রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জেলায় দেখা গেছে
আরও পড়ুনঃ রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্কে বাংলাদেশ
হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে ধানক্ষেত, আখ ক্ষেত যে কোনো জায়গায় দেখা মিলছে বিষধর এই সাপটি।এখন জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতংক, অপরদিকে কৃষকরা ভয়ে তাদের ফসলি জমিতে কাজ করতে সাহস পাচ্ছে না।
আজকের পাথ্যক্রম- রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জেলায় দেখা গেছে
- রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জেলায় দেখা গেছে
- ফরিদপুর জেলা
- শরীয়তপুর জেলা
- রাজবাড়ী জেলা
- মানিকগঞ্জ জেলা
- রাজশাহী জেলা
- ভোলা জেলা
- পাবনা জেলা
- নোয়াখালী জেলা
- কুষ্টিয়া জেলা
- চাঁদপুর জেলা
- শেষকথা
রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জেলায় দেখা গেছে
বর্তমানে দেশের অনেক জেলায় এক আতংকের নাম হয়ে দাঁড়িয়ে রাসেল ভাইপার। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে মাত্র কয়েক বছরে। এই সাপ দেখা যাচ্ছে পদ্মা-যমুনা নদী ও তার অববাহিকায়। এখন পর্যন্ত রাসেল ভাইপার বাংলাদেশের যেসব জেলায় পাওয়া গেছে তা হলো-
ফরিদপুর জেলা
চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ভুট্টা ক্ষেত পরিচর্যার সময় গোয়ালন্দের চর মজলিশপুর এলাকার এক কৃষককে সাপে কামড়ালে ওই দিনই তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কৃষক সাঈদুল সাপে কামড়ানোর সাত দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মারা যান।
চলতি বছরের ৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার চর ভদ্রাসনের চর শালেপুরের কৃষক বিশা প্রামাণিক সরিষা কাটতে গিয়েছিলেন। সরিষা কাটার সময় দুপুর ১২টার দিকে কৃষক বিশা প্রামাণিকে রাসেল ভাইপারে কামড় দেয়। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তবে তার শেষ রক্ষা হয়নি। সাপে কামড় দেওয়ার ৩৬ দিন পর ১৩ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।
এরপর গত ২৯ মার্চ ময়না বেগম নামে এক শ্রমিককে গোয়ালন্দের দেবীপুর চরে সাপে কামড়ালে ফরিদপুর হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। সেখানে চিকিৎসা গ্রহণের ১৪ দিন পর তার তিনি নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ গত ৭ জুন সকালে ধান কেটে ক্ষেতে রেখে দেন দুই জন কৃষক। একই দুপুরে তারা আঁটি বাঁধা সেই ধান তুলতে জান এবং রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। বর্ততমানে তারা দুজনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। সাপের কামড়ের খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্য শ্রমিকরা ক্ষেতে ধান খেতে রেখে পালিয়ে যান। বরতমানে এলাকায় ভয়ে গরুর ঘাস কাটতেও যাচ্ছেন না অনেকে।
শরীয়তপুর জেলা
১৬ মে শরীয়তপুরে জেলার ভেদরগঞ্জে দেখা মেলে বিষধর রাসেল ভাইপার এই সাপটি প্রায় পাঁচ ফুট দৈর্ঘ্যের। তবে কৃষকেরা সাপটিকে মেরে ফেলেন।
একইদিন সকালে উপজেলার সখিপুর থানার অন্তরগত কাঁচিকাটা ইউনিয়নের চরজিংকিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকার কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, সকালে আমরা কয়েকজন চরজিংকিং এলাকায় ধান কাটার জন্য জাই। এই সময় তারা সাপটিকে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকতে দেখেন এবং তারা চিৎকার করেন। চিৎকার শুনে আরো কৃষকরা এগিয়ে এসে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন।
এ ঘটনার কয়েক দিনপর গত ২৮ মে আবারও একই উপজেলার নয়ানগর এলাকা হতে আরো একটি রাসেল ভাইপার সাপ উদ্ধার করে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন স্থানীয়রা।
