সর্বগুণী আদার যত আছে গুণাগুণ
আমাদের সবার সুপরিচিত একটি ভেষজ উপাদানে নাম আদা। আমরা আদা মূলত রান্নায় স্বাদ বাড়াতে মশলা হিসেবেই বেশি ব্যবহার করে থাকি। তবে মশলার সাথে সাথে এর মধ্যে অনেক পরিমাণে ভেষজ গুণও আছে। নানা রোগ নিরাময় ও পুষ্টিগুণে ভেষজ উপাদান আদার জুড়ি মেলা ভার।
আদা একটি উদ্ভিদের পরিবর্তিত কাণ্ড যা মানুষের মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মশলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। আমরা আদা খাদ্য, পানীয় তৈরীতে, আচার, ঔষধ ও সুগন্ধি তৈরীতে ব্যবহার করে থাকি। আদা বাংলাদেশের সেই প্রথম মশলা গুলির মধ্যে একটি যা, এশিয়া থেকে ইউরোপে রপ্তানি করা হয়েছিল। যা মূলত মশলার বাণিজ্যের মাধ্যমে পৌঁছেছিল।
আজকের পাঠ্যসূচী- সর্বগুণী আদার যত আছে গুণাগুণ
- ভূমিকা
- আদার ঔষধি ব্যবহার
- আদার বিস্তৃতি
- আদা চাষাবাদে জমি ও মাটি
- আদার পুষ্টি গুণ
- সর্বগুণী আদার যত আছে গুণাগুণ
- আদার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
- আদা খাওয়ার নিয়ম
- শেষকথা
ভূমিকা
প্রাচীন গ্রীস এবং রোমানরা এটি ব্যবহার করত। কাঁচা আদা চিবিয়ে খেলে ঠাণ্ডা সেরে যায়। আদা ছোট রাইজোম জাতীয় বীরুৎ। এদের রাইজোম সুগন্ধী ও ঝাঁঝালো স্বাদযুক্ত। এর ভিতরের রং ফিকে হলুদ। গাছটি ২ থেকে ৩ ফুট উচু হতে দেখা যায়। এর পাতাগুলি সুন্দর ভাবে সাজানো থাকে।
আদার ঔষধি ব্যবহার
আদা মুলতঃ একটি ভেষজ ঔষধ। আমরা মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা শুকিয়ে চিবিয়ে খেয়ে থাকি। আবার এটি সর্দি, কাশি, আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপায় চিবিয়ে বা রস করে খাওয়া হয়। আদা আপনার গোপন সমস্যা দূর করবে, আবার আদা একটি মহা ঔষধি। বাড়াবে কার্যকারিতা ঠিকমতো বজায় রাখতে আদা সাহায্য করে।
আদার বিস্তৃতি
বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের চেয়েও আদা চাষ করা বেশি লাভজনক। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও পার্বত্য জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে আদা চাষ হয়ে থাকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ রাজ্যের অনেক জায়গায় আদার চাষ হয়।
আদা চাষাবাদে জমি ও মাটি
জল সহজে নিকাশের সুব্যবস্থা আছে এমন উঁচু বেলে-দো-আঁশ মাটি আদা চাষের জন্য উপযোগী। আদার বীজ সাধারণতঃ রোপণ করা হয় ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাসে (এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মে মাস) পর্যন্ত লাগানো যায়। আদা ১২-১৫ গ্রাম ওজনের ১-২ টা অংকুর বিশিষ্ট কন্দ লাগানো হয়। ৪০-৪৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২০ সে.মি. দূরে ৫ সে.মি. গভীরে আদা লাগানো হয়। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
আদা লাগানোর ৯-১০ (নয়-দশ) মাস পর উঠানোর উপযোগী হয়। গাছের প্রায় সব পাতা শুকিয়ে গেলে আদা তোলা হয়। ফলন প্রতি হেক্টরে ১২-১৩ (বারো- তেরো) টন। সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আদা উত্তোলন করা হয়।
আদার পুষ্টি গুণ
পুষ্টি পরিমাণ
প্রোটিন ২·৩%,
শ্বেতসার ১২·৩% ,
আঁশ ২·৪% ,
খনিজ পদার্থ ১·২%
জল ৮০·৮%
সর্বগুণী আদার যত আছে গুণাগুণ
