জানলে অবাক হবেন লবঙ্গ সম্পর্কে
আরও পুড়ুনঃ যে কারণে মিষ্টি আলু বেশী করে খাবেন
রান্নার স্বাদ বাড়াতে এবং শরীরিক বিভিন্ন উপকারিতা পেতে বাঙ্গালিদের কাছে লবঙ্গ মশলা হিসেবে বেশি পরিচিত। আবার লবঙ্গের উপকারিতা পাওয়ার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রান্নার কাজে লবঙ্গ ব্যবহার করে থাকে। লবঙ্গ শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না পাশাপাশি লবঙ্গে আছে নানা রকম শারীরিক উপকারিতা।
সূচীপ্ত্র- জানলে অবাক হবেন লবঙ্গ সম্পর্কে
- লবঙ্গের অনেক অজানা তথ্য জানুন
- জানলে অবাক হবেন লবঙ্গ সম্পর্কে
- লবঙ্গের পুষ্টি উপাদান
- লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম
- লবঙ্গের অপকারিতা
- শেষকথা
লঙ্গের অনেক অজানা তথ্য জানুন
লবঙ্গের মধ্যে যে পরিমাণ উপকারি খনিজ পদার্থ রয়েছে তা হলো- ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদি খনিজ উপাদান। লবঙ্গে উপস্থিত এসব খনিজ উপাদানগুলো মানব দৈহিক স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বিশেষ অবদান রাখে। লবঙ্গ আমাদের রান্নায় ব্যবহার করার এক ধরণের মসল্লা জার ইংরেজি নাম ক্লোভ এবং এর বিজ্ঞান সম্মত নাম হল সিজিজিয়াম অ্যারোমাটিকাম। গাছের ফুলের কুড়িকে শুকিয়ে তৈরি করা হয় ‘লবঙ্গ’। আবার একে লং বলেও ডাকা হয়। লবঙ্গের সুগন্ধের মূল কারণ “ইউজেনল” নামক যৌগ।
পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে, এখনো লবঙ্গকে হারবাল জাতীয় ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করে। মূলত লবঙ্গের উপকারিতার জন্যই এর এতো ব্যবহার জনপ্রিয়তা খুব বেশী। চলুন জানা যাক লবঙ্গের উপকারিতা গুলো-
- আমাদের অনেক সময় পেট ফেঁপে থাকে এবং পেটের ভেতর গড় গড় করে শব্দ হয়। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়। এ অবস্থায় আমরা যদি কিছু পরিমাণ লবঙ্গ অল্প ভেজে গুঁড়া করে ৭ গ্রাম পরিমাণ সকাল-বিকাল দু’বেলা পানিসহ খেলে এ সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।
- অনেক সময় পায়খানা হবার সময় অনেক সময় পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা করলে তাকে আমজ শূল বলে। যদি আপনার আমজ শূল হয় তাহলে ৩-৪ টি লবঙ্গ বেটে তাতে অল্প পরিমাণ গরম পানি মিশিয়ে সকাল বিকাল দু’বেলা খান। আশাকরি এভাবে ক্যেকদিন খেলে আমজ শূল রোগের উপশম হবে।
আরও পড়ুনঃ শীতকালীন খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত
- অনেকেরই পিপাসা রোগ হয়ে থাকে। শুধু ঘন ঘন পানির পিপাসা লাগে। তাহলে ধরে নিতে হবে এরা প্রায়ই চোরা অম্বলে ভোগেন। এর পরিণতি খুব একটা ভালো না বললেই চলে। এরকম দেখা গেলে ৪ গ্রাম পরিমাণ লবঙ্গ গুড়া করে সাথে ৩/৪ ফোঁটা মধু মিশিয়ে সকাল বিকাল জিভ দিয়ে চেটে খেলে পিপাসা রোগ সেরে যাবে।
- কখনো কখনো কোনো কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। সবকিছুতেই যেন অরুচি ভাব দেখে যায়। এ রকম হলে লবঙ্গ ভেজে গুড়া করে নিন। ঐ গুঁড়া অল্প পরিমাণ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নিবেন তারপর খালি পেটে ও দুপুরে খাবারের পর খেলে খাবারে রুচি আসবে।
- যে কোনো কারণে মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। ধোঁয়া, রোদ, ঠাণ্ডা লাগার ফলে বা অন্য কোনো কারণে কখনো কখনো মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। এছাড়াও নানা কারণে এ রোগ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে লবঙ্গ গুঁড়া ২/৩ বার গরম পানিসহ খেলে উপশম হবে।
- দাত ব্যথা হলে প্রথমে গরম পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে ২/৩ টি লবঙ্গ থেঁতো করে দাঁতের গোড়ায় চেপে রাখলে ব্যথা তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
- সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা প্রতিরোধে লবঙ্গকে বিবেচনা করে মহৌষধ হিসেবে। এটি ভালকরে চিবিয়ে রস খেলে অথবা লবঙ্গ মুখে রেখে চুষলে ঠান্ডা লাগা, অ্যাজমা, সর্দি, কফ, গলা ফুলে ওঠা আর শ্বাসকষ্টে বেশ সুফল পাওয়া যায়।
- প্রচুচন্দ স্ট্রেস ও উৎকণ্ঠা কমাতে একটু লবঙ্গ মুখে দিয়ে চুষে খেয়ে ফেলুন। এমনকি লবঙ্গের চা এবং পানে খেলেও মেজাজ ফুরফুরে হয়ে উঠবে।
- বেশ পুরোনো ব্রণের চিকিৎসায় লবঙ্গের ব্যবহার। লবঙ্গের পেস্ট ব্রণের ওপর দিয়ে রাখলে দাগ চলে যায়।
- জ্বর ও পেটের রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের ফলে কারো খাবারে অরুচি দেখা দিলে লবঙ্গ গুঁড়া করে সকালে খালি পেটে এবং দুপুরে খাবারের পরে খেলে রুচি ফিরে আসবে।
- লবঙ্গ খাওয়ার ফলে আপনার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি রক্তপ্রবাহেরও উন্নতি ঘটে।
- লবঙ্গ ক্যান্সার, কলেরা, শরীর ব্যথা ও যকৃতের সমস্যা থেকে শরীরকে রক্ষা করে। লবঙ্গের অ্যান্টি-ব্যাক টেরিয়াল প্রপার্টিজ যে কোনো জীবাণুকে মারতে ভূমিকা রাখে।
