বাংলাদেশ ভারত সিমান্তের জবই বিল
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী বিভাগের ভ্রমণস্পট এর তালিকা
জবই বিল বা জবাই বিল নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বৃহৎ বিল। সরকারি হিসেবে বিলটি ৯৯০ (নয়শত নব্বই) একর বা ৪ (চার) বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত।
হ্যাঁ পাঠক পাঠিকাগণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো বাংলাদেশ- ভারত সিমান্তে অবস্থিত জবই বিল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশাকরি আপনারা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশ ভারত সিমান্তের জবই বিল সম্পর্কে-
আজকের পাঠ্যক্রম- বাংলাদেশ ভারত সিমান্তের জবই বিল
- বাংলাদেশ ভারত সিমান্তের জবই বিল
- বিলের নাম জবই হওয়ার কারণ
- অতিথি পাখির অভয়ারণ্য
- নৌকা বাইচ এর ব্যবস্থা
- মৎস্য অভায় আশ্রম
- কিভাবে যাবেন জবই বিল
- কোথায় থাকবেন জবই বিল
- কোথায় খাবেন জবই বিল
- শেষকথা
বাংলাদেশ ভারত সিমান্তের জবই বিল
উপজেলা সদর থেকে ৮ (আট) কিলোমিটার পশ্চিমে এই বিলটি। নওগাঁ জেলার বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলায় সাপাহারে অবস্থিত জবই বিলটি। সাপাহার উপজেলার শিরন্টি, গোয়ালা, আইহাই ও পাতাড়ী এই ৪ (চার) টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বিলটি প্রবাহিত। জবাই বিলের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো আইহাই ইউনিয়ানের পাহাড়ীপুকুর, মংরইল ও মাইলডাঙ্গা গ্রামের মা্টি। বিলের পাশেই রয়েছে পূনর্ভবা নদী।
বিলের নাম জবই হওয়ার কারণ
পূর্জবে বই বিল নামে কোন বিলের অস্তিত্ব এখানে ছিল না। ডমরইল ও মাহিল বিল হচ্ছে এ বিলের আসল নাম। আইহাই ইউনিয়ানের অন্তর্গত পাহাড়ীপুকুর ব্রিজ এই বিল দু'টিকে পৃথক করেছে। বিলের উপর নির্মিত ব্রিজের উত্তর পার্শ্বে ডমরইল বিল ও দক্ষিণ পার্শ্বে মাহিল বিল। বিলের নামকরণের প্রধান কারণ হলো আইহাই ও পাতাড়ি এই দু'টি অধিকাংশ মানুষকেই এই বিল অতিক্রম করে জবই গ্রামের ওপর দিয়ে সাপাহার উপজেলা সদরে হয় আর সেই সূত্র ধরেই এই বিলের নামকরণ জবই বিল হয়েছে।
অতিথি পাখির অভয়ারণ্য
প্রতি বছর শীতের মৌসুমে জবই বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিদের পাখির আগমন ঘটে। কারণ এই পাখিদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত খাবার। এখানে প্রতি বছর রাজহাঁস, বালিহাঁস, সাদা বক, কক, চাহা, শামুকখোল, পাতি সরালীসহ বিভিন্ন প্রজাতির জানা-অজানা পাখি আসে এই বিলে। শীত কালে পাখিদের কিচিরমিচির এবং কলতানেন মুখরিত থাকে এই বিল। বিলের ছোট ছোট মাছ, পোকা-মাকড় এবং শামুক হলো মূলত অতিথি পাখিদের প্রধান খাদ্য।
জবই বিল ছাড়াও বিলের পার্শ্বে অবস্থিত পূনর্ভবা নদী এলাকাতে অসংখ্য অতিথির আগমন ঘটে। সারা বছর জবই বিলে অতিথি পাখি ছাড়াও দেশি প্রজাতির পাখিরা বসবাস করে। পূর্বে শীতকালে আরো অধিক পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি ভিড় জমাতো যা মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করত। কিন্তু এলাকার কিছু অসাধু পাখি শিকারির কারণে আজ অনেক অতিথি পাখি এখন তেমন ভাবে দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ সাফিনা পার্ক ঘুরে আসুন একদিন
নৌকা বাইচ এর ব্যবস্থা
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় খাদ্যমন্ত্রি জনাব সাধন চন্দ্র এর সহযোগিতায় ও এলাকাবাসির উদ্যোগে নৌকা বাইচ এর আয়োজন করা হয়ে থাকে। তখন জবাই বিল এলাকাসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় নৌকা বাইচ দেখার জন্য এক আনন্দঘন পরিবেশের বিরাজ করে।
এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে জবই বিলে প্রতিদিন শত শত লোক পরিবার নিয়ে নৌকা ভ্রমন ও বিলের ধারে বসে সময় কাটানোর জন্য দূর দূরান্ত হতে ছুটে আসেন।
মৎস্য অভায় আশ্রম
ডমরইল তথা জবই বিলে পূর্বে বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল পরিমাব মাছ পাওয়া যেত কিন্তু কিছু প্রজাতীর মাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়। বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই দু'টি অভায় আশ্রম স্থাপন করা হয়েছে মাছ রক্ষ্যার জন্য। যেটিকে সাপাহারের আঞ্চলিক ভাষায় বলে থাকে মাছের কাঠা। উপজেলা মৎস্য অফিস এটি নিয়ন্ত্রণ করে, বর্তমানে সরকার মৎস চাষ করছে। এই ডমরইল তথা বিলে ৯০ দশকের পূর্বে যখন হাটু পানি থাকত তখন বিলে মাছ ধরা (বাহান) হতে দিন তারিখ নির্ধারণ করে।
কিভাবে যাবেন জবই বিল
ঢাকা থেকে আপনি সরাসরি সাপাহার আসতে পারবেন অথবা নওগাঁ জেলা সদর হয়ে সাপাহারে যেতে হবে। সাপাহার উপজেলা সদর হতে মাত্র ৮ কিলো মিটার দূরে এই বিল অবস্থিত। আপনি সাপাহার উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২০ বা ৩০ টাকা ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানযোগে খুব সহজে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন জবই বিল
আপনি চাইলে সাপাহারে কম খরেছে থাকতে পারবেন অথবা ভালো মানের আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চাইলে আপনাকে নওগাঁ জেলা সদরে থাকতে হবে। নওগাঁতে হোটেল প্লাবন, হোটেল যমুনা, হোটেল অবকাশ, মল্লিকা ইন, হোটেল ফারিয়াল ও হোটেল রাজ প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসকল হোটেল ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত লাগবে।
আরো পড়ুনঃ শ্রীমঙ্গল ভ্রমনের সেরা ৫ দর্শনীয় স্থান
কোথায় খাবেন জবই বিল
সাপাহারে অনেক ভালো মানের খাবারের হোটেল আছে। আপনি চাইলে সাপাহারে খেতে পারবেন। এছারাও আপনি চাইলে আরো ভালো মানের খাবারের জন্য নওগাঁর গোস্তহাটির মোড়ে ভালমানের কয়েকটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ পাবেন।
শেষ কথা
ব্যাস আশা করছি আপনার জবই বিল সম্পর্কে অনেক ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। যা কিনা আপনার ভ্রমণে সাহায্য করবে। জবই দেখতে বছরের যে কোন সময় দর্শনার্থীরা অল্প ভিড় করলেও দুই ঈদে দর্শনার্থীদের উপচে পরা ভিড় লক্ষণীয়। পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় বিল এর প্রতি প্রয়োজনীয় নজরদারির দিলে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসাবে এটি গড়ে উঠবে। তাই সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url