোয়েল, মাছ রাঙ্গা, শালিক, পানকুড়ি, ফিঙ্গে, চড়ইসহ অনেক ধরনের দেশীয় প্রজাতির পাখির ভিন্ন ভিন্ন ডাক যা শুনলে যে কারোরই মন ভরে উঠে সহজেই। এতোসব কারণে সাতলার বিলকে শাপলার রাজ্য বলা হয়ে থাকে।

সাতলার বিলের শাপলার ইতিহাস

এই বিলে কবে হতে শাপলা ফুটে তার সঠিক কোন তথ্য পাওয়া জানা যায়না। এখানকার অনেক বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তারা জন্মের পর হতেই এই বিলে শাপলা ফুটতে দেখেন। এখানকার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ শাপলার চাষ করে। এই বিলে তিন ধরণের শাপলার চাষ হলেও লাল শাপলাই বেশী দেখা যায়। এই বিলের কয়েক হাজার একর জমিতে শাপলার চাষ করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই শাপলা গ্রাম হতেই শাপলা ফুলের সরবরাহ করা হয়ে থাকে। 

জীবন জীবিকায় শাপলা ফুল

শাপলা ফুল শুধু সৌন্দর্য এর জন্য নয়, শাপলা ফুল বিল হতে সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রয় করে উক্ত এলাকার অনেক পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এখানকার অনেক দরিদ্র পরিবার শাপলার উপর নির্ভর করে আর্থিকভাবে টিকে আছে। বর্ষার মৌসুমে এলাকায় কৃষি কাজ তেমন না থাকায় আশীর্বাদ হিসাবে ধরা দিয়েছে এই শাপলা ফুল। বিলের পানিতে নৌকা চালান গৃহকর্তারা আর ছেলে- মেয়েরা নৌকায় বসে শাপলা তোলেন।

শাপলাগুলো হাটে পাঠানোর জন্য বাড়ির মহিলারা শাপলা গুছিয়ে আঁটি বাধেন। শাপলা খুব সকালে হাটে নিয়ে জেতে হয়, তাই খুব সকাল হতেই পারিবারিক কাজ শুরে হয়। প্রতিটি শাপলার আঁটি ৮ হতে ১০ টাকা দামে বিক্রয় হয় স্থানীয় বাজারে। এখানকার প্রায় ৮টি ইউনিয়নের অনেক পরিবারের শাপলা বিক্রয়ের মাধ্যমে জীবিকা চলে। 

কিভাবে যাবেন

সালতা বা শাপলা গ্রামে যাওয়ার জন্য যেকোনো জেলা বা স্থান হতে প্রথমে আপনাদে বরিশালে যেতে হবে। বরিশালে সড়ক ও নৌ পথে যাওয়া যায়। 

সড়ক পথে- ঢাকা হতে নিয়মিত সকাল ৬টা হতে রাত ১২টা পর্যন্ত বাস চলাচলা করে। এসব বাসে মানভেদে নন এসি ৫০০- ৬০০টাকা এবং এসি ৮০০- ১০০০ টাকা ভাড়া লাগবে।

নৌপথে- ঢাকার সদরঘাট হতে প্রতিদিন রাত ৮-৯ টায় বেশ কয়েকটি লঞ্চ বিরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ডেকের ভাড়া ১৫০টাকা, ডাবল কেবিন ১৬০০টাকা এবং ভিআইপি কেবিন ৪৫০০টাকা ভাড়া লাগবে।

বাস অথবা লঞ্চে করে বরিশাল এ পৌঁছে আবরো আপনাদের বাসযোগে যেতে হবে শিকারপুর। এরপর সিএনজি বা অটো রিক্সায় করে উওর সাতলা। আবার আপনারা বরিশালের নথুল্লাবাদ হতে সরাসরি সাতলা গ্রামে পৌঁছে যেতে পারবেন। 

কোথায় থাকবেন

সাতলা গ্রামে থাকার ব্যবস্থা নেই বলে রাতে স্থানীয় কারো বাড়ীতে বা স্কুলে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আগে হতেই বলে রাখতে হবে। আবার আপনারা চাইলে বরিশাল থাকতে পারবেন, এখানে বিভিন্ন ধরণের আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনারা আপনাদের সাধ্যমত ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। 

কোথায় খাবেন

সাতলা গ্রামে বেশ কয়েকটা খাবারের হোটেল রয়েছে আপনারা চাইলে এখানে খেতে পারবেন অথবা আপনারা চাইলে বরিশাল গিয়ে খেতে পারবেন, এখানে বিভিন্ন ধরণের খাবারের হোটেল রয়েছে। আপনারা আপনাদের সাধ্যমত ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। 

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তবর্তী অগ্রপুরী বিহার

শেষকথা

আশাকরি আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে "শাপলার রাজ্য সাতলার সাজ অপরূপ" এর সম্পর্কে অনেক তথ্য আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে, বিশেষ করে শাপলার রাজ্য সাতলা ভ্রমনের ক্ষেত্রে। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাদের পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