চলন বিলে নৌকা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
আরো পড়ুনঃ ভালোবেসে খনন করলেন ৩৬৫ পুকুর
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ পছন্দ করেন ভ্রমন করতে। এখন চলছে বর্ষাকাল আর বর্ষাকাল মানেই নৌকা ভ্রমন। হ্যাঁ পাঠক পাঠিকাগণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের নৌকা ভ্রমনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর এক স্থানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবো।
আপনারা যদি আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগের সহিত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাহলে বর্ষাকালে ভ্রমনের এক সুন্দর জায়গা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখা নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- চলনবিলে নৌকা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
- চলন বিলের অবস্থান
- চলনবিলে নৌকা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
- চলন বিলের গঠন
- চলন বিলের আয়তন
- চলনবিলে অন্যান্য বিল
- কিভাবে যাবেন চলন বিল
- কোথায় থাকবেন চলন বিল
- শেষকথা
চলন বিলের অবস্থান
বাংলাদেশের বৃহৎ বিলটি উত্তর- পশ্চমাঞ্চলের জেলা রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, এবং পাবনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত। নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিশাল এলাকা জুড়ে যে জলভূমি বর্ষা ও বর্ষা পরবর্তী সময়ে দেখা যায় সেটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত চলনবিল। বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পর এই সকল বিলে জল থাকে না। শুকনো মৌসুমে চাষাবাদ চলে বিলের জমিনে তখন চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। তবে বর্ষায় যখন কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যৌবনা রূপে পসরা সাজিয়ে বসে এই বিল।
চলনবিলে নৌকা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
নাটোরের চলনবিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল। এই বিলের বড় একটি অংশ পড়েছে নাটোরের সিংড়া উপজেলায়। এছাড়া এই বিলের বুকেই তৈরি হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমড়ুল হতে নাটোর জেলার বনপাড়া উপজেলা পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক।
সড়কের দুপাশে বর্ষা মৌসুমে আপনার দু'চোখ যেদিকে যাবে ধেকবেন শুধু অথৈ জলরাশি। এ সময় এই পথে চলতে চলতে রাস্তার দু'পাশে চলনবিলের সৌন্দর্য দুচোখ ভরে উপভোগ করা যায়। আপনারা যদি নিজস্ব গাড়িতে জান তাহলে ইচ্ছামতো গাড়ি থেমে, নেমে এর সৌন্দর্য আরো বেশী উপভোগ করা সম্ভব। এছাড়া চলনবিলের মূল আকর্ষণীয় স্থান হলো ‘হাইতি বিল’। হাইতি বিল নাটোর জেলা শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে নলডাঙ্গা উপজেলায় অবস্থান।
হাইতি বিল হলো দেশের সবচেয়ে গভীরতম। এই বিল প্রায় ১২ (বারো) মিটার গভীর এবং সারাবছরই পানি থাকে। বর্ষা মৌসুমে এ বিলের পানির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক বেশি। বর্ষায় চলনবিলের মধ্যে হয়ে প্রবাহিত হয় সাতচল্লিশটি নদী ও অন্যান্য জলপথ। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলনবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
চলন বিলের গঠন
ঐতিহাসিক ভাবে আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গেচলন বিলের সম্পর্কযুক্ত গঠন। চলন বিলের প্রধান যোগান দানকারী প্রণালী আত্রাই নদী যা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার উত্তরের জেলা ও দিনাজপুর এলাকার পানি আসতো এই বিলে। চলন বিলের জল নির্গম পথ হিসেবে কাজ করে বড়াল নদী এবং পানি বহন করে যমুনা নদীতে ফেলে।
আরো পড়ুনঃ মহিসন্তোষে ১৪ হাত মানুষর কবর
চলন বিলের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত হয়। এই নদীগুলর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নদী হলো- আত্রাই, করতোয়া, বড়াল, মরা বড়াল, তুলসী, গুড়, ভাদাই, চিকনাই, বরোনজা, তেলকুপি ইত্যাদি।
চলন বিলের আয়তন
ব্রহ্মপুত্র নদ যখন কালের আবর্তে তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময় চলনবিলের সৃষ্টি। পূর্বে চলন বিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গ কিলোমিটার। তবে বর্তমানে এর আয়তন অনেকটাই কমে এসেছে। পূর্বে এই বিলের আয়তন ছিল প্রায় ৫০০ বর্গমাইল বা প্রায় ১৪২৪ বর্গ কিলোমিটার। আবার অনেক জরিপ মতে এই বিলের আয়তন প্রায় ৮০০ বর্গমাইল বা প্রায় ২০৭২ বর্গ কিলোমিটার। তবে বর্তমানে এয় বিলটি অনেক হ্রাস পেয়ে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১১৫০ বর্গ কিলেমিটারে।
চলনবিলে অন্যান্য বিল
দেশের বেশিরভাগই বড় আকারের বিলগুলির পাবনা জেলায় অবস্থিত। যেমন- গজনা বিল, ঘুঘুদহ বিল, বড়বিল, সোনাপাতিলা বিল, চিরল বিল এবং গুরকা বিল। গজনা বিল দুলাই- এর দক্ষিণে ১২৩ (একশত তেইশ) বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। প্রায় ৩৫ (পয়ত্রিশ) বর্গ কিমি আয়তনের সোনাপাতিলা বিল পাবনা জেলার উত্তরাংশ জুড়ে অবস্থিত। বড়বিলের আয়তন ৩১ বর্গ কিমি। চাটমোহর উপজেলায় কুরলিয়া ও দিক্ষিবিল দুটি যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
চিরল ও গুরকা বিল- উভয়েরই আয়তন ৮ বর্গ কিমি এবং ঘুঘুদহ ৪ বর্গ কিমি। চলনবিল হল ছোট ছোট অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। আর বর্ষা মৌসুমে এই সকল বিলে জল প্রবাহ বেড়ে একসঙ্গে এক বিশাল বিলের সৃষ্টি হয়। বর্ষায় এই বিলের আয়তন বেড়ে পাবনা জেলার চাটমোহর, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ, এবং নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা জুড়ে। আপনার যতদুর চোখ হাবে দেখতে পাবেন শুধু পানি আর পানি। থৈ থৈ পানি দেখার এক অন্যরকম অপূর্ব দৃর্শ্য।
কিভাবে যাবেন চলন বিল
ঢাকা হতে রাজশাহীগামী যে কোনো বাসেই নাটোর আসা সম্ভব। এছাড়া ঢাকার গাবতলি থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, ন্যাশনাল পরিবহন প্রভৃতি বাসে নাটোর যাওয়া যায়। বাসের প্রকার ভেদে আপনাদের ভাড়া লাগবে ৩শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা।
কোথায় থাকবেন চলন বিল
নাটোরের চলনবিল দেখতে গেলে থাকতে হবে নাটোর জেলা সদরে। শহরে থাকার জন্য আছে চকরামপুরে হোটেল ও ভিআইপি হোটেল এবং মাদ্রাসা রোডের হোটেল উত্তরা ও হোটেল মিল্লাত। ভাড়া তিনশো’ টাকা থেকে সাতশো’ টাকা।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ ভারত সিমান্তের জবই বিল
শেষকথা
আমার প্রাণপ্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ আপনারা যেনে গেলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চলন বিল সম্পর্কে অনেক তথ্য। যা আপনাদের চলনবিল ভ্রমনে অনেক কাজে লাগবে। আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি ভালোলাগে ও প্রয়োজনীয় বলে মনেহয় তাহলে অবশ্যি আপনাদের পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। সকলে ভালো থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url