রাজশাহী বিভাগের কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
রাজশাহী বিভাগ বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। রাজশাহী বিভাগ ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের পর বাংলাদেশের তৃতীয় জনবহুল বিভাগ। আয়তনে চতুর্থ বৃহত্তম বিভাগ। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ২৩৩৫৩১১৯ (দুইকোটি তেত্রিশ লাখ তিরপান্ন হাজার একশত উনিশ) জন এবং আয়তন ১৮,১৫৪ বর্গ কিলোমিটার।
রাজশাহী বিভাগটি একটি প্রাচীন এলাকা হওয়ার সুবাদে এখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রত্নস্থান দেখা যায়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রাজশাহী বিভাগে ১৩৪ (একশত চউত্রিশ) টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এরমধ্যে বৃহত্তর রাজশাহীর বর্তমান নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
পাঠ্যসূচী- রাজশাহী বিভাগের কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
- ভূমিকা
- রাজশাহী বিভাগের কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
- শিক্ষা ও রেশমীবস্ত্রর জন্য বিখ্যাত রাজশাহী জেলা
- দই ও লাল মরিচের জন্য বিখ্যাত বগুড়া জেলা
- তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত সিরাজগঞ্জ জেলা
- মানসিক হাসপাতালের জন্য বিখ্যাত পাবনা জেলা
- আম ও কাঁসা-পিতলের জন্য বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
- কাঁচাগোল্লার জন্য বিখ্যাত নাটোর জেলা
- ধান ও আমের জন্য বিখ্যাত নওগাঁ জেলা
- চিনিকলের জন্য বিখ্যাত জয়পুরহাট জেলা
- শেষকথা
ভূমিকা
রাজশাহী শহরে দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রধান কার্যালয় অবস্থিত যেমন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পোস্টাল একাডেমী, বাংলাদেশ স্টাডিজ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল সদর দপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ এডাকেমী, ইত্যাদি। রাজশাহী বিভাগে ৮ (আট) টি জেলা, ৬৭ (সাতষট্টি) টি উপজেলা, ৫৯ (উনষাট) টি পৌরসভার এবং ৫৬৪ (পাচশত চৌষট্টি) টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
রাজশাহী বিভাগের কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আম ও পান চাষ হয় রাজশাহী বিভাগে। আবার মিঠা পানির মাছ চাষে দেশের প্রথম সারির বিভাগ হচ্ছে রাজশাহী। এছাড়া রাজশাহী বিভাগ গবাদি পশুর যে চাহিদা তা পূরণে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে। রাজশাহী বিভাগের আয়তনের দিক হতে সবচেয়ে বড় জেলা নওগাঁ এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে বগুড়া জেলা সবচেয়ে বড়। বাংলাদেশের প্রথম সারির শহর রাজশাহী ও বগুড়া শহর।
আমাদের আজকের আলচ্য বিষয় রাজশাহী বিভাগের কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত। চলুন দেখাজাক-
শিক্ষা ও রেশমীবস্ত্রর জন্য বিখ্যাত রাজশাহী জেলা
রাজশাহী জেলা হেলো বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহানগরী। এটি উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় জেলা শহর। বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও পরিস্কার পরিছন্ন নগরী রাজশাহী। সমগ্র বাংলাদেশে চতুর্থ বৃহত্তম ও জনবহুল শহর। পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত রাজশাহী শহর। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর শহরের পাশাপাশি সিল্কসিটি, গ্রীণসিটি, ক্লিনসিটি ও শিক্ষা নগরী রাজশাহী।
বাংলাদেশে যতগুলো শহত আছে তার মধ্যে কম বায়ু দূষণের শহর হচ্ছে রাজশাহী। প্রাচীন বাংলার বেশ কয়েকটি রাজধানী শহর রাজশাহী নিকটে অবস্থিত। যেমন- লক্ষণাবতী, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজশাহী তার আকর্ষণীয় রেশমীবস্ত্র, আম, লিচু এবং মিষ্টান্নসামগ্রীর জন্য প্রসিদ্ধ। রেশমীবস্ত্রের কারণে রাজশাহীকে রেশম নগরী নামেও ডাকা হয়।
