পেয়ারার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি পুষ্টিগুণ
পেয়ারা প্রায় সকলের প্রিয় একটি সহজলভ্য ফল। এর স্বাদ, গন্ধ আর পুষ্টিগুণে পেয়ারার জূড়ীমেলা ভার। এটি বছরের সব ঋতুতেই খুব কম দামে পাওয়া যায়। কিন্তু এর পুষ্টিগুণ আমাদের অনেকেরই অজানা। এই পুষ্টিকর ফলটি যেমন আমাদের প্রতিদিনের খাবারের অংশ হতে পারে তেমনিভাবে আমাদের অনেক অসুখ-বিসুখ থেকে বাঁচাতেও সাহায্য করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধে এ ফলের রয়েছে অনেক গুণ। পেয়ারার বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইবার। এর পাতার রস বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় যেমন-ক্যান্সার প্রতিরোধী ও সংক্রমণ, প্রদাহ, ব্যথা, জ্বর, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া ইত্যাদি ।
পেজ সূচীপ্ত্র-পেয়ারার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি পুষ্টিগুণ
- সূচনা
- পেয়ারার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি পুষ্টিগুণ
- পেয়ারার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- শেষ কথা
সূচনা
পেয়ারার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি পুষ্টিগুণ
পেয়ারার উপকারিতা
** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে আমরা অসুখ বিসুখ ও ইনফেকশনে কতোটা আক্রান্ত হব।
** ডায়রিয়া ভালো করেঃ পেয়ারার পাতা অনেক কাল থেকেই ভেষজ ঔষধ হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহার হয়ে আসছে। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় এড় ৬ টি পাতা নিয়ে তা পানিতে সিদ্ধ করে, পাতার নির্যাস পান করুন দিনে দুইবার যতদিন না আপনি সুস্থ হন।
** ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ ফলে অনেক সুগার থাকে যার ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় কিন্তু নিয়মিত পেয়ারা খেলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে ডায়াবেটিসের উপরে করা একটি রিসার্চে জানা গেছে।
আরও পড়ুনঃ জানলে অবাক হবেন লবঙ্গ সম্পর্কে
** ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ পেয়ারা ভিটামিন সিযুক্ত একটি ফল এবং এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার । আমরা নাস্তা ও হালকা খাবার হিসেবে তৈলাক্ত অন্যকোন খাবার না খেয়ে পেয়ারা নিয়মিত খেতে পারি। এতে আমাদের পেট ভরবে কিন্তু মেদ বৃদ্ধি করবে না।
** ব্রেস্ট ক্যান্সার কম হয়ঃ এটি যেমন আমাদের সিস্টেমকে পরিস্কার রাখে তেমনি শরীর থেকে ক্ষতিকর অনেক পদার্থ দূর করে আমাদের অনেক সুস্থ রাখে।
** রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ নিয়মিত পেয়ারা খেলে ডায়েটারি ফাইবার আমাদের ব্লাড ভেসেল এবং আর্টারিকে পরিস্কার রাখে। এছাড়া পেয়ারা খেলে আমাদের শরীরের সব অঙ্গে স্বাস্থ্যকর রক্ত প্রবাহে সাহায্য করে।
** হজমে সাহায্য করেঃ আমাদের যাদের হজমে সমস্যা হয় তারা যদি পরিমাণ মত ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে এমন খাই তাহলে আমাদের হজমে সাহায্য করবে।
** বয়সের ছাপ কমায়ঃ আমরা যতই সুন্দর হই না কেন বয়সের সাথে সাথে আমাদের সবার চামড়াতেই বয়সের একটা ছাপ পড়ে। প্রকৃতির এই নিয়মকে কখনই ঠেকানো সম্ভব নয় কিন্তু আমরা বয়সের এই ছাপ পড়াকে একটু আটকাতে পারি যদি এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেয়ে যা কিনা আমাদের ত্বকের পুনর্গঠনে ভুমিকা রাখবে। এছাড়া পেয়ারা প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমায়।
পেয়ারার অপকারিতা
অন্যসব ফলের মতো পেয়ারাও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আবার অতিরিক্ত খাওয়া অনেক রোগের কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেয়ারা ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যে কারণে হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই, যদি আপনি খুব বেশি পেয়ারা খান তবে তরল খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
পেয়ারার ঔষধি পুষ্টিগুণ
** অ্যাজমা, স্কার্ভি, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ইত্যাদি অসুখের ক্ষেত্রেও পেয়ারা বেশ উপকারী ৷
** পেয়ারাতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি এবং এরসাথে আয়রন যে কারণে এটি কফ দূরীকরণে প্রচুর ভূমিকা পালন করে। আর যদি গলায় যদি কারো কফ জমে যায় তবে পেয়ারা খুব ভাল ওষুধ।
** পেয়ারা হলো ফাইবার জাতীয় ফল যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। আবার কারো ঠিকমত যদি পায়খানা না হয়, তবে পেয়ারা খেয়ে করতে পারেন এই সমস্যার সমাধান।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের ফলের রাজা আম কেন
** এই ফলে ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থা্কে তাই এটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে আর তাই ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকি কিছুটা কম থাকে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেয়ারা বেশ কাজ দেয়।
** পেয়ারায় আছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স ।
** পেয়ারায় গ্লুকোজ থাকে অনেক কম, এই কারণে ওজন কমানোতে পেয়ারা বেশ ভাল একটি প্রতিষেধক।
পেয়ারার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
** গর্ভবতী মহিলাদের বেশি খাওয়া: গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের এটি খুব বেশি খাওয়া কোনভাবেই উচিত নয়। এটি অতিরিক্ত গ্রহণে ফাইবার বাড়ে, যা হজমের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
** স্বাস্থ্য সমস্যা: আমরা যদি অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগি তাহলে পেয়ারা এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ পেয়ারায় পটাসিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে। আমাদের ডায়েটে এটি অন্তর্ভুক্ত করার আগে জেনে নেওয়া উচিৎ।
** সুগার বেড়ে যায়: বেশি করে পেয়ারা খেলে আমাদের রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যেহেতু এতে কোনো প্রোটিন বা চর্বি নেই, তাই পেট ভরে পেয়ারা খেলেও কিছুক্ষণ পর আমাদের আবার খিদে পাবে। কারণ আমাদের শরীরে প্রোটিনের অভাব হয়।
** সর্দি-কাশির আশঙ্কা থাকে: আমরা যারা ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে ভোগী তাদের পেয়ারা এড়িয়ে চলাই ভালো হবে। কারণ পেয়ারা খুব ঠান্ডা ফল। অতিরিক্ত সেবনে আমাদের সর্দি-কাশি হতে পারে।
** ব্যাকটেরিয়া: অন্যান্য ফলের মতো পেয়ারাও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটায়। পেয়ারার ত্বক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল, বিশেষ করে যদি এটি ফাটা বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আমরা যদি উপরের ত্বকে পেয়ারা খাই তাহলে ব্যাকটেরিয়ার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ যে কারণে মিষ্টি আলু বেশী করে খাবেন
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url