১০ মহররম এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
নানান রকমের ধর্মের বর্ণের সমন্বয়ে গঠিততথা ভারত বর্ষ আমাদের এই দেশ। অন্যান্য ধর্মানুসারের মানুষদের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মের মানুষদের কাছে যে সমস্ত উৎসবগুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয়, তার মধ্যে অন্যতম হল পবিত্র আশুরা। আশুরা হলো আর এই পবিত্র আশুরা এ মন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিবস যেটি ইসলামী চন্দ্র বর্ষ এর প্রথম মাস মহররমের দশ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এই তারিখে কারবালার যুদ্ধে হযরত আলী (রাঃ) ও তার পরিবারের সদস্যদের শাহাদাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়াও বলা যায় শিয়া মুসলমানরা এই দিনে নবী মুহাম্মদের (সাঃ) এর প্রিয় নাতি ইমাম হোসাইন (রাঃ) এবং তার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া দুঃখময় সেই ঘটনার স্মরণ করিয়ে থাকে। আর আশুরা সেই তারিখের সাথে মিলে যায়, যে তারিখে কারবালার সেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
যার ফলে মহা নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাতি ও মোহাম্মদের বংশধর হোসাইন এবং আলী অর্থাৎ ইমাম হোসাইন (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেন। সুন্নি মুসলমানদের জন্য এটি প্রাথমিকভাবে একটি ধর্মীয় প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে এবং এর বাইরে এইদিনে রোজা রাখার একটি উপলক্ষ্য রয়েছে।
আজকের পাঠ্যক্রম- ১০ মহররম এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- ২০২৪ সালে মহরম কোন তারিখে পালিত হবে
- হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত
- ১০ মহররম এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- আশুরার সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য
- শেষকথা
২০২৪ সালে মহরম কোন তারিখে পালিত হবে
১৭ জুলাই-২০২৪ বুধবার বাংলাদেশে পবিত্র ১০ মহরম বা আশুরা পালিত হবে।
হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত
বিভিন্ন ধর্মীয় সূত্র অনুসারে জানা যায় যে, ধর্মীয় সংকটময় সময়ের মধ্যে ইয়াজিদের উত্তরাধিকার সূত্রে কারবালার যুদ্ধ হয়েছিল। উত্তরাধিকার পাওয়ার পরেই ইয়াজিদ মদিনার গভর্নর হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও আরো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ইয়াজিদ তার আনুগত্যে অঙ্গীকার করতে বাধ্য করার জন্য নির্দেশ দিয়ে ছিলেন।
তবে হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) অবশ্য এ ধরনের ওয়াদা করা থেকে নিজে বিরত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ইয়াজিদ প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে যাচ্ছে এবং নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নাহ পরিবর্তন করতেছে। তাই তিনি তাঁর পরিবার, পুত্র, ভাই এবং ইমাম হাসান (রাঃ) পুত্রদের নিয়ে মক্কায় আশ্রয় গ্রহণ জন্য প্রার্থনার ক্ষেত্রে মদিনা ত্যাগ করেন।
মক্কায় পৌঁছে হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) জানতে পারে যে, হজ্বের সময় পবিত্র নগরীতে তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ইয়াজিদ তার ঘাতকদের পাঠিয়েছে। হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) পরিস্থিতি অন্য রকম হচ্ছে এটা না জেনেই মক্কা শহরের পবিত্রতা এবং কাবার পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য নিজে তাঁর হজ্ব পরিত্যাগ কবন এবং তার আশেপাশের অন্যদেরকে নিয়ে কুফায় যাওয়ার জন্য আগ্রহ করা হয়।
কারবালার এই যুদ্ধ ১০ মোহররম ৬১ হিজরী সন মতাবেক ১০ ই অক্টোবর ৬৮০ সকাল হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে। হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর অল্প সংখ্যক লোক এবং পরিবারের সদস্যরা সব মিলিয়ে সর্মোবট ৭২ জন পুরুষ এবং মহিলার পাশাপাশি শিশুও ছিল। অপর দিকে উমর ইবনে সা’আদ এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁরা লড়াই করেন এবং নদীর কাছে নিহত হয়। যেখানে থেকে তাদের পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি।