একইদিন সকালে উপজেলার সখিপুর থানার অন্তরগত কাঁচিকাটা ইউনিয়নের চরজিংকিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকার কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, সকালে আমরা কয়েকজন চরজিংকিং এলাকায় ধান কাটার জন্য জাই। এই সময় তারা সাপটিকে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকতে দেখেন এবং তারা চিৎকার করেন। চিৎকার শুনে আরো কৃষকরা এগিয়ে এসে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন।
সর্বশেষ ১৮ জুন সকালে উপজেলার পাচুখার কান্দি গ্রামের এমদাদুল হক নামে এক কৃষকের ফসলি জমিতে আরো একটি রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মিলে। এ নিয়ে এলাকায় এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও সব কয়টি সাপকে মেরে ফেলেন লোকজন।
স্থানীয় লোকজন জানান, বিভিন্ন সময় আমরা ফেসবুকে রাসেল ভাইপার সাপের কথা শুনেছি কিন্তু এখন আমরা বাস্তবে দেখেছি। স্থানিয় একজন জানান গত ১৮ তারিখ সকালে গরুর জন্য আমার ফসলি জমিতে ঘাস কাটতে গিয়ে আমি দেখি একটি সাপ জমিতে থাকা জালের বেড়ায় আটকে আছে। সাপটির ছবি তুলে ইন্টারনেটে দিলে জানতে পারি যে, জালে আটকে থাকা সেই সাপটি বিষাক্ত রাসেল ভাইপার। সাপটি দেখে আমি নিজেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।
রাজবাড়ী জেলা
২০২৩ সালের ৩ জুলাই মাসে রাজবাড়ী জেলার জাহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি রাসেল ভাইপারের ছোবলের শিকার হন। জাহিদুল ইসলাম সকালে পাটক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করেন তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙুলিতে কিছু একটা কামড় দেয় এবং তিনি দেখতে পান ছোট্ট একটি কালো রঙের সাপ।
সাপটিকে তিনি মেরে ফেলেন। সেই সাপ নিয়ে যান স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কর্তব্যরত চিকিৎসক সাপটিকে দেখে বিষধর রাসেল ভাইপার বলে শনাক্ত করেন। এই সাপের দেখা দেখা পাওয়া যায় একই বছরের ২০ (২০২৪) ডিসেম্বর রাজবাড়ির পাংশায়। ওইদিন সকালে উপজেলার শাহমীরপুর গ্রামের পদ্মানদীর তীরের আখ মাড়াইয়ের খোলা থেকে সাপটি মারা হয়।
ওই এলাকার স্থানিয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম জানান ১০-১২ বয়সী কয়েকজন শিশু আখ খেতের পাশে খোলতে যায়। এক নারী এ সময় খোলাতে স্তূপ করে রাখা আখের বিজ সরানোর কাজ করছিলেন। কাজ করার সময় তিনি আখ বিজের স্তূপের মধ্যে একটি সাপ দেখতে পান এবং চিৎকার করে ওঠেন। তখন সেখানে খেলা করতে থাকা শিশুরা পিটিয়ে সাপটি মেরে নদীতে ফেলে দেয়। জানা যায়, সাপটির দৈর্ঘ্য হবে প্রায় চার ফুট।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাংসদের নামের তালিকা
মানিকগঞ্জ জেলা
চলতি বছরের মার্চ মাসের ১ তারিখে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর চরে লাল মিয়া তার ভুট্টার ফসলে পানি দেওয়ার সময় রাসেলস এর কামড়ের শিকার হন। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পরও ছয় দিন পর তিনি মারা জান। আবার ৩ জুন একই উপজেলার চরাঞ্চল লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে ফসলের ক্ষেতে এই সাপ দেখা গেলে স্থানিয় কৃষকেরা সাপটি মেরে ফেলেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, আমাদের চরাঞ্চলে শতশত বিঘা জমিতে রয়েছে ভুট্টা, তিল, বাদাম, আমন ও আউশ ধানের চাষ। কিন্তু ফসলের জমিতে বিষধর এই সাপ দেখা দেওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছে কয়েক হাজার কৃষক। গত তিন মাসের মধ্যে এই চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী জেলা
৩১ মে/২৪ সকাল ১০টার দিকে রাজশাহীর জেলার চারঘাট উপজেলার পিরোজপুরের মাঠে এক কৃষক মাঠে কাজ করার সময় এই সাপটি কামড় দেয়। সে সময় তিনি নিজেই সাপটিকে মেরে ফেলেন। পরে তিনি সেই সাপ নিয়েই চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। পরবরতিতে তাকে সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভোলা জেলা
