যে কারণে শসা বেশী করে খাবেন
সারা বিশ্বে আবাদ হওয়ার কৃষি ফসলের দিক থেকে বাংলাদেশে ৪ (চার) নম্বরে রয়েছে যে সবজিটি, সেটি হলো শসা। শসার রয়েছে হরেক গুণ। রূপচর্চার পাশাপাশি আমাদের দেহের মেদ নিয়ন্ত্রণসহ এর আরো রয়েছে নানা উপযোগিতা এই সহজলভ্য সবজির।
শসায় যে পরিমাণ পানি থাকে, তা মানব দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে কিছুটা অদৃশ্য ঝাড়ুর মতোই কাজ করে থাকে। নিয়মিত শসা খাওয়ায় কিডনিতে সৃষ্ট পাথরও গলে যায়। প্রতিদিন আমাদের দেহে যে সকল ভিটামিনের দরকার হয়, তার বেশিরভাগই শসার মধ্যে রয়েছে। ভিটামিন এ, বি ও সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়।
তাহলে জেনে নেয়াজাক শসার ব্যাপারে কিছু কথা-
সূচীপত্র- যে কারণে শসা বেশী করে খাবেন
- শসার চাষ পদ্ধতি
- শসার বীজের পরিমাণ ও সেচ
- আগাছা দূরী করণ পদ্ধতিচ
- শসা গাছের পোকামাকড়
- শসা গাছের রোগবালাই
- সতর্কতা
- শসার পুষ্টিগুন
- যে কারণে শসা বেশী করে খাবেন
- শেষকথা
শসার চাষপদ্ধতি
মাটির প্রকার ভেদে পাচ/ ছয়টি চাষ ও মই দিতে হবে এবং প্রথম চাষ গভীর হতে হবে। তবে বেড বা নালা পদ্ধতিতে চাষ করলে ভালো। এতেকরে সেচ ও পানি নিষ্কাশন সুবিধাজনক। তাছাড়া পরিচর্যা সহজ ও সেচের পানির অপচয় কম হয় । সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। সরাসরি বীজ বুনলে লাইন থেকে লাইন ৫ ফিট এবং চারা থেকে চারা ৫ফিট দূরে লাগাতে হবে। জাতভেদে ফেব্রুয়ারী-মার্চ (মধ্য মাঘ-মধ্য ফাল্গুন) উপযুক্ত সময় ।
শসার বীজের পরিমান ও সেচ
শসা জাত ভেদে শতক প্রতি দেড় হতে চার গ্রাম বিচ লাগবে। মাটিতে রস কম থাকলে বপনের এক সপ্তাহের মধ্যেই একটি সেচ দিন। সাধারণত মাটি ভেদে সপ্তাহ একবার সেচ দিন। জমিতে রসের অভাব দেখা দিলে সেচ দিতে হবে। কোন সময় মাটিতে রসের মাত্রা ৫০% এর নিচে নেমে যাবার আগে সেচ দিন।
আগাছা দূরী করণ পদ্ধতি
আগাছা দমনের জন্য বীজ বপনের আগেই সুন্দরভাবে জমি চাষ ও মই দিয়ে আগাছামুক্ত করে, বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার করা এবং ভালোমানের কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। সেচ ও সার দেবার পর জমিতে আগাছা আসা মাত্র দমন করুন। চারা গজানোর পর সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। গাছ খুব ঘন হলে পাতলা করেদিতে হবে জেন বাতাস চলাচল করতে পারে। প্রতি বর্গমিটারে রবি মৌসুমে ৫০টি হতে ৬০ টি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০টি হতে ৫০টি চারা থাকলে ভালো।
শসা গাছের পোকামাকড়
শসার পাতা যে সকল পোকা সুড়ুঙ্গ করে যেমন- ফলের মাছি পোকা, রেড পামকিন বিটল ও টোবাকো ক্যাটারপিলার দমনের জন্য সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক প্রতি ৫ শতকে প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে সপ্তাহে একবার। ঔষধ স্প্রে করার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শসা গাছের রোগবালাই
শসার পাউডারি মিলডিউ জাতীয় রোগ দমনের জন্য সালফার জাতীয় একপ্রকার ছত্রাক নাশক অথবা কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি দশ লিটার পানিতে মিশিয়ে দশ দিন পরপর আক্রমণের শুরু থেকে মোট দুই/তিন বার প্রয়োগ করতে হবে। শশার টার্গেট পাতার এবং গামি স্টেম ব্লাইট এর মতো রোগ দমনের জন্য রিডোমিল গোল্ড ২০ গ্রাম প্রতি ১০লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে সাতদিন পরপর তিনবার স্প্রে করুন। সকল ধরণের কীটনাশক ঔষধ স্প্রে করার সময় সতর্কতা অবলম্বন জ্রুরী।
শসার মোজাইক রোগদমনের জন্য জমিতে সাদা মাছি, জাব পোকা দেখা গেলে বা বাহক পোকা দেখা গেলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক দশ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি পাঁচ শতকে স্প্রে করতে হবে। সকাল আবার যদি বেলা গাছে ছাই ছিটিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এই পোকা গাছ হতে পড়ে যাবে৷
সতর্কতা
বালাইনাশক বা কীটনাশক ব্যবহারের আগে অবশ্যই বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেলে লিখা ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলতে হবে। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক ব্যবহার করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান বা পানাহার করা হতে বিরত থাকুন। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে জেতে না পারে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে পনেরো দিন পর বাজারজাত করুন।