হুমাইয়া সৈন্যরা হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এবং তার পুরুষ অনুসারীদের হত্যা করেন এবং তাদের তাবু লুট করে মহিলাদের গয়নাসহ সবকিছু লুট করে নেয় এবং আলী ইবনে হোসাইন জয়নুল আবেদীন, তাঁর যে চামড়ার উপরে সেজদা করতেন সেটিও তারা নিয়ে নেয়। এমনকি হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) বোন জয়নবকে ক্রীতদাস মহিলাদের সাথে দামিস্কে শাসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য এক বছর পরে তাকে মদিনায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
১০ মহররম এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর হাদিসের ভিত্তিতে জানা যায় যে, ইসলামের সুন্নি সম্প্রদায় এর মানুষ আশুরার দিনে অর্থাৎ মোহররমের মাসের ১০ তারিখ যেদিন লোহিত সাগরে পথ তৈরি করে নবী মুসা (আঃ) ও তার অনুসারীরা ফেরাউনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে ছিলেন, সেই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য রোজা রাখার সুপারিশ করা হয়।
পাশাপাশি মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে মদিনার ইহুদিরাও নিস্তার পর্ব পালনে মহরম মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখতো। এবং সহীহ আল বুখারী হাদিস এর বর্ণনা অনুসারে মুসলমানদের এই দিনে রোজা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আবার এটাও নির্ধারিত হয় যে, এই পালন জেন ইহুদিদের দ্বারা উদযাপন করা নিস্তার পর্বের উৎসব থেকে অবশ্যই আলাদা হওয়া উচিত এবং আর এই তিনি বলেছিলেন যে, মুসলমানেরা যেন একদিনের পরিবর্তে দুই দিন রোজা রাখে। আর এই তারিখ হবে মহরম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা মহরম মাসের ১০ ও ১১ তারিখ। মুসলমানদের এই দুই দিন রোজা রাখা যেতে পারে অর্থাৎ আশুরার আগের দিন থেকে আশুরার দিন পর্যন্ত বা আশুরার দিন থেকে আশুরার পরের দিন পর্যন্ত।
আশুরার সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য
অনেক গুলি ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে মহরম মাসের ১০ অর্থাৎ আশুরার এই দিনটি। তাইতো এই দিনটির তাৎপর্য ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে অনেকখানি। ইসলামে দিনটির তাৎপর্য সমূহ-
*** এই ১০ ই মোহরম তারিখে খোদাদ্রোহী বা মহান আল্লাহর বিরোধী ফেরাউন বিপুল সেনাবাহিনী নিয়ে নীলদরীয়ার অতল তলে ডুবে মরে যায়ান। আর বনী হযরত মুসা (আঃ) তার অনুসারীদের নিয়ে নীল নদের পানির উপর দিয়ে পার হয়ে যান।
*** আল্লাহ পাক ১০ই মহরম তারিখে আসমান অর্থাৎ আকাশ, জমি, লঘুকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই ১০ মহররম তারিখে মহাপ্রলয় ও কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।
*** মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এই মহররমের ১০ তারিখে ঈমানের মহা কঠিন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নমরুদের সেই অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন ।
*** ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রতীক হযরত আইয়ুব (আঃ) মহরম মাসের ১০ তারিখে আঠারো বছর কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত থাকার পর মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আকস্মিকভাবে তিনি আরোগ্য লাভ করেন।
*** মহান আল্লাহ তা’আলা সকল মানব জাতির পিতা হযরত আদম (আঃ) কে মহরম মাসের ১০ তারিখে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন।
*** হযরত নূহ (আঃ) এর আমলে ৪০ দিনের মহাপ্লাবণের পরে দশই মোহররম নৌকা থেকে হযরত নূহ (আঃ) ও অনুসারিরা বেলাভূমিতে অবতরণ করেছিলেন।
*** হযরত ইয়াকুব (আঃ) তার হারানো প্রিয় ছেলে হযরত ইউসুফকে (আঃ) ফিরে পান এবং এমনকি দৃষ্টিশক্তি আবার ফিরে পান মহরম মাসের ১০ তারিখে।
*** হযরত ইদ্রিস (আঃ) সশরীরে জান্নাতে প্রবেশ করে্ন এই ১০ই মহরম তারিখে।
শেষকথা
হে আল্লাহ আপনি আমাদের প্রত্যেক মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ ভাবে ১০ মহররম এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য ভালোভাবে জানার, বুঝার ও আমল তাওফিক দান করুন। এবং এই আমলের মাধ্যমে আমাদের দুনিয়া ও পরকালের শান্তি ও রহমত লাভের তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করতে তাওহিদের কালেমার সাক্ষ্য দেয়ারও তাওফিক দান করুন। আমিন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url