ভোলায় জেলায় মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে দু'টি রাসেল ভাইপার সাপ ধরা পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পর এখন প্রকাশ্যে দেখা মিলছে রাসেল ভাইপারের। এই বিষধর সাপ সম্পর্কে গ্রামের মানুষের মধ্যে ধরনা বা পরিচিতি নেই বললেই চলে। এর আগে ভোলায় দু-একটি ধরা পড়লেও তা অবমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভোলা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন ধরা পড়ছে রাসেল ভাইপার।
পাবনা জেলা
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর মাসে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জালে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার ধরাপড়ে পাবনা সদর উপজেলার চরাঞ্চলে। খবর পেয়ে সাওটিকে জীবিত উদ্ধার করেন সাপ রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সদস্যরা। উক্ত টিমের সভাপতি মো. রাজু আহমেদ জানান, হটলাইনে ফোনকল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা সাপটিকে জীবিত উদ্ধার করি।
নোয়াখালী জেলা
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া উপজেলার ভূমিহীন বাজারের পাশেই একটি ধানক্ষেতে ভয়ংকর রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা মেলে। স্থানীয়রা প্রথমে সাপটিকে অজগর মনে করলেও পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়ে সাপটিকে রাসেল ভাইপার বলে শনাক্ত করেন।
কুষ্টিয়া জেলা
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে মাছ ধরছিলেন ইট ভাটা ব্যবসায়ী তারিক শেখ। মাছ ধরার সময় রাসেল ভাইপার তাকে কামড় দেয়। পরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ দিন পর তার মৃত্যু হয়।
চাঁদপুর জেলা
এই বছর গত ১৬ মে উপজেলার কৃষক সুমন বেপারির জমিতে ধান কাটার সময় দেখা মিলে রাসেল ভাইপারের। পরে সবাই মিলে এই বিষধর সাপটিকে মেরে ফেলে। সুমন জানান, জমিতে ধান কাটতে গিয়ে দেখি ধানের মুঠির নিচে একটি সাপ শুয়ে আছে। সবাই মিলে সাপটিকে মেরে ফেলি। পরে দেখি এটি বিষধর রাসেল ভাইপার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে গফুর বাদশার আলুর জমিতে দেখা গিয়েছিল দুইটি রাসেল ভাইপারের।
এর আগে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সাধারণত এ সাপের দেখা পাওয়া যেত। রাসেল ভাইপার সাপের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি ছিল রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। তবে বর্তমানে এটি এখন দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা গলতে এ প্রজাতির সাপের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। উত্তরবঙ্গে রাসেল ভাইপার সাপ চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামে পরিচিত।
রাসেল ভাইপার সাপের গাঁয়ের রং এবং চিত্রাকৃতির হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ এই সাপ নদীতে বাস করা বা অজগরের ছদ্মনাম বলেই জানে। তবে বাংলাদেশে যে সব সাপ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ এটি।
শেষকথা
পাঠক পাঠিকা আপনারা যদি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জেলায় দেখা গেছে সেই তথ্য জেনেছেন। যা আপনাদের অনেক কাজে লাগবে। আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করা এবং অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। কারণ রাসেল ভাইপার সাপের কামড় মারাত্মক হতে পারে। কোনও চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য অবশ্যই একজন দক্ষ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
আফ্রিকা উপমহাদেশ থেকে আসা এ বিষধর সাপের উপদ্রব এখনই কমানো না গেলে পরে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতনমহল। আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভাল লাগে ও প্রয়োজনীয় মনে হয় তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url