দই ও লাল মরিচের জন্য বিখ্যাত বগুড়া জেলা
শিল্প ও বাণিজ্যিক দিক হতে বগুড়া জেলা উত্তরবঙ্গের অন্যতম একটি শহর। রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত বগুড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের "শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম"। এছাড়া শহর থেকে সামান্য দূরেই শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ অবস্থিত। বগুড়া বাংলাদেশে দইয়ের জন্য খুব বিখ্যাত। তবে বিগত বছর গুলোতে লাল মরিচের উৎপাদনে বগুড়া জেলায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা কিনা ১০০ (একশত) কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
ব্যবসা- বাণিজ্যের উন্নতির সঙ্গে এখানে ব্যাংকিং ব্যাবস্থাপনারও এসেছে নতুন মাত্রা। বগুড়া শহরে হতে মাত্র ১১ (এগারো) কি.মি. উত্তরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। যা প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এক সময় এবং সেসময় এটি পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান মেজর জিয়াউর রহমান বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের রাজধানী বলা হয়। বগুড়া উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান শহর ।
তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত সিরাজগঞ্জ জেলা
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা হলো সিরাজগঞ্জ জেলা। সিরাজগঞ্জ জেলা উত্তরবঙ্গ'র চতুর্থ ও রাজশাহী বিভাগের তৃতীয় সর্বোচ্চ উন্নত জেলা শহর এবং একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যার দিক হতে সিরাজগঞ্জ বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। জেলার দারিদ্র্যের হার মাত্র ৬ (ছয়) ভাগ। তাঁতশিল্পের কারণে এই জেলা বিশ্বের দরবারে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু এবং সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের অপূর্ব সৌন্দর্য এ জেলাকে পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি এনে দিয়েছে।
তা ছাড়াও এই জেলা বার্জ মাউনন্টেড বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, রবীন্দ্র কাঁচারিবাড়ি, শেখ রাসেল পৌর শিশুপার্ক, বাঘাবাড়ি নদী বন্দর, বাঘাবাড়ি প্যারামাউন্ট বাংলা ট্রাক এনার্জি কনসোর্টিয়াম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম দিকে ইকোপার্ক, ইত্যাদি বিখ্যাত স্থাপত্য ও শৈল্পকর্মের নিদর্শন এ জেলাকে সমৃদ্ধতর করেছে।
মানসিক হাসপাতালের জন্য বিখ্যাত পাবনা জেলা
বাংলাদেশের মধ্য ভাগের একটি জেলা পাবনা জেলা। উপজেলার সংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত জেলা পাবনা। এই জেলার ঠিক মধ্যভাগ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদ। ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতু এবং তার পাশেই লালন শাহ সেতু অবস্থিত পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায়।
এই জেলায় নামকরা অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে পাবনা ক্যাডেট কলেজ, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ইত্যাদি। এছাড়া পাবনার বিখ্যাত ঐতিহাসিক সরকারি মানসিক হাসপাতাল রয়েছে এই জেলায়। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এই জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছে যেটি পদ্মা নদীর পাশেই অবস্থিত।
আম ও কাঁসা-পিতলের জন্য বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
বাংলাদেশের সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতি কৃষির নির্ভরশীল। এই জেলাটির অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। কৃষিকাজ করে তারা মূলত তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। আবার অনেকে মৌসুমি ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজে্লায় মৌসুমি আম ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। কারণ আমের মৌসুমে শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হয়ে উঠে লোকে লোকারণ্য।