শসার পুষ্টিগুন
প্রতি ১০০ গ্রাম শসাতে ৯৪.৯ গ্রাম জলীয় অংশ এবং ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়ায় নানাবিধ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান যেমন-
- ক্যালসিয়াম- ১৪ মিলিগ্রাম।
- আমিষ- ১.৬ গ্রাম।
- আয়রন- ১.৫ মিলিগ্রাম।
- চর্বি-০.১ গ্রাম।
- খনিজ পদার্থ- ০.৪ গ্রাম।
- আঁশ- ০.৪ গ্রাম।
- খাদ্যশক্তি- ২২ কিলোক্যালরি।
- ভিটামিন বি--১০.১৬ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন বি-২- ০.০২ মিলিগ্রাম।
- শর্করা - ৩.৫ গ্রাম।
যে কারণে শসা বেশী করে খাবেন
- বিষাক্ততা দূর করেঃ
শসায় যে পরিমাণ পানি থাকে, তা মানব দেহের ক্ষতিকর বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপখতিকর বেশকিছুটা অদৃশ্য ঝাটার মতো এটি কাজ করে। নিয়মিত শসা কেলে কিডনিতে সৃষ্ট পাথরও গলে যায়।
- প্রাত্যহিক ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করেঃ
প্রতিদিন মানব দেহে যেসব ভিটামিনের প্রয়োজন হয়, তার বেশির ভাগই শসার মধ্যে রয়েছে। ভিটামিন এ, বি ও সি মানুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়। সবুজ শাক ও গাজরের সঙ্গে শসা পিষে রস করে খেলে এই তিন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।
- ত্বকবান্ধব খনিজের সরবরাহকারীঃ
শসায় উচ্চমাত্রার যে পরিমান ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও সিলিকন রয়েছে, তা মানুসের ত্বকের পরিচর্যার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য ত্বকের পরিচর্যায় গোসলের সময় শসা ব্যবহার করা ভালো।
হজম ও ওজন কমাতে সহায়কঃ
শসায় রয়েছে উচ্চমাত্রার পানি ও নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত উপাদান। ফলে যাঁরা নিজের দেহের ওজন কমাতে চায়, তাঁদের জন্য শসা অতি আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা সবসময় স্যুপ ও সালাদে বেশি করে শসা ব্যবহার করবেন। কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলেও তা হজমে জন্য বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।
চোখের জ্যোতি বাড়ায়ঃ
অনেকে সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে শসা গোল গোল করে কেটে চোখের পাতার সঙ্গে বসিয়ে রাখেন।এতেকরে চোখের পাতায় জমে থাকা সকল ময়লা যেমন অপসারিত হয়, তেমনি আবার চোখের জ্যোতি বাড়াতেও অনেক কাজ করে। চোখের প্রদাহ প্রতিরোধক উপাদান শসায় প্রচুর পরিমাণে থাকার কারণে ছানি পড়া ঠেকাতেও এটি উপকারি।
চুল ও নখ সতেজ করেঃ
শসার মধ্যে যে পারিমাণে খনিজ সিলিকা থাকে তা মানুষের চুল ও নখকে সতেজ এবং শক্তিশালী করে তোলে । এ ছাড়াও শসায় থাকা সালফার ও সিলিকা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
গেঁটেবাত থেকে মুক্তিঃ
শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা রয়েছে। গাজরের রসের সঙ্গে যদি শসার রস মিশিয়ে খেলে দেহের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অনেক নেমে আসে। এতে করে গেঁটে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে।
মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতিঃ
অনেকের ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ধরে এবং শরীর ম্যাজম্যাজ করে। শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগার। যদি ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে কয়েকটা শসা খেয়ে নিলে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর এই আর সমস্যা থাকবে না।
আর পড়ুনঃ লেবু ব্যবহার করে ব্রণ দূর করার পদ্ধতি
শেষকথা
আশাকরি আমরা আপনাদের শসা সম্পরে অনেক তথ্য আপনাদের শেয়ার করতে পেরেছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে অবশ্যই সেই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন। আর এই ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত করতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url