জাতীয় উদ্যান আলতাদীঘি ঘুরে আসি

যান্ত্রিক ও একঘেয়েমি কর্ম জীবনের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আমাদের মাঝেমধ্যেই মনে হয়, যদি পারতাম চেনা গণ্ডি  ছেড়ে দূরে অন্য কোথাও  চলে যেতে ! অনেকেরই ইচ্ছে  হয়, অন্তত একদিনের  জন্য হলেও সব ব্যস্ততা ভুলে সুন্দর একটি দি ন কাটাতে! আর মানুষের এই স্বভাবসুলভ ইচ্ছাকে পূরণ করতেই আজ আমরা  আপনাদের  পরিচয় করিয়ে  দেব এক  অতুলনীয়  স্থানের  সঙ্গে। 

যার  নাম  আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান  নওগাঁ  জেলার ভারত সীমান্ত  ঘেসা  ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। এই উপজেলায় আলতাদিঘী নামের একটি দিঘীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সুবিশাল (শালবন) বনভূমি। 

শালবন এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ ২৬৪.১২ হেক্টর জমির এই বনভূমির ঠিক পূর্ব দিকে রয়েছে প্রায় তেতাল্লিশ একর আয়তনের সেই এক বিশাল দিঘী। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে এটিকে 'আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান' হিসাবে ঘোষণা করেছে। ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও জাতীয় উদ্যানের পশের ১৭.৩৪ হেক্টর বনভুমিকে ৯ জুন ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশের বন অধিদপ্তর বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা হিসাবে ঘোষণা করে। 

সূচীপ্ত্রঃ

  • ভূমিকা
  • ধমইর হাট উপাজেলার দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা 
  • দিঘীর আকার
  • জাতীয় উদ্যান আলতাদীঘি ঘুরে আসি
  • কিভাবে যাবেন আলতাদীঘি
  • কোথায় থাকবেন আলতাদীঘি
  • কোথায় খাবেন আলতাদীঘি
  • শেষ কথা

ভূমিকা   

আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম একটি স্থান। এখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন এক বিসাল দীঘি যা হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের পুরনো দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ছারাও শাল বনের মধ্যে গেলে আপনি দেকগতে পাবেন বড় বড় উই ঢিপী ও আকা-বাকা মেঠো পথ।

ধমইর হাট উপাজেলার দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা

  • জগদ্দল মহাবিহার
  • রূপকথার গ্রাম চকচান্দিড়ার ৩৬৫ পুকুর
  • মাহীসন্তোষ মসজিদ
  • ভিমের পান্টি
  • পাগল দেওয়ান মাজার ও মাদ্রাসা
  • পাগল দেওয়ান গণকবর ও বদ্ধভুমি
  • ভাঙ্গাদিঘী
  • অগ্রপুরী বিহার

দিঘীর আকার

আলতাদিঘীটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী অংশে অবস্থিত একটি প্রাচীন জলাশয়। দিঘীটির আয়তন ৪৩ একর। এই জলাশয় দৈর্ঘ্যে ১১০০ মিটার এবং প্রস্থে ৫০০ মিটার। পাহাড়ের মতো পাড়গুলি উঁচু এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড় শালবনে ঢাকা। পূর্ব বেশ কিছু জনবসতি রয়েছে এবং উত্তর পারঘেসে ভারত সীমান্ত। প্রাচীন দিঘীগুলির মধ্যে এটিই বোধ হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সচল দিঘী। 

জাতীয় উদ্যান আলতাদীঘি ঘুরে আসি

স্থানীয় মানুষের মুখে একটা লোককাহিনী প্রচলিত আছে যে, প্রজা সাধারণের পানিয়জলের সংকট নিরসনকল্পে প্রজাগণ রাজমাতার কাছে গেলে রাজমাতা বিষয়টি সমাধানের কথা দেন। আর রাজা বিশ্বনাথ রাজমাতার সন্তুষ্টিকল্পে দীঘিটি খনন করেন। রাজমাতার শর্ত ছিল যে, তিনি পায়ে হেঁটে যতদূর অবধি যেতে পারবেন সেই পর্যন্ত দীঘিটি খনন করতে হবে। রাজমাতার শর্ত পূরণের বিষয়ে মন্ত্রীবরের সঙ্গে রাজা পরামর্শ করে আলতা নিয়ে আসেন। 

