সাজেক ভ্যালি চলুন আনন্দ ভ্রমনে

আমাদের কর্ম জীবনের যান্ত্রিক ও একঘেয়েমি যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে  আমাদের মাঝেমধ্যেই মনে হয়, যদি  পারতাম চেনা গণ্ডি  ছেড়ে দূরে  অন্য কোথাও  চলে যেতে! অনেকেরই  ইচ্ছে  হয়, অন্তত কয়েক দিনের জন্য হলেও সব ব্যস্ততা ভুলে সুন্দর একটি দিন কাটাতে। আর আজ আমরা আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব এক অতুলনীয় স্থানের সঙ্গে। যার নাম  সাজেক ভ্যালি।

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের বিখ্যাত একটি পর্যটনস্থল সাজেক ভ্যালি। এটি রাঙ্গামাটি জেলার সর্ব উত্তরে মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙ্গামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা অবস্থিত।

আজকের পাঠ্যসূচী-সাজেক ভ্যালি চলুন আনন্দ ভ্রমনে 

  • ভূমিকা
  • সাজেক ভ্যালি চলুন আনন্দ ভ্রমনে  
  • সাজেকের অবস্থান
  • সাজেকের প্রাকৃতিক রূপ
  • সাজেকের নৃ-গোষ্ঠী
  • সাজেকের পরিবেশ 
  • সাজেকের বসতি 
  • সাজেকের জনসংখ্যা 
  • সাজেক যাওয়ার উপায়
  • সাজেকে কোথায় থাকবেন ও খাবেন 
  • শেষকথা

ভূমিকা

বেশিরভাগ ভ্রমণ পাগলরাই সাজিক ভ্যলিতে ভ্রমণ করতে পছন্দ করে, কারণ এর অনন্য পর্যটন স্পট,  সবুজ  পরিবেশ  এবং  কৃষি  ঐতিহ্য আপনার মনকে আরও বেশি রিফ্রেশ করে তুলে। আপনি যদি আপনার  ভ্রমণ  তালিকায়  নতুন  অভিজ্ঞতা  যুক্ত  করতে  চান তাহলে তাহলে কোন কিছু না ভেবে বেচে নিন সাজেক ভ্যালি। কারন সাজেক ভ্যালি আপনাকে প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা দিতে সাহায্য করবে। তাহলে দেরিকেন দেখে নেওয়া যাক এসব-  

সাজেক ভ্যালি চলুন আনন্দ ভ্রমনে

সাজেক ভ্যালি মুলত পার্বত্য অঞ্চলের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের রুইলুইপাড়া, হামারিপাড়া এবং কংলাক পাড়া এই তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। এটি ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত আর কংলাক পাড়া ১,৮০০ ফুট উচ্চতায় কংলাক পাহাড়-এ অবস্থিত। 

সাজেকে মূলত বসবাস করে লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা উপজাতি। রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখা যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। এই জন্য সাজেক ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদও বলা হয়। মেঘে ঢাকা সাজেকের প্রকৃতি, সাজেক উপত্যকা কর্ণফুলী নদী থেকে উদ্ভূত সাজেক নদী থেকে সাজেক ভ্যালির নাম এসেছে।

সাজেকের অবস্থান

অপরূপে সজ্জিত মেঘে আচ্ছন্ন পর্বতশ্রেণী সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার এবং দীঘিনালা থেকে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার। সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এখানে জেলা শহর খাগড়াছড়ি  থেকে যাতায়াত সুবিধাজনক। 

সাজেক ভ্যালির পূর্বে ভারতের মিজোরাম, উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এবং দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু। সাজেক ইউনিয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে আয়তন সাতশত দুই বর্গমাইল। এখানে রয়েছে সাজেক বিজিবি ক্যাম্প।

সাজেকের প্রাকৃতিক রূপ


সাজেকে ভ্যালির সর্বত্র শুধু মেঘ, পাহাড় আর সবুজ। এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। সাজেকের রুই-লুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়-এ যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। এখানে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে উপজাতিয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয় 
এবং তাদের সংস্কৃতির নানা উপকরণ উপভোগ করা যায়।

সাজেকের নৃ-গোষ্ঠী

সাজেক ইউনিয়নে মূলত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে বিশেষ করে চাকমা, লুসাই, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা বহু আদিকাল থেকে এখানে বসবাস করে আসছে । তাঁদের বাড়িঘর বাঁশের মাচাংয়ের উপর তৈরি করা ।