আমের মৌসুমে এখানে সবচেয়ে বড় আম বাজার বসে, যা বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় না। আম ব্যবসায়ী ছাড়াও এখানে কাঁসা-পিতল ব্যবসায়ী ও কৃসি পূর্ণ টমেটো ব্যবসায়ী এবং পান ব্যবসায়ী রয়েছে। তবে আমের ব্যবসায় এখানকার প্রধান ব্যবসা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী ও ভালো মানের আম উৎপাদনকারী হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অনেক পরিচিত, কারণ এই ফলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অধিকাংশ জমি বিভিন্ন ধরনের আমের গাছে ভরপুর থাকে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয় শিবগঞ্জ, ভোলাহাট,নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত আমের মধ্যে হচ্ছে, ফজলি, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি, আশ্বিনা, বোম্বাই অন্যতম ।
কাঁচাগোল্লার জন্য বিখ্যাত নাটোর জেলা
রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে কাছের জেলা হলো নাটোর জেলা। জেলার দক্ষিণ দিকে পাবনা জেলা ও কুষ্টিয়া জেলা, উত্তর দিকে নওগাঁ জেলা ও বগুড়া জেলা, পূর্ব দিকে পাবনা জেলা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিম দিকে রাজশাহী জেলা অবস্থিত। জেলাটির মোট আয়তন ১৯০৫.০৫ বর্গ কিলোমিটার। এই জেলাটি মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমের একটি জেলা।
নাটোর জেলা আয়তনের দিক হতে বাংলাদেশের ৩৫ (পয়ত্রিশ) তম জেলা। নাটোর জেলা বিভিন্ন দিক হতে বিখ্যাত, যেমন- উত্তরা গণভবন, কাঁচাগোল্লা, রাণী ভবানী, বনলতা সেন, নাটোর রাজবাড়ী, চলনবিল, হালতি বিল এর জন্য বিখ্যাত। নাটোর জেলা দূর্যোগ প্রবণ এলাকা নয় কিন্তু সিংড়া উপজেলা ও লালপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আত্রাই নদী এবং পদ্মা নদী্র কারণে মাঝে মাঝে বন্যা দেখা দেয়। নাটোরের কাঁচাগোল্লা সারা দেশে বিখ্যাত।
ধান ও আমের জন্য বিখ্যাত নওগাঁ জেলা
রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যা অনুযায়ী জেলাটি বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। ভৌগোলিক ভাবে নওগাঁ জেলা বৃহত্তর বরেন্দ্র ভূমির একটি অংশ। দেশের উত্তর- পশ্চিম এলাকার বাংলাদেশ- ভারত সীমারেখা সংলগ্ন এই জেলাটি ১লা মার্চ ১৯৮৪ সালের আগ পর্যন্ত নওগাঁ মহকুমা হিসেবে ছিল, সেটিই এখন বাংলাদেশের নওগাঁ জেলা।
নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের অন্যতম ধান ও আম উৎপাদনকারী জেলা। নওগাঁ জেলা বর্তমানে উৎপাদনে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলাকে আমের রাজধানী বলা হয়।
চিনিকলের জন্য বিখ্যাত জয়পুরহাট জেলা
জয়পুর হাট জেলা রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে ছোট্ট একটি জেলা। এই জেলার উত্তর দিকে দিনাজপুর জেলা, দক্ষিণ দিকে বগুড়া জেলা ও নওগাঁ জেলা, পূর্ব দিকে বগুড়া জেলা ও গাইবান্ধা জেলা, পশ্চিম দিকে নওগাঁ জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। জেলাটির মোট এলাকার পরিমাণ ৯৬৫.৮৮ বর্গ কিলোমিটার। জয়পুরহাট জেলাকে বলা হয় উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার। এই জেলার মৃৎ শিল্পের কাজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। জয়পুরহাট জেলায় অবস্থিত চিনিকল হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিনিকল এবং জামালগঞ্জ এর কয়লা খনি দেশের বৃৃহত্তম কয়লা খনি।
শেষকথা
ঠিক আছে, দেখাযা্ক আগামী আর্টিকেলে কি থাকছে?
তবে বাইক নিয়ে ভ্রমণে বের হলে সব সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। ভালো মানের হেলমেট এবং সেফটি গার্ড ব্যবহার করুন। সব সময় নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url