আশুরায় করণীয় ও বর্জনীয় সমূহ
আরও পড়ুনঃ আশুরা ২০২৪ কত তারিখে হবে
আশুরার অনেক তাৎপর্য, ফজিলত রয়েছে। আবার আশুরার দিন বেশ কিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজ আমাদের আছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের আশুরার করণীয় ও বর্জনীয় কাজগুলো কী সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যদি আপনারা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশুরায় করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে এর চেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। নবী করিম (সঃ) ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরি সনের মহররম মাসের ১০ তারিখ কারবালার প্রান্তরে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) বিপথগামী ইয়াজিদের বিশাল সৈন্যবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন।
আজকের পাঠ্যক্রম- আশুরায় করণীয় ও বর্জনীয় সমূহ
- আশুরায় করণীয় ও বর্জনীয় সমূহ
- আশুরায় করণীয় সমূহ
- আশুরার দিন রোজা রাখা
- আশুরায় ক্ষমার ঘোষণা
- আশুরায় ত্যাগ ও কোরবানির শিক্ষা গ্রহণ
- আশুরায় অন্যকে ইফতার করানো
- শেষবাক্য
আশুরায় করণীয় ও বর্জনীয় সমূহ
ইসলামের ইতিহাসে আশুরার ফজিলত শুধু কারবালার জন্য ফজিলতপূর্ণ নয়। কিংবা আশুরার কারণে হজরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেছেন এমনটিও কিন্তু নয়। বরং ইয়াজিদ বাহিনীর অবৈধ রাষ্ট্র ক্ষমতার গ্রহণের দ্বন্দ্বে এবং ইসলামি খেলাফতের পক্ষে কথা বলার কারণে অন্যায়ভাবে নিরাপারাধ হজরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীসহ প্রায় ৭০ জন কে হত্যা করা হয়।
রাসূলে পাক (সাঃ) যখন মদিনাতে প্রথম এলেন তখন মদিনার ইহুদিগণ আশুরার দিন রোজা রাখতেন। তাদের কাছে এ ব্যপারে জানতে চাইলে তারা জানালো, এ দিন নবী মুসা (আঃ) সালাম ফেরাউনের সাথে বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নবী করিম (সাঃ) সাহাবিদের বললেন, মুসা (সাঃ) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার দিক থেকে তাদের চেয়ে তোমরাই বেশি হাকদার। কাজেই তোমরা (আশুরার দিন) রোজা রাখ।’ (বুখারি)
আফসোসের বিষয় হলো, মুসলমানদের অনেকই জানি না যে, আশুরার আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো কী? এই দিন রাসুলে পাক (সাঃ) কীভাবে পালন করতেন? এ দিন সম্পর্কে তিনি কী বলেছেন। আমরা মুসলমান হিসাবে এগুলো জানা দরকার। চলুন তাহলে দেখাজাক আশুরায় করণীয় ও বর্জনীয় সমূহ-
আশুরায় করণীয় সমূহ
আশুরার দিন রোজা রাখা
আশুরার দিন যে রোজা রাখবে তার এক বছরের সগিরা গোনা সমূহ মাফের হওয়ার আশা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি (সাঃ)। এ বিষয়ে হাদিসের বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-
হজরত আবু কাতাদাহ বর্ণনা করেন, রসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন, আশুরার দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে বিগত বছরের গুনা মাফের আশা রাখি।’
আবার আশুরা বা মহরমের রোজা রাখার পদ্ধতিও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে- রাসুলে পাক (সাঃ) ইরশাদ করেছেন যে, তোমরা আশুরার রোজা রাখ, কিন্তু ইয়াহুদিদের মতো নয়। তোমরা আশুরার দিনসহ আশুরার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমাদ)
আরও পড়ুনঃ ১০ মহররম এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
আশুরায় ক্ষমার ঘোষণা
বেশি বেশি করে তাওবা-ইসতেগফার করা আশুরার দিনসহ ও মহররম মাসজুড়ে। কেননা এই দিন ও মাসের কোন এক বিশেষ মুহূর্তে তাওবাহ-ইসতেগফারে আল্লাহ তাআলা আমাদের পুরো জাতিকে ক্ষমা করে দেবেন। এ বিষয়ে হাদিস শ্রিফে এসেছে-
রাসুলে পাক (সাঃ) ইরশাদ করেন, মহররম হলো মহান আল্লাহ তাআলার কাছে একটি মর্যাদার মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, জেই দিনে তিনি অতিতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছিলেন এবং ভবিষ্যতেও এরূপ একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন।’ (তিরমিজি)
আশুরায় ত্যাগ ও কোরবানির শিক্ষা গ্রহণ
দ্বীন ও ইসলামের কল্যাণে হজরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) জীবন থেকে আত্মত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করা সব মুসলমানের জন্য একান্ত করণীয়। সবার মাঝে হজরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর ঈমানি চেতনা জাগরিত হলেই ইসলামের পরিপূর্ণ বিজয় আসবে।
আশুরায় অন্যকে ইফতার করানো
যেকোনো সময় ইফতার করানো অনেক ফজিলতপূর্ণ কাজ। আপনার সম্ভব হলে আশুরার দিনে নিজে রোজা রাখার পাশাপাশি রোজা পালনকারীদের ইফতার করানো ও সাধ্যমত দান-সাদাকাহ করা উত্তম। যেমন- গরিবদেরকে পানাহার, এতিমের প্রতি সদয় ব্যবহার ও সহযোগিতা করা।
আশুরায় বর্জনীয় সমূহ
*** হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) এর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক না বানানো ও ভিক্ষা না করানো। এটা মহররম বা আশুরার বিষয়ে একটি কু-প্রথাও বটে।
*** হায় হুসেন, হায় আলি ইত্যাদি বলে বিলাপ বা মাতম কিংবা মর্সিয়া এবং শোকগাঁথা প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বুকে পেটে পিঠে ছুরি মেরে রক্তাক্ত করা থেকে আমাদের বিরত থাকা।
*** হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) এর স্মরণে কাল্পনিক তাযিয়া বা নকল কবর বানানো থেকে সকলের বিরত থাকা।
*** নকল তাযিয়ার সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা এবং এসব তাযিয়া বা নকল কবরে নজরানা স্বরূপ অর্থ দান করা থেকেও বিরত থাকা।
*** তাযিয়া বানিয়ে তা কাঁধে বা যানবাহনে বহন করে মিছিলসহ সড়ক প্রদক্ষিণ করা থেকে সবাইকে বিরত থাকা।
*** ফুল দিয়ে সাজানো এসব নকল তাযিয়া বা কবরের বাদ্যযন্ত্রের তালে প্রদর্শনী থেকে বিরত থাকা।
*** যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে ঘোড়া নিয়ে প্রদর্শনী করা থেকে বিরত থাকা।
*** আমাদের নিজেদের শরীরে আঘাত না করা।
*** শোক অথবা মাতম না করা।
*** আশুরায় শোক প্রকাশের জন্য নির্ধারিত কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা।
উপরে উল্লেখিত ঘটনার সঙ্গে আশুরা বা ১০ মহরমের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং মিথ্যা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জাহান্নামে নিজেদের ঠিকানা বানানো থেকে বিরত থাকাই জরুরি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url