সাজেকের পরিবেশ

রাঙামাটির ছাদ হিসাবে পরিচিত সাজেক ভ্যালি তার প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য সুপরিচিত এবং চারপাশে সবুজ পাহাড়, ঘন বন এবং পাহাড়ি ভূখণ্ডে ঘেরা। আর পাহাড়ের মধ্য দিয়ে অনেক ছোট নদী প্রবাহিত হয়, যার মধ্যে সাজেক, কাসালং এবং মাসালং উল্লেখযোগ্য নদি। সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার পথে ময়নী রেঞ্জ ও ময়নী নদী পার হতে হয়। সাজেকের রাস্তাটি খাড়া বাঁক এবং অবতরণ বৈশিষ্ট্যযুক্ত।

সাজেকের বসতি

সাজেক উপত্যকার শুরুতেই আপনি দেখতে পাবেন রুইলুই পাড়া গ্রাম অবস্থিত, যখন এর সবচেয়ে দূরে অবস্থিত কংলাক পাহাড়, যার চূড়ায় কংলাক পাড়া গ্রাম অবস্থিত। হামারি পাড়াসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত বসতি রয়েছে, যেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বসবাস।

সাজেকের জনসংখ্যা 

পর্বতশ্রেণী সাজেক উপত্যকার অধিবাসীরা চাকমা, মারমা, ত্রিপুরী, পাংখো, লুসাই এবং অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। এই সম্প্রদায়ে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে, বিশেষ করে ফল ও সবজি বাছাইয়ের মতো ক্রিয়াকলাপে মহিলাদের একটি উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা রয়েছে। যদিও বাংলা ভাষায় দক্ষতা তাদের মধ্যে ব্যাপক নাও হতে পারে, তরুণ প্রজন্ম প্রায়শই ইংরেজিতে কিছুটা দক্ষতার অধিকারী হয়। 

সাজেক যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে আপনাকে প্রথমে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। আর  ঢাকা থেকে বেশকিছু নামি দামি পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে পরিবহনের ধরণ অনুযায়ী ৫২০ থেকে ১৫০০ টাকা। এ ছাড়া সরাসরি দীঘিনালা যেতে চাইলে শান্তি পরিবহনের বাস যায়। এছাড়াও বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায়।

 খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা হয়ে উপত্যকাটি আরও সুবিধাজনকভাবে প্রবেশ করা যায় । খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক  পর্যন্ত  আনুমানিক ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব কভার করে, এখানে পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসাবে  আপনি পাবেন চার  চাকার গাড়ি যা  চান্দের গাড়ি  নামে  পরিচিত এক প্রকার  গাড়ি, যা দর্শকরা সাধারণত দলগত ভ্রমণের জন্য ভাড়া করে। 

কোথায় থাকবেন ও খাবেন

থাকা- খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেল সহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে । দীঘিনালায় কয়েকটি হোটেল থাকলেও দীঘিনালা গেস্ট হাউজের মান কিছুটা ভালো । আপনার সাধ্যমত  থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন।

খাওয়া- আপনি এখানে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া গড়াছড়ি শহরের কাছেই পানখাই পাড়ায় ঐতিহ্যবাহী সিস্টেম রেস্তোরার অবস্থান।  সাজেকে খেতে হলে রুন্ময় রিসোর্টে খাওয়া যায়। আর তা ছাড়া সাজেক রিসোর্টে থাকলে ওখানেও খাওয়া যায়। এ ছাড়া রুইলুই ও কংলক পাড়াতে আদিবাসিদের সাথে খাওয়া যায়। এ জন্যে অবশ্য আপনাকে আগে থেকে বলে দিতে হবে কজন খাবেন, কি খেতে চান এসব।

শেষকথা

আপনি যদি গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই রাঙামাটির ছাদ সাজেক ভ্যালি সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনেছেন। এই আর্টিকেলটিতে লিখিত তথ্যসমূহ যদি আপনি মনোযোগের সাথে পড়েন এবং মনে রাখেন, তাহলে তা আপনার অনেক উপকারে আসবে।
বিশেষ করে  সাজেক ভ্যালি সম্পর্কে যেকোনো ধরনের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন। যাইহোক গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে যদি উপকারী মনে হয় তাহলে অবশ্যই সকলের সাথে শেয়ার করবেন। 

ঠিক আছে, দেখাযা্ক আগামী আর্টিকেলে কি থাকছে? 

তবে বাইক নিয়ে ভ্রমণে বের হলে সব সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। ভালো মানের হেলমেট এবং সেফটি গার্ড ব্যবহার করুন। সব সময় নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