*** জ্বর, ঠাণ্ডা লাগা, ব্যথায় আদা উপকারী।
*** অতিরিক্ত ওজন কমাতে আদা সাহায্য করে।
*** বসন্ত রোগে এর রস উপকারী।
*** আদার রস শরীর শীতল করে।
*** হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী। এক টুকরো আদা চিবিয়ে তার রস নিয়মিত খেলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে। হৃদরোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
*** কাশি এবং হাঁপানির জন্য আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে বেশ উপশম হয়।
ভারতবর্ষ তথা, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তানের মত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিতে প্রাচীনকাল থেকে আদা ব্যবহার শুরু হলেও এর গুণাগুণ দেখে পরবর্তীকালে সারা বিশ্বে আদার চাষ ও ব্যবহার শুরু হয়, বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলিতে।
আদায় রয়েছে-
*** পটাশিয়াম
*** আয়রন
*** ম্যাগনেশিয়াম
*** ক্যালশিয়াম
*** ফসফরাস
*** সোডিয়াম
*** জিংক
*** ম্যাঙ্গানিজ
*** ভিটামিন এ, বি৬, ই ও সি
*** অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট
*** অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এজেন্ট।
যার কারণে সব বয়সী মানুষ আদা খেতে পারেন, বিশেষ করে শিশুদের জন্য আদা–মধু–পানি সুস্থ দেহ ও সতেজ মনের জন্য খুবই কার্যকর।
আদার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
সকল ভেষজ উপাদানে ভাল মন্দ উভয় দিক রয়েছে, তাই নিয়মিত আদা খেলে যেকোনো অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হয়। তবে অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। উপকারী আদাও অতিরিক্ত খেলে দেখা দিতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যেমন-
- গর্ভাবতী মহিলাদের আদা না খাওয়াই ভালো। আদায় বেশ কয়েক ধরনের স্টিম্যুলেট রয়েছে যা শরীরের পেশী মজবুত করে। আর সেই জন্যই গর্ভবতী মহিলাদের আদা এড়িয়ে চলতে বলা হয়।
- আদায় রয়েছে অ্যান্টি প্লাটিলেট বৈশিষ্ট্য যার কারণে অতিরিক্ত আদা খেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে। রসুন ও লবঙ্গের সঙ্গে আদা খেলে রক্তপাতের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত আদা খেলে হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া ঝাপসা দষ্টিশক্তি, অনিদ্রাও হতে পারে আদা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে।
- অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে আদা বেশি খেলে শরীরে র্যাশ বা চুলকানি হতে পারে। অনেক সময় শরীর বা মুখ ফুলে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত আদা খেলে অনেক সময় ডায়রিয়া বা পেট ব্যথার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আদা খাওয়া বা রান্নায় আদা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখুন।
আদা খাওয়ার নিয়ম
আদা বেশীরভাগ সময় রান্নায় বা তরকারিতে মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে কাঁচাও খাওয়া যায় এই মশলা। আদার ওষুধি গুণ পেতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচা আদা বা পিষে রস করে খাওয়া যায়। এ ছাড়া চা, মধু বা গরম পানিতে মিশিয়েও খাওয়া যায় এই আদা। অনেকেই আদা একবারে পিষে ফ্রিজে রেখে দেন। এ আদা দিয়ে কিন্তু ঔষধি উপকার পাওয়া যাবে না।
শেষকথা
আমার প্রাণ প্রিয় পাঠক পাঠিকা এই ছিলো আজকের আর্টিকেলে, সর্বগুণী আদার যত গুণাগুণ। আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে ও উপকারে আসে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবাই ভালো থাকবেন এবং নিজেদের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
ঠিক আছে, দেখাযা্ক আগামী আর্টিকেলে কি থাকছে?
তবে বাইক নিয়ে ভ্রমণে বের হলে সব সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। ভালো মানের হেলমেট এবং সেফটি গার্ড ব্যবহার করুন। সব সময় নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url