অতঃপর, একদিন রাজ্যে ঢোল পিটিয়ে মন্ত্রীবরের সবাই রাজমাতা কে অনুসরণ করেন এবং রাজমাতা হাঁটতে শুরু করেন। কিন্তু রাজমাতার হাটা আর শেষ হয়না, তিনি হাঁটতেই থাকেন । তারপর, পরিস্থিতি প্রতিকুল দেখে মন্ত্রীবর দীঘির শেষ প্রান্তে রাজমাতার পায়ে আলতা ছিটিয়ে দিয়ে তাকে বলেন, রাজমাতা আপনার পা থেকে রক্ত বের হচ্চে। তখন রাজমাতা হাঁটা থামিয়ে দেন । 

আর যেই স্থানে গিয়ে রাজমাতা হাটা বন্ধ করেন, শুরুর স্থান হতে সেই পর্যন্ত রাজা বিশ্বনাথ এই দীঘি খনন করেন। সেই হতে এই দীঘিটি নাম হয় আলতা দীঘি।  ইতিহাস সম্বন্ধে সঠিকভাবে কিছু বলা যায় না। তবে এই জলাশয় টি জগদ্দল মহাবিহারের সমসাময়িক অথবা পাল যুগ পূর্ববর্তী সময়ের বলে ধারণা করা যায়।

কিভাবে যাবেন আলতাদীঘি

নওগাঁ জেলা সদরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হতে বাসে চড়ে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ধামইরহাট আসতে হবে। ধামইরহাট থেকে (আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান গ্রামে হয়ার কারনে ভ্যান গারি করে জেতে হবে) আলতাদীঘি যাওয়ার রিকশা ও ভ্যান পাবেন।

কোথায় থাকবেন আলতাদীঘি

ধামইরহাটে তেমন ভালো কোন আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা নেই। নিজের পছন্দমত বা ভালো মানের আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চাইলে আপনাকে নওগাঁ জেলা সদরে থাকতে হবে। নওগাঁতে হোটেল প্লাবন, হোটেল যমুনা, হোটেল অবকাশ, মল্লিকা ইন, হোটেল ফারিয়াল ও হোটেল রাজ প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসকল হোটেল ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত লাগবে।

কোথায় খাবেন আলতাদীঘি

ধামইরহাটে বেশ কিছু সাধারণ মানের খাবারের হোটেল পাবেন। যেখানে আপনি কম টাকায় সাধারণ মানের খেতে পারবেন। তাছাড়া বালুডাঙ্গা বাস ষ্টেশনে সাধারণ মানের খাবারের দোকান রয়েছে। এছারাও আপনি চাইলে ভালো মানের খাবারের জন্য নওগাঁর গোস্তহাটির মোড়ে ভালমানের কয়েকটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ পাবেন। 

শেষ কথা

ব্যাস আশা করছি আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান  সম্পর্কে অনেক ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। যা কিনা আপনার ভ্রমণে সাহায্য করবে। জাতীয় উদ্যান আলতাদীঘি দেখতে বছরের যে কোন সময় দর্শনার্থীরা অল্প ভিড় করলেও দুই ঈদে দর্শনার্থীদের উপচে পরা ভিড় লক্ষণীয়। 

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নওগাঁর মাটির প্রাসাদ

পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান এর প্রতি প্রয়োজনীয় নজরদারির দিলে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসাবে এটি গড়ে উঠবে। তাই সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রাজধানী ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর অনেকে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানে পিকনিক ও ভ্রমনে আসেন। 

ঠিক আছে, দেখাযা্ক আগামী আর্টিকেলে কি থাকছে? 

তবে বাইক নিয়ে ভ্রমণে বের হলে সব সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। ভালো মানের হেলমেট এবং সেফটি গার্ড ব্যবহার করুন। সব সময় নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন।     

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