বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর
বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় অবস্থিত পতিসর কাচারি বাড়ি। এটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর। এই পতিসর কাচারি বাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। এর পাশেই রয়েছে রয়েছে দেবেন্দ্র মঞ্চ ও রবীন্দ্র সরোবর। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সালে প্রথম পতিসরে আসেন।
তখন তিনি কালিগ্রাম স্টেটের জমিদারির দায়িত্ব পালন করেন। তখন পতিসর কালিগ্রাম স্টেটের কাচারি বাড়ি ছিল। পতিসর রবীন্দ্র কাচারী বাড়িটি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। এটি উপজেলার পতিসর নামক গ্রামে নাগর নদীর তীরে অবস্থিত।
সূচীপত্র-বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর
- ভূমিকা
- পতিসরের বর্ণনা
- পতিসরের অবকাঠামো
- বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর
- জমিদারী
- কীভাবে যাবেন
- কোথায় থাকবেন ও খাবেন
- শেষকথা
ভূমিকা
বিশ্বকবি পতিসরে অবস্থান কালীন সময় ১৮৯১ সাল হতে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস ও চিঠিপত্র লিখেছেন। নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৬ (ছত্রিশ) কিলোমিটার দক্ষিণে নাগর নদীর তীরে পতিসর কাছারি বাড়ি অবস্থিত।
পতিসরের বর্ণনা
নির্মাণ কৌশল শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের কুঠিবাড়ির অনুরূপ পতিসরের দোতলা কুঠিবাড়িটি। বর্তমানে যদিও এর মূল ভবনসংলগ্ন ঘরতমান প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ পতিসরের কুঠিবাড়ি ও পদ্মাবোটে অবস্থানকালে তাঁর বিখ্যাত কবিতা "আমাদের ছোট নদি চলে বাঁকে বাঁকে" সহ অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছিন্নপত্রের অনেক চিঠি এবং বিদায় অভিশাপ কাব্যনাট্য রচনা করেন।
এছাড়াও কবি পল্লীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য স্থাপন করেন বহু পাঠশালা, রথীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, পতিসর কৃষিব্যাংক রয়েছে। এগুলো বেশিরভগই ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। রবীন্দ্রনাথ তার নোবেল পুরস্কারের এক লক্ষ টাকাও তিনি পতিসর কৃষিব্যাংকে দিয়েছিলেন, যা আর ফেরত পান নি। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি পতিসরের মাঠে কলের লাঙ্গল চালিয়েছিলেন; গড়ে তুলেছিলেন কৃষি, তাঁত ও মৃৎশিল্পের সমবায় সংগঠন।
পতিসরের অবকাঠামো
পতিসরে একটি দো-তলা কুঠিবাড়ি রয়েছে। এছাড়াও কুঠিবাড়িকে ঘিরে বেশ কিছু ভবন রয়েছে, বর্তমানে যেগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। কাচারী বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। পূর্বে পুকুরটি বেশ বড় থাকলেও কালক্রমে এটি মাটি ভরাট হয়ে গিয়েছে। পতিসরের স্থাপনাগুলো দেখতে একই পরিবার কর্তৃক স্থাপিত স্থাপনাসমূহের অনেকটাই শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের মতোই।
মূল ভবনের সামনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও নান্দনিক একটি প্রবেশপথ রয়েছে ভবনে প্রবেশের জন্য।
বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর
এই পতিসরে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাচারি ছিল। বিশ্বকবি রবীন্দনাথ থাকুরের পিতামহ ১৮৩০ সালে এই জমিদারি ক্রয় করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নিজে জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম পতিসরে আসেন। এবং ১৯২১ সালে তাদের জমিদারি ভাগ হলে পতিসর রবীন্দ্রনাথের ভাগেই পড়ে, কিন্তু সাংসারিক নানা কারণে একদা পতিসরের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত সম্পর্কে ছেদ পড়ে।
কবি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলে পতিসরের প্রজারা তাঁকে মানপত্র দিয়ে অভিনন্দন জানায় (১৯১৩)। প্রজাদের অনুরোধে পুণ্যাহ উপলক্ষে তিনি ১৯৩৭ সালে শেষবারের মতো পতিসর পরিদর্শন করেন। পতিসর এখন একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন, প্রতিবছর দেশ -বিদেশের বহু রবীন্দ্রভক্ত রবীন্দ্রস্পর্শধন্য এই পতিসর পরিদর্শনে আসেন।
রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এখানে প্রতিবছর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রবার্ষিকী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবেও পতিসরে রবীন্দ্রজন্মোৎসব পালিত হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, এমনকি বিদেশ থেকেও রবীন্দ্রভক্ত এবং রবীন্দ্রগবেষকগণ এসব অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
জমিদারী
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারি ১৮৩০ সালে কেনার পর ১৮৯১ সালের ১৩ জুন রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার জন্য এ অঞ্চলে আসেন। এই কাচারীতে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কিছু কাব্য, গল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেন। এই স্থানটির চারপাশেই রবি ঠাকুরের পরিবার কর্তৃক স্থাপিত বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, একটি বিদ্যালয় (কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউশন), দাতব্য হাসপাতাল ও পুরাতন একটি কৃষি ব্যাংক যা ১৯০৫ সালে স্থাপিত হয়েছিল। এছাড়াও গড়ে তুলেছিলেন মৃৎশিল্প।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল প্রাপ্তির পর সর্বশেষ ২৭ জুলাই ১৯৩৭ সালে পতিসরে আসেন। বর্তমানে এখানে, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কীভাবে যাবেন
আপনার ঢাকা থেকে আত্রাই যাওয়ার জন্য ট্রেনই সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যাম। আপনি লালমনি, দ্রুতযানসহ রংপুর- দিনাজপুরগামী যেকোনো আন্তঃনগর ট্রেনে আত্রাই স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সরাসরি সিএনজি, অটোরিকশা বা ভ্যানে সহজেই যেতে পারবেন পতিসরে। এছাড়া ঢাকা থেকে নওগাঁয় সরাসরি বাসে গিয়ে সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ করেও যাওয়া যায়পতিসরে।কোথায় থাকবেন ও খাবেন
পতিসর পতিসর রবীন্দ্র কাচারী বাড়িটি একেবারে গ্রামে হওয়ার কারণে আপনি এখানে খাবারের হোটেল বা আবাসিক কোন হোটেল পাবেন না। এজন্য আপনাকে জেলা শহর নওগাঁতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে নিতে হবে। তবে আপনি পতিসরে হালকা নাস্তা ও আত্রাইয়ে ভাতের ব্যবস্থা আছে।
শেষকথা
ব্যাস আশা করছি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর কাচারি বাড়ি সম্পর্কে অনেক ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। যা কিনা আপনার ভ্রমণে সাহায্য করবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর কাচারি বাড়ি দেখতে বছরের যে কোন সময় দর্শনার্থীরা অল্প ভিড় করলেও দুই ঈদে দর্শনার্থীদের উপচে পরা ভিড় লক্ষণীয়।
পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর কাচারি বাড়ি এর প্রতি প্রয়োজনীয় নজরদারির দিলে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসাবে এটি গড়ে উঠবে। এখানে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর অনেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর কাচারি বাড়ি পিকনিক ও ভ্রমনে আসেন। তাই সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ঠিক আছে, দেখাযা্ক আগামী আর্টিকেলে কি থাকছে?
তবে বাইক নিয়ে ভ্রমণে বের হলে সব সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। ভালো মানের হেলমেট এবং সেফটি গার্ড ব্যবহার করুন। সব সময় নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url