- নিয়মিত লবঙ্গ খেলে সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লংয়ের ভিতরে থাকা রস মানুষের শরীরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শকর্রার মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা কমে যায়।
- লবঙ্গ মাড়ির সমস্যা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকর। লংয়ের মুকুল বা মাথার অংশ ওরালপ্যাথোজেনের প্রতিরোধ করে মুখকে কে সকল রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। দুর্গন্ধ দূর করতে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় দুটি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চিবিয়ে ঘুমাতে হবে।
- আসল কথা হলো লবঙ্গে থাকা ভোলাটাইল অয়েল মানুষের শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। সেই সঙ্গে জীবাণুও মেরে ফেলে। ফলে সংক্রমণজনিত কষ্ট কমতে মোটেও সময় লাগে না।
- লবঙ্গে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের মধ্যে উপস্থিত টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। ফলে শুধু স্বাভাবিক ভাবেই লিভার নয়, মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে নানান ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ঠান্ডায় শরীরের কোনো অংশ ফুলে উঠলে লবঙ্গ খেতে পারেন। এতে শরীরের ফোলা কমে যাবে।
- লবঙ্গ ব্রেস্ট ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- লবঙ্গে থাকা ফেনোলিক কম্পাউন্ড- ইউজিনল আর ইউজিনল ডেরিভাটিভস শরীরে ডেনসিটির (হাড়ে ঘনত্ব) উন্নতি ঘটে। আবার হাড়ের ভেতরের বিভিন্ন মিনারেলের ঘাটতিও পূরণ করে। ফলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
লবঙ্গের পুষ্টি উপাদান
আপনারা দেখলেন তো, ঝাঁঝালো লবঙ্গের কেমন মিষ্টি মিষ্টি সুখ! আবার ছোট-খাটো অসুখে ব্যবহার করতে পারেন লবঙ্গের মতো উপকারি এই মসলা।
যেনেনিন ১০০ গ্রাম লবঙ্গতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও তার পরিমাণ সমূহ
পুষ্টি উপাদান
পরিমাণ
- প্রোটিন ৩.২৭ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ১০.৫১ গ্রাম
- ফাইবার ৫.৪ গ্রাম
- পটাশিয়াম ৩৭০ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৪৪ মিলিগ্রাম
- ফ্যাট ০.১৫ গ্রাম
- ভিটামিন সি ১১.৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই ০.১৯ মিলিগ্রাম
- শক্তি ৪৭ কিলো ক্যালোরি
- সোডিয়াম ৯৪ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম
- আয়রন ১.২৮ মিলিগ্রাম
- ফোলেট ৬৮ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন কে ১৪.৮ মিলিগ্রাম
- কপার ০.২৩১ মিলিগ্রাম
- জিংক ২.৩২ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ ০. ২৫৮ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ৯০ মিলিগ্রাম
- ক্যারোটিন এ ৮ মাইক্রোগ্রাম
- সেলেনিয়াম ৭.২ মাইক্রোগ্রাম
লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম
সাধারণত আমরা লবঙ্গ কে মসলা হিসেবেই ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও একটি ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন উপাদান। তাই অন্যভাবে লবঙ্গের উপকারিতা পেতে খাওয়ার নিয়ম নিচে দেয়া হলোঃ
- মধুর সঙ্গে লবঙ্গ মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- গরম পানিতে লবঙ্গ ফুটিয়ে খাওয়া যায়।
- লবঙ্গ মুখে দিয়ে হালকা ভাবে চিবিয়ে খাওয়া যায়।
- খালি পেটে লবঙ্গ খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
- এছাড়া চায়ের পানি গরম করার সময় কয়েকটা লবঙ্গ দিয়ে চা খেলে সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যায়।
লবঙ্গের অপকারিতা
প্রত্যেকটা খাবার বা উপাদানের ভালো ও খারাপ দুটি দিকই রয়েছে। যেকোনো খাবারই পরিমাণের চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে শরীরে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেয়। এখত্রে লবঙ্গের কিছু ক্ষতিকর দিক আছে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে লবঙ্গের তেল শরীরে ব্যবহার করলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- পরিমানের চেয়ে বেশি লবঙ্গ খেলে শরীরের রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত লবঙ্গ খাওয়া উচিত নয়।
- যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক কম থাকে, তাদের কখনোই বেশি পরিমানে লবঙ্গ খেতে নেই।
- অতিরিক্ত সেবন করলে হাইপারগ্লাইসিমিয়ার কারণ হতে পারে।
- অকারণে লবঙ্গ মুখে দিয়ে রাখেন, এর ফলে আপনার জীবনে শরীরে উপকারের চেয়ে অপকারই ডেকে আনবে ।
শেষকথা
তাহলে আমরা জেনে গেলাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সুস্থ থাকতে চাইলে, নিয়মিত লবঙ্গ খাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন হিসেবে লবঙ্গের উপকারিতা গুলো আমাদের গ্রহণ করা উচিত। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় লবঙ্গ সেবন থেকে বিরত